কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান: সিএমওএইচ (CMOH) অফিস থেকে বর্ধমান ১নং ব্লকের কুড়মুন ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগ দিলেন কেতুগ্রামের রেণু খাতুন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ২১ জুন বর্ধমানের সিএমওএইচ অফিসে কাজে যোগদান করেন রেণু। আজ তাঁকে সিএমওএইচ দপ্তর থেকে বর্ধমান ১ ব্লকের কুড়মুন ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বদলি করা হয়। পোস্টিং পাওয়ার পর তিনি জানান 'তাঁর কাজ মানবসেবা, সেই কাজ যেন তিনি করতে পারেন।
রেণু খাতুনের স্বামীর স্বীকারোক্তি: স্ত্রীর হাত কেটেছেন, নিজের মুখে সে কথা স্বীকার করেন রেণু খাতুনের স্বামী। সেই সঙ্গে তাঁর সাফাই, সরকারি চাকরি পাওয়ায় নয়, স্ত্রীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে, এই কারণেই হাত কাটার সিদ্ধান্ত। যদিও অভিযোগ উড়িয়ে তরুণীর দাবি, নিজে বাঁচার জন্য এসব তত্ত্ব খাঁড়া করার চেষ্টা করছে অভিযুক্ত।
বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় স্ত্রীর হাত কেটেছিলেন। গোপন জবানবন্দিতে এ কথা স্বীকার করেন পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের বাসিন্দা, রেণু খাতুনের স্বামী শের মহম্মদ শেখ।
যদিও এই দাবি পুরোপুরি খারিজ করে দিয়েছেন রেণু। রেণুর শ্বশুরবাড়িতে অভিযুক্তদের নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয়। অভিযুক্ত স্বামী স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ তুললেও, তা মানতে নারাজ রেণুর আত্মীয়রা।
রাজ্যজুড়ে তোলপাড়: কেতুগ্রামে হাড় হিম করা ঘটনায় রাজ্যজুড়ে তোলপাড় পড়ে যায়। সরকারি চাকরি পাওয়ায় রেণু খাতুন নামে এই তরুণীর ডানহাতের কবজি থেকে কেটে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে, স্বামীর বিরুদ্ধে। ভয়ঙ্কর এই ঘটনার পর রেণুকে নার্সের চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘটনার তদন্তে নেমে রেণু খাতুনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি রেণুর স্বামীর এক মামাতো ভাই ও ২ সুপারি কিলারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে রেণু খাতুনের স্বামী, তার মামাতো ভাই ও দুই সুপারি কিলার। জেল হেফাজতে রয়েছেন রেণুর শ্বশুর, শাশুড়ি।কেতুগ্রামকাণ্ডে কাটোয়া মহকুমা আদালতে গোপন জবানবন্দি দেন রেণু খাতুন। সদ্য নার্সের চাকরিতে যোগ দেওয়া রেণু এবার চান, স্বামী-সহ ছয় অভিযুক্তর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হোক।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য দফতরে যোগদান: আপাতত নতুন লড়াই শুরু করেছেন পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের রেণু খাতনু। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য দফতরে যোগ দিলেন নার্স হিসেবে। কেতুগ্রামের লড়াকু মেয়ে জানিয়েছেন, প্রতিবন্ধকতা কর্মজীবনে প্রভাব ফেলবে না। যে সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য স্বামী হাত কেটে নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ, সেই চাকরিতেই যোগ দিলেন পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের রেণু। পূর্ব বর্ধমান জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য দফতরে, নার্স গ্রেড-টু পদে কাজ শুরু করলেন হার না মানা মেয়ে।
৪ জুন কেতুগ্রামের চিনিসপুর গ্রামে হাড় হিম করা ঘটনা ঘটে। রেণুর ডান হাতের কব্জি কেটে নেওয়া হয়। ৩ দিন পর ধরা পড়ে অভিযুক্ত স্বামী। এর মধ্যে হাসপাতালে চলে রেণুর ৮ দিনের নাছোড় লড়াই। সেই ভয়ঙ্কর ঘটনার পর, রেণুকে নার্সের চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেইমতো মঙ্গলবার সরকারি চাকরিতে যোগ দেন রেণু। ২৭ জুন পূর্ব বর্ধমান জেলায় আসতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চান কেতুগ্রামের লড়াকু মেয়ে।