রানা দাস, কাটোয়া : রক্তশূন্য ব্লাডব্যাঙ্ক (Blood Bank) ! রোগীদের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে সরকারি হাসপাতালে জাঁকিয়ে বসেছে দালাল চক্র। চলছে রক্তের কালোবাজারি (Black Market)। এক ইউনিট রক্তের জন্য ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে দাম ! এমনই অভিযোগ পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন সুপার।
পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল। এখানকার ব্লাডব্যাঙ্কই এখন রক্তাল্পতায় ভুগছে। ব্লাড ব্যাঙ্কের বোর্ডেই রক্তশূন্যতার সেই ছবিটা স্পষ্ট। অভিযোগ, এই সুযোগে সরকারি হাসপাতালে জাঁকিয়ে বসেছে অসাধুচক্র।
আরও পড়ুন ; নথি বা ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই মৃতদেহ সৎকার পশ্চিম মেদিনীপুরের গ্রামীণ শ্মশানে ! উঠছে প্রশ্ন
ব্লাডব্যাঙ্ক রক্তশূন্য থাকার সুযোগে চলছে রক্তের কালোবাজারি। ‘৫ হাজার টাকা দিলেই মিলবে রক্তদাতা।’ অভিযোগ, অসহায় রোগীর পরিবারকে এমনই টোপ দিচ্ছে দালালচক্র। দেখা যায়, ব্লাডব্যাঙ্কের যে লিস্ট রয়েছে, সেখানে সমস্ত রক্ত কিন্তু জিরো। যখন রোগীর আত্মীয়রা ব্লাডব্যাঙ্কে এসে ঘোরাফেরা করছে, সেই অসাধু চক্র রোগীর পরিবারকে আলাদা জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে এবং বলছে তারা রক্ত জোগাড় করে দেবে। তার বিনিময়ে ৫ হাজার টাকা দিতে হবে।
কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কের ইনচার্জ বাণীব্রত আচার্য বলেন, ব্লাডব্যাঙ্কের অবস্থা এখন খুবই খারাপ। রক্ত বিক্রি করছে এটা জঘন্য কাজ। যারা বিক্রি করছে তারা আমাদের কথা শুনবেও না। ওরা নেশাগ্রস্ত।
দালালদের সঙ্গে রফা করে কেউ কেউ এক ইউনিট রক্ত কিনছেন দেড় হাজার টাকায়। যাঁদের সেই সামর্থ্য নেই, তাঁরা রক্তের সন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরছেন।
কাটোয়ার খাজুটির বাসিন্দা জীবন মাঝি। রক্তাল্পতায় ভুগছেন। সোমবার কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হন। আত্মীয়দের দাবি, তাঁর জন্য এক ইউনিট রক্ত কিনতে গুনতে হয়েছে দেড় হাজার টাকা। জীবন মাঝির জামাই সুনীল মাঝি বলেন, এক বোতল রক্ত দেড় হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি। ভেবেছিলাম এক বোতলেই হয়ে যাবে। এখন বলছে, আরও দুই বোতল লাগবে। এখন কীভাবে পাব, কোথা থেকে টাকা জোগাড় করব, তাই ভাবছি।
পেটের টিউমার থেকে রক্তক্ষরণের কারণে মঙ্গলবার কাটোয়া হাসপাতালে ভর্তি হন মমতা ঘোষ। পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসকরা ২ বোতল রক্ত দিতে বললেও হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে তা মেলেনি। টাকা দিয়ে রক্ত কেনার সামর্থ্যও তাঁদের নেই। রক্ত জোগাড় করতে না হওয়ায়, বুধবারই রোগিণীকে ছুটি দিয়ে দিয়েছে হাসপাতাল। মমতা ঘোষের পুত্রবধূ খুকুমণি ঘোষ বলেন, রক্ত পাইনি। ডাক্তার ছুটি দিয়ে দিয়েছে। রক্তের জন্য বলছিল ৫ হাজার টাকা লাগবে। আমরা দিতে পারিনি।
কাটোয়া মহকুমা ভলান্টিয়ার্স ব্লাড ডোনর্স সংগঠনের সভাপতি জয়দেব দত্ত বলেন, রক্ত নেই। সেই সুযোগে একটা চক্র রক্ত জোগাড়ের নামে টাকা আদায় করছে। প্রশাসনকে অনুরোধ করছি এসব বন্ধ করানোর জন্য।
কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের সুপার জানিয়েছেন, পুরো বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন তিনি, যাতে এই ধরনের দালাল চক্র বন্ধ হয়।