কমলকৃষ্ণ দে ও প্রবীর চক্রবর্তী, ভাতার (পূর্ব বর্ধমান) : যে সব ক্লাব পুজোয় সরকারি অনুদান নিচ্ছে, সেই ক্লাবে মুখ্য়মন্ত্রীর ছবি টাঙানোর ফরমান দিলেন ভাতারের তৃণমূল বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী। সরকারি অনুদান প্রদান অনুষ্ঠান মঞ্চে তৃণমূল বিধায়কের এই ফরমানে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। এদিকে, আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে এবার রাজ্য় সরকারের দেওয়া পুজোর অনুদান প্রত্য়াখ্য়ান করল বেহালা সরশুনার স্টার লাইট টুইন্স আবাসন। 


আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে পুজোর সরকারি অনুদান প্রত্য়াখ্যান অব্য়াহত। অনুদান না নিয়ে আড়ম্বরহীন পুজো আয়োজনের পথে হাঁটছে অনেক ক্লাবই। এই প্রেক্ষাপটেই পুজোয় সরকারি অনুদান নিচ্ছে এমন ক্লাবে মুখ্য়মন্ত্রীর ছবি টাঙানোর ফরমান দিলেন ভাতারের তৃণমূল বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী। সোমবার ভাতার থানায় আয়োজিত পুজো কমিটিগুলিকে সরকারি অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য় করেন তিনি। ভাতারের তৃণমূল বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী বলেন, "যে টাকাটা দিচ্ছে, তাঁর ছবি যেন প্রত্য়েকটা প্য়ান্ডেলে টাঙানো থাকে। মুখ্য়মন্ত্রীর কাছ থেকে টাকাটা নিচ্ছেন আপনারা। সরকারের টাকা, আর মুখ্য়মন্ত্রী সরকারের লোক। অনেকে টাকা নিচ্ছেন। কিন্তু, মুখ্য়মন্ত্রীর ছবি টাঙাচ্ছেন না। যারা মুখ্য়মন্ত্রীর ছবি টাঙাতে তাদের অসুবিধা তারা টাকাটা না নেওয়াই ভাল। অনেক ক্লাব তো নিচ্ছে না। আপনারাও যদি মনে করেন মুখ্য়মন্ত্রীর ছবি টাঙানো যাবে না, তাহলে আপনারা টাকাটা নেবেন না।"

শাসক বিধায়কের মন্তব্য়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। বর্ধমান-দুর্গাপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপির মুখপাত্র শান্তরূপ দে বলেন, "থ্রেট কালচার যেটা নিয়ে গোটা পশ্চিমবঙ্গ এখন উত্তাল। এই থ্রেট কালচার শুধুমাত্র কোনও কলেজে বা কোনও একটা অঞ্চলের কালচার নয়। গোটা পশ্চিমবঙ্গেই থ্রেট কালচার চলছে। ঠিক সেরকমই এই থ্রেট কালচারের আরেকটি জলজ্য়ান্ত নিদর্শন হচ্ছে ভাতারের যিনি বিধায়ক আছেন, তিনি যেভাবে পুজো কমিটির উদ্দেশে যেভাবে হুইপ জারি করলেন যে টাকা নিতে গেলে মুখ্য়মন্ত্রীর ছবি টাঙাতেই হবে।"

এদিকে, ভাতারের তৃণমূল বিধায়কের এই ফরমানের মধ্য়েই আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে পুজোর অনুদান প্রত্য়াখ্য়ান করল বেহালা সরশুনার স্টার লাইট টুইন্স আবাসন। সরশুনা থানাকে লিখিতভাবে ও ইমেল করে পুজোর অনুদান না নেওয়ার কথা জানিয়েছেন আবাসনের পুজো উদ্য়োক্তারা। বেহালা স্টার লাইট টুইন্স আবাসনের পুজো উদ্য়োক্তা অর্ণব ঘোষ বলেন, "আশেপাশে যা চলছে এখন, সেই জন্য় আমরা এই অনুদানটা নিচ্ছি না। যা চলছে বাজারে, অনেক কারণ আছে আরজি কর হোক, সে পড়ুয়া হোক, অনেকরকম কারণ আছে যাতে অনেকের ক্ষতি হচ্ছে। সেই জন্য় এই অনুদানটা নিচ্ছি না। নিজেদের মধ্য়েই এই বছর আমরা এটা ঠিক করে নিয়েছি। সরকারকে জানিয়েও দিয়েছিলাম যে ফর্মটা আছে। পুলিশকেও আমাদের লেটার হেডে জানিয়ে দিয়েছি যে আমরা এই অনুদানটা নিচ্ছি না।"

সরকারের টাকা মানে জনগণের করের টাকা। সেই টাকা থেকে পুজো অনুদান দেওয়া হচ্ছে। তা নিয়ে ফরমান দেওয়ার তৃণমূল বিধায়ক কে ? এই প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে।