রানা দাস, পরিতোষ দাস ও বিজেন্দ্র সিংহ, কলকাতা:  প্রাইমারি স্কুলে (Primary School) শিক্ষকতার চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রায় ৮৩ লক্ষ টাকা হাতানোর অভিযোগ। গ্রেফতার পূর্ব বর্ধমানের (East Burdwan) মঙ্গলকোটের ঝিলু ২ নম্বর পঞ্চায়েতের তৃণমূলের (TMC) উপপ্রধান। আর এনিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে শুরু হয়েছে তরজা। 


নিয়োগে দুর্নীতি


SSC’র নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বুধবার বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য সরকার। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ই বহাল রেখেছে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। এই আবহে সামনে এল আরও একটি দুর্নীতির অভিযোগ।


প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি দেওয়ার নামে প্রায় ৮৩ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেফতার হলেন মঙ্গলকোটের ঝিলু ২ নম্বর পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান। মঙ্গলবার রাতে তৃণমূল নেতা হেকমত আলিকে, তাঁর বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, নিজের জামাইয়ের কাছ থেকেও টাকা হাতিয়েছেন তিনি।


চাকরিপ্রার্থী ও ধৃতের জামাই, মহম্মদ গোলাম জামিন বলেন, "প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকের চাকরি করে দেবেন বলে আমার কাছে ৯ লক্ষ টাকা নিয়েছিল, কিন্তু প্রতিশ্রুতি মতো চাকরি দিতে পারেনি, টাকা চাইতে গেলে প্রথমে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে, পরে বহুকষ্টে ১ লক্ষ টাকা ফেরত পাই।" 


আরও পড়ুন, 'কাজে মন না থাকলে বসে যান, নইলে দলটা ঘ্যাচাং ফু হয়ে যাবে', নেতাদের বার্তা মমতার


মহম্মদ বদরুদ্দোজা নামে বীরভূমের কীর্ণাহারের এক বাসিন্দা মঙ্গলবারই মঙ্গলকোট থানায় প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর দাবি, বছর চারেক আগে তাঁর ছেলে, মহম্মদ গোলাম জামিনের সঙ্গে তৃণমূল নেতা হেকমত আলির মেয়ে জিন্নাতুন নিশার বিয়ে হয়। এরপরই জামাইকে প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি টাকা নেন ওই নেতা।


বড় অভিযোগ


বদরুদ্দোজার আরও অভিযোগ, শুধু তাঁর ছেলের থেকেই নয়, গ্রামের আরও ১০ জনের থেকে টাকা নেওয়া হয়। যার পরিমাণ ৮২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা।  কিন্তু প্রতিশ্রুতি পূরণ না করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ৫ চাকরিপ্রার্থীকে ভুয়ো নিয়োগপত্র দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের উপপ্রধানের বিরুদ্ধে। তবে এই ইস্যুতে শ্বশুর নয়, বাবার পাশেই দাঁড়িয়েছেন ধৃত তৃণমূল নেতার মেয়ে।


ধৃত তৃণমূল নেতার মেয়ে জিন্নাতুন নিশা বলেন, "পারিবারিক কারণে এটা হয়েছে, বিয়েতে আমার বাবা যৌতুক দিয়েছিল, মিথ্যে বলে আমাকে বিয়ে করেছিল, সেই টাকা চাইতে গেলে বাবাকে ফাঁসানো হচ্ছে। মঙ্গলকোটে তৃণমূল বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী বলেন, "আমরা যখন শুনেছি তখনই দল থেকে বের করে দিয়েছি, পঞ্চায়েতে ঢুকতে দিতাম না, উপপ্রধান পদ থেকে সরানোর জন্য বিডিওর কাছে আবেদনও করেছি।" 


প্রতারণার অভিযোগে ধৃত তৃণমূলের উপপ্রধান। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, "ওদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে, যদি সত্যিই দুর্নীতির অভিযোগে এই পদক্ষেপ হয় তাহলে গোটা তৃণমূল দলই উঠে যাবে।" কুণাল ঘোষ বলেন, "অভিযোগ করলেই এখন কেস ফাইল হয়ে যায়, সত্যি-মিথ্যে না জেনে মন্তব্য ঠিক নয়, এসব ক্ষেত্রে কেউ ব্যক্তিগত রাগ মেটাতে অভিযোগ করছে।" 


ধৃত তৃণমূল নেতাকে এদিন কাটোয়া মহকুমা আদালতে তোলা হলে, বিচারক তাঁকে ৩ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।