কমলকৃষ্ণ দে, বর্ধমান : অঘটনের পর নড়ল টনক। বর্ধমানে শতাব্দী প্রাচীন জলের সুউচ্চ ট্যাঙ্ক ভেঙে পড়ার পর নড়েচড়ে বসল রেল কর্তৃপক্ষ। এবার পূর্ব রেলের সব ট্যাঙ্কের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ভাবনা রেলের। নিরাপত্তার স্বার্থে ট্যাঙ্ক এলাকায় থাকা বস্তিবাসী ও দোকানদারের অন্যত্র সরে যাওয়ার নির্দেশ।
বর্ধমান স্টেশনে ১৮৯০ সালের জলের ট্যাঙ্ক ভেঙে ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের, জখম ৩৯ জন। ঘটনার পর আতঙ্ক রয়েছে। শুধু এই ট্যাঙ্কই নয়, বর্ধমান স্টেশনের ৮ নম্বর প্লাটফর্মের বাইরে থাকা ১৯৩৫ সালে তৈরি একই প্রকার ট্যাঙ্ক ও রেলের আবাসন এলাকায় থাকা আরও একাধিক ট্যাঙ্ক ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে যে কোনও মুহূর্তে আবার দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন। যদিও কিছু ক্ষেত্রে রেলের তরফে ট্যাঙ্ক চত্বর এলাকায় থাকা বস্তিবাসী ও দোকানদারদের অন্যত্র সরে যেতে বলা হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া, মালদা, আসানসোল ও শিয়ালদহ ডিভিশনের সব স্টেশনে পুরনো জল ট্যাঙ্কগুলি আধুনিক পদ্ধতিতে ‘স্বাস্থ্য পরীক্ষা’ করা হবে। সেই রিপোর্ট পাওয়ার পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, বুধবার দুপুরে বর্ধমান স্টেশনের ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ভেঙে পড়া জল ট্যাঙ্কের জায়গা খতিয়ে দেখার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আধিকারিক ও কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। এই ঘটনায় এখনও ১১ জন জখম বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, হাওড়া ডিভিশনে প্ল্যাটফর্মের উপরেই ৩টি, স্টেশন চত্বরে ১৪টি ও আবাসন এলাকায় ৩৫টি মতো পুরনো জলের ট্যাঙ্ক রয়েছে। বর্ধমানের ৮ নম্বর প্ল্যাটফর্মে সংলগ্ন ১৯৩৫ সালে তৈরি একটি জলের ট্যাঙ্ক রয়েছে।
বুধবার দুপুরে বর্ধমান স্টেশনের ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ১৩৩ বছরের পুরনো ট্যাঙ্কটির একদিকের লোহার চাদর ভেঙে পড়ে। জলের তোড় ও লোহার চাদরের ধাক্কায় প্ল্যাটফর্মের যাত্রী ছাউনি ভেঙে পড়লে ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যান। অন্তত ৩৪ জন জখম হন। শুক্রবার বেশ কয়েকজন জখম যাত্রীকে সুস্থ করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছেড়ে দিয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও ১১ জন ভর্তি রয়েছেন। ছ’বছরের এক বালিকার অস্ত্রোপচার হবে। বাকিরা সুস্থ হয়ে উঠছেন। দু’এক-দিনের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হবে। সূত্রের খবর, শুক্রবার রেলের তদন্তকারী দল কয়েকজন জখম ও প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে হাসপাতালে গিয়ে কথা বলেছেন। তাঁদের বয়ান নথিভুক্ত করেছেন তদন্তকারীরা। বৃহস্পতিবার দিনভর তদন্তকারীরা দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন ও রেলের আধিকারিকদের বয়ান নথিভুক্ত করেন। একাধিক রিপোর্টও তাঁরা সংগ্রহ করেছেন। রেল কর্তাদের দাবি, কয়েক দিনের মধ্যেই তদন্তকারীরা ডিআরএম (হাওড়া)-কে রিপোর্ট জমা দেবেন।