কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান: একেবারে কিম্ভূত কিমাকার। নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর অনুযায়ী এটিএম কার্ড এসেছে ঠিকানায়। তবে সমস্যাটা এখানেই। যাঁদের নামে এটিএম কার্ডে এসেছে, তাঁরা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা তো দূর অস্ত, চোখেও দেখেননি সেই ব্যাঙ্কের শাখা। গ্রাম থেকে ৩০ কিমি দূরে বর্ধমান শহরের বেসরকারি এক ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। খণ্ডঘোষে অবাক কাণ্ড! গ্রাহকের অজান্তেই খোলা হয়েছে অসংখ্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। বাড়ি বাড়ি এসেছে এটিএম কার্ড। ভূতুড়ে অ্যাকাউন্ট আর কার্ড নিয়ে আতান্তরে সাধারণ মানুষ। ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। চেষ্টা করা হলেও ব্যাঙ্কের প্রতিক্রিয়া মেলেনি।


ঘরে ঘরে ব্যাঙ্কের পাসবুক আর হাতে হাতে এটিএম কার্ড! ডিজিটাল ভারতের স্বপ্ন দেখা দেশে খণ্ডঘোষের কালনা কি তাহলে রাতারাতি ডিজিটাল হয়ে গেল? কিন্তু খুশির বদলে সবার মুখেই কেমন যেন আশঙ্কার মেঘ! কারণ, মেঘ না চাইতেই হুড়মুড়িয়ে জল এসে যাওয়ায় হাবুডুবু খাচ্ছেন নুন আনতে পান্তা ফুরনো সাধারণ মানুষ! ভূতুড়ে অ্যাকাউন্ট আর কার্ড নিয়ে আতান্তরে সবাই।

গ্রাম থেকে ব্যাঙ্কের শাখা ৩০ কিমি দূরে। তার চৌকাঠ মাড়ানো দূর অস্ত, কোনওদিন চোখেই দেখেননি। জানেন না, এটিএম কী কাজে লাগে। এই রকম পরিস্থিতিতে, সেই ব্যাঙ্ক থেকে এটিএম কার্ড বাড়িতে এলে মাথায় আকাশ ভেঙে তো পড়বেই।

প্রায় দেড়শো এটিএম কার্ড এসেছে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের কার্জন গেটের পাশে সিটি টাওয়ারে অবস্থিত শাখা থেকে।
পাসবুকে রয়েছে, সবার ছবিও। গ্রামবাসীদের দাবি, সেই ছবিতে কেউ মাঠে কাজ করছেন, কেউ বাড়িতে রান্না করছেন, আবার কেউ গোয়ালে কাজ করছেন।বাসিন্দাদের প্রশ্ন, এরকম ছবি দিয়ে তাঁদের অজান্তে ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট খোলা হল কী করে? ব্যাঙ্কে গিয়েও তার উত্তর মেলেনি। হন্যে হয়ে ব্লক প্রশাসন থেকে জেলা প্রশাসনের দরজায় ঘুরলেও সুরাহা হয়নি।

বাসিন্দাদের দাবি, তাঁদের অজান্তে শুধু অ্যাকাউন্ট খোলাই হয়নি, তাঁরা জানতে পেরেছেন, গত কয়েক বছরে এক একজনের অ্যাকাউন্টে মোটা টাকার লেনদেন হয়েছে। তাহলে কি কালো টাকা সাদা করার ছক কষেই খোলা হয়েছে এই সব অ্যাকাউন্ট? তাহলে কি গোপনে তোলা হয়েছে গ্রামবাসীদের ছবি? নকল করা হয়েছে তাঁদের সই? সেই ছবি দিয়ে এবং সই দিয়ে কী করে খোলা হয় অ্যাকাউন্ট।

কোন নথি ব্যবহার করাে অ্যাকাউন্ট খোলা হল? উঠছে অসংখ্য প্রশ্ন। ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার বিজেপির সহ সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, ''দক্ষিণ দামোদর এলাকায় যেমন প্রচুর পরিমাণে ধান উৎপাদন হয়। তেমনি এখানে বহু সংখ্যক রাইসমিল আছে। একশ্রেণির অসাধু রাইসমিল মালিক স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে যোগসাজশ করে গ্রামের সাধারণ মানুষের নামে অবৈধ ব্যাঙ্ক একাউন্ট খুলেছে। সঠিক তদন্ত হলে আসল রহস্য বের হবে।'' সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য বিনোদ ঘোষ বলেন, ''তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা এই ঘটনায় জড়িত। সঠিক তদন্তের দাবী করেন।''