রাণা দাস,  পূর্ব বর্ধমান: কেতুগ্রামের পর এবার কাটোয়া। শিউরে ওঠা ঘটনাই মনে করাল সুদ কারবারিরা। সুদের টাকা দিতে না পারার অভিযোগে রেল লাইনে বেঁধে পা কেটে নেওয়ার হুমকি। এবার সুদ কারবারিদের হুমকির ভয়ে এক স্কুলমাস্টার (School Master) আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। ছোট ছেলে বাবার সুইসাইড নোট দেখে ফেলায়, প্রাণে বেঁচে যান স্কুল মাস্টার। সুদকারবারীদের হুমকি থানা থেকে, পার্টি অফিস সব জায়গাতেই তাঁদের টাকা দেওয়া আছে। মাসে ৬০ শতাংশ সুদ টাকা ধার দিত এই চক্র। টাকা ধার নিয়ে সুদকারবারীদের জালে জড়িয়ে পড়ে এই শিক্ষক। জোর করে বাড়ি লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগ। শিক্ষকের স্ত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ সুদ-কারবারিদের বিরুদ্ধে। এরপরই স্বামীকে বাঁচাতে কাটোয়া থানার দারস্থ হন স্ত্রী। ইতিমধ্য়েই চারজনকে গ্রেফতার করেছে কাটোয়া থানার পুলিশ (Katwa Police)।

  


সুইসাইড নোট


মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ। রাতেই তড়িঘড়ি প্রেস কনফারেন্স করে কাটোয়া থানার এসডিপিও জানান, যে এটি একটি বড় চক্র। এই চক্রের সঙ্গে পা কেটে নেওয়ার ঘটনা যুক্ত আছে নাকি সেটাও পুলিশ তদন্ত করে দেখবে। স্ত্রীর উদ্দেশ্যে সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা করতে বেরিয়েছিলেন ওই স্কুলশিক্ষক। সুইসাইড নোটে তিনি লেখেন, 'আমার মৃত্যুর পরে যে টাকা পাবে, সেখান থেকে টাকা মিটিয়ে দিও। ছেলের খেয়াল রেখো আমায় ক্ষমা কর। পুলিশের কাছে অনুরোধ এই সুদ কারবারীদের ব্যবসা বন্ধ করুন।' ছোট ছেলে সেই চিঠি দেখতে পেয়ে মাকে জানায়। মা সুসাইড নোট নিয়ে হাজির হন পুলিশের কাছে। এরপরই পুলিশ তার স্বামীকে উদ্ধার করে। আর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বেরিয়ে আসে সুদ কারবারীদের চক্রের কথা।


'পরিবারকে প্রাণে মেরে ফেলা'-র হুমকি


বাবার  চিকিৎসার জন্য পরিচিত বুড়ো প্রামাণিক নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা ধার করেছিলেন শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হরিসভা পাড়ার বাসিন্দা পেশায় স্কুল শিক্ষক অনিমেষ সরকার। ২০১৯ সালের ঋণ নেওয়া পাঁচ লাখ শোধ করতে গিয়ে চড়া সুদের চক্রে পড়ে। ৩০ লক্ষ টাকা শোধ করার পরেও এখন সুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০ লক্ষ টাকা। চড়া সুদের কারবারিদের চক্রে ফেঁসে অনিমেষবাবুর আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনও পথ নেই বলে  পুলিশকে লিখিত ভাবে জানায়। চড়া সুদের কারবারিরা লাগাতার হুমকি দিতে থাকে টাকা শোধ না করলে তার পরিবারকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে।


বিশাল চক্রের সন্ধানের তদন্তে নেমেছে কাটোয়া থানার পুলিশ


এমনকি অনিমেষবাবুর স্ত্রী ও বাচ্চাকে প্রাণে মারার  হুমকি দেওয়া হয়। হুমকির মুখে গোটা পরিবার দিশেহারা অবস্থায় পড়ে কাটোয়া থানার দ্বারস্থ হয়। পুলিশি তদন্তে জানা যায়, এই চক্রে যে একবার টাকা ধার করবে, তার অবস্থা শোচনীয় হবে। যত দিন যায় আসল টাকার সঙ্গে চক্রবৃদ্ধিহারে, সুদের পরিমাণ বাড়তে থাকে। দু-তিন বছরের মধ্যে আসল-সুদ মিলিয়ে বিশাল পরিমাণ টাকা তাকে  পরিশোধ করতে হয়। টাকা  পরিশোধ করতে না পারলেই ভিটে-মাটি লিখে নেওয়া হয়। এই বিশাল চক্রের সন্ধানের তদন্তে নেমেছে কাটোয়া থানার পুলিশ। 


আরও পড়ুন, আজ পেট্রোল-ডিজেলের কী দাম কলকাতায় ? অপরিশোধিত তেলের দামের প্রভাব পড়ল কি ?


প্রসঙ্গত, পুজোর মাসে একটি ভয়াবহ ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। সুদের টাকা শোধ না দেওয়ায় সরকারি কর্মীর ওপর নৃশংস অত্যাচারের অভিযোগ এক সহকর্মী সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে।  এই ঘটনা ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামে। ওই ব্যক্তির পরিবারের অভিযোগ, ২ যুবক তাঁকে মোটরবাইকে তুলে জোর করে নিয়ে যায়। এরপর তাঁকে বেহুঁশ করে রেল লাইনে বেঁধে রাখে। এরপর ওই লাইন দিয়ে ট্রেন গেলে তাঁর একটি পায়ের পাতা কাটা পড়ে। অভিযোগ, হুমকি দেওয়া হয়, এরপর টাকা না দিলে মাথা কেটে নেওয়া হবে। স্থানীয় সূত্রে খবর, কাটোয়া মহকুমা জুড়েই সুদের কারবারিদের দাপট ও রমরমা চলছে।