রাণা দাস, পূর্ব বর্ধমান: কাটোয়ার (Katwa) আখড়া গ্রামের আচার্য পরিবারে নাকি ব্রহ্মদৈত্যের (Ghost) উৎপাত! সদস্যদের দাবি, বাড়ির উঠোনে থাকা নিমগাছ (Neem Tree) কাটার চেষ্টা করাতেই নাকি অশরীরীর রোষে পড়েছে পরিবার। যদিও চোখে ধরা পড়ল না কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা। শত্রুতার কারণে বাইরে থেকে কেউ এমনটা করছে, ভৌতিক দাবি উড়িয়ে অনুমান বিজ্ঞান (Science) মঞ্চের।
কী ঘটছে সেখানে?
কখনও ঘর থেকে কেউ ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে টেবিল ফ্যান। কখনও নাকি আছড়ে ভাঙা হচ্ছে বালতি। আচমকাই দেওয়াল থেকে পড়ে ভেঙে যাচ্ছে দেবদেবীর ছবি। ভেঙে গিয়েছে ঘরের ইলেকট্রিক বোর্ডের বিভিন্ন অংশ। দেখলে মনে হবে গোটা বাড়িতে কেউ বা কারা তাণ্ডব চালিয়েছে। এই ছবি পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার আখড়া গ্রামের আচার্য বাড়ির।
বাড়ির বাসিন্দাদের দাবি, উঠোনে থাকা একটি নিমগাছ কাটার চেষ্টার পর থেকেই নাকি প্রতিদিন বাড়িতে চলছে এমনসব আজব কাণ্ড। গৃহকর্তা রঞ্জিত আচার্য বলেন, "বাড়ির একটি নিম গাছ কাটার পর থেকেই শুরু হয়েছে ভৌতিক কাণ্ড। বাড়ির জিনিসপত্র ভেঙেচুরে দিচ্ছে কেউ। সবাই খুব ভয়ে আছি। কোনও ব্রহ্মদৈত্য এসব করছে।"
গৃহকর্ত্রী কল্যাণী আচার্য বলেন, "হঠাৎ করে দেখলাম ড্রেসিং টেবিল উল্টে গেল। মোবাইল চার্জে বসিয়েছিলাম, মনে হল কে একজন মোবাইল ছুড়ে ফেলে দিল। কিন্তু কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। বসে আছি, দেখলাম একটা টালি এলে পড়ল। গায়ে এসে ঢিল পড়ল।"
পাড়ায় আতঙ্ক
আচার্য বাড়ির আতঙ্ক আর অন্ধবিশ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে তাঁদের প্রতিবেশীদের মধ্যেও। প্রতিবেশী দিব্যেন্দু ঘোষ বলেন, "বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে কিছু ভাঙার আওয়াজ পেয়ে ভিতরে গিয়ে শুনলাম কেউ বালতি ভেঙে দিয়েছে। ফেরার সময় দেখলাম জল শুদ্ধু বালতি হঠাৎ পড়ে গেল। ভয়ে পালিয়ে এলাম।"
এমন আজব ঘটনার কথা মুখে মুখে ছড়ানোর পরেই আখড়ার আচার্য বাড়িতে পৌঁছে যায় এবিপি আনন্দ। কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা ধরা পড়েনি এবিপি আনন্দের ক্যামেরায়। যুক্তিবাদীরা অবশ্য ভৌতিক কাণ্ড কারখানার এসব তত্ত্ব মানতে নারাজ।
কী দাবি বিজ্ঞান মঞ্চের?
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চর সভাপতি দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, "ভূত বলে কিছু হয় না, এর পেছনে মানুষের হাত রয়েছে। হয় বাইরে থেকে কেউ শত্রুতার কারণে এসব করছে, নয়তো পরিবারের লোকেরা মানসিক সমস্যায় ভুগছে। আমরা কয়েকদিনের মধ্যে এলাকায় গিয়ে বিষয়টি কী হচ্ছে দেখব।"
যুক্তিবাদীরা বলছেন, অন্ধ বিশ্বাসের জোরেই আধুনিক সমাজের একাংশের মনে এখনও শিকড় চালিয়ে রেখেছে মধ্যযুগীয় কুসংস্কার। প্রশাসনের উচিত, এলাকার সচেতনতা শিবির করে এই অন্ধ বিশ্বাস দূর করা।