রানা দাস, পূর্ব বর্ধমান: টাকার বিনিময়ে আধার কার্ড তৈরির অভিযোগ উঠল, তাও আবার তৃণমূলের পার্টি অফিসের ভিতরে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পূর্ব বর্ধমানের কালনায় প্রকাশ্যে চলে এসেছে শাসক দলের গোষ্ঠী কোন্দল।
রীতিমতো বায়োমেট্রিক মেশিন বসিয়ে তৃণমূলের পার্টি অফিসে তৈরি হচ্ছে আধার কার্ড। আর পাঁচশো থেকে হাজার টাকা খরচ করলেই মিলবে সেই কার্ড। এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে পূর্ব বর্ধমানের কালনার পূর্ব সাতগাছিয়ায়। স্বাভাবিকভাবেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে শ্বাসপুর গ্রামের এই যুব তৃণমূল কার্যালয়কে কেন্দ্র করে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, টাকা ফেললেই আধার কার্ড মিলছে এখান থেকে।
শ্বাসপুর গ্রামের বাসিন্দা রিমা বিশ্বাসের অভিযোগ, 'আমরা আধার কার্ডের জন্য এসেছিলাম। কার্ড বানিয়ে দেওয়ার জন্য ৫০০ টাকা করে নিয়েছে। অন্য কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না। এখানে কার্ড করে দেবে বলেছিল।' আধার কার্ড তৈরির দায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তি এই অভিযোগ স্বীকারও করে নিয়েছেন।
আধার কার্ড নির্মাতা বাপ্পা সরকারের দাবি, 'আমরা বহরমপুর থেকে এসেছি। পার্টি অফিসের গণেশদা ডেকেছেন এই কাজ করার জন্য। আমি কোনও টাকা নিইনি। তবে অন্যজন টাকা নিচ্ছিল।'
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে চলে এসেছে শাসক দলের কোন্দল। ঘটনার পিছনে দলের ব্লক সভাপতি এবং এক তৃণমূল নেতার হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে কালনা যুব তৃণমূল নেতৃত্ব। কালনা শহরের যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক বাপন দাস জানাচ্ছেন, 'তৃণমূল পার্টি অফিসের ভেতরে ৫০০ আর ১০০০ টাকা দিয়ে আধার কার্ড তৈরি করা হচ্ছে। তার নেতৃত্বে রয়েছে ব্লক সভাপতি প্রণব। ওর নির্দেশেই তৃণমূল নেতা এই সব কাজ করাচ্ছে। দু'দিন ধরে পার্টি অফিসের ভেতর বায়োমেট্রিক বসিয়ে আধার কেন্দ্র তৈরি করে টাকার বিনিময়ে চলছে আধার তৈরির কাজ। এর প্রতিবাদ হওয়া উচিত। যারা করেছে সেই নেতাদের শাস্তি হোক।'
যদিও এই অভিযোগের পাল্টা জবাব দিয়েছেন দলের ব্লক সভাপতি এবং টিএমসিপি নেতা। কালনার তৃণমূল নেতা সুব্রত দাসের কথায়, 'আমরা ওদের বসতে দিয়েছিলাম পার্টি অফিসের ভিতরে যাতে সাধারণ মানুষকে বিনা পয়সায় সাহায্য করে দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে টাকা নেওয়া হচ্ছিল সেটা আমরা জানতাম না।'
এই ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কালনা ২ নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি প্রণব রায় জানান, 'যারা অভিযোগ করেছে, তারা তৃণমূলের কেউ নয়। তৃণমূল ঘনিষ্ঠ এক প্রোমোটারের হয়ে আমাদের বদনাম করার চেষ্টা করছে।'
এবিষয়ে পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক জানিয়েছেন, 'টাকার বিনিময়ে আধার কার্ড তৈরি করা যায় না। আধার কার্ড সংশোধন হোক বা নতুন করে তৈরি, সেই কাজ শুধুমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকেই হয়। রাজনৈতিক কার্যালয়ে আধার কার্ড তৈরির অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।'