বিটন চক্রবর্তী, পূর্ব মেদিনীপুর: নয়াচরের মৎস্যজীবীদের জন্য সুখবর। সরকারি স্বীকৃতি পেলেন তাঁরা। ৮০টি সমবায়ের মাধ্যমে মৎস্যজীবীদের মৎস্যহাবের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট দেওয়া হল। সরকারের এমন পদক্ষেপে খুশি মৎস্যজীবিরা।
গত বছরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, নয়াচরে (Nayachar) মৎস্য হাব হবে, ইকো ট্যুরিজম (Eco Tourism) হবে। ২০২১-এর ১৮ই নভেম্বর, হাওড়ার প্রশাসনিক সভা থেকে নয়াচরে ফিশিং হাব গড়ে তোলার আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরেই ওই কাজ করতে তৎপর হয় রাজ্য প্রশাসন। ওই কাজের জন্য মত্স্য থেকে পরিবহণ, বন থেকে পরিবেশ- একাধিক দফতরের আধিকারিকরা ওই এলাকা পরিদর্শন করেন। তার সঙ্গেই শুরু হয়েছিল জমি জরিপের কাজ। এবার নয়াচরের জমি, সমবায়ের মাধ্যমে এলাকার মৎস্যজীবীদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করল রাজ্য সরকার।
কী ভাবে কাজ?
৮০টি সমবায় তৈরি করা হয়েছে। প্রত্যেকটি সমবায় সমিতির সদস্য সংখ্যা সর্বাধিক ৬০ জন, সর্বনিম্ন ১৫ জন। কোনও সমবায়ের সদস্য সংখ্যার উপর নির্ভর করেই মিলবে জমির পরিমাণ। সুতাহাটা বিডিও অফিস থেকে ক্যাম্প করে ৬৫টি সমবায়ের প্রতিনিধিদের হাতে সমবায়ের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট তুলে দেন মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী। মন্ত্রী বলেন, 'আমরা ৮০টার মতো সমবায় তৈরি করে সার্টিফিকেট তুলে দিলাম। সরকার সবরকম সহযোগিতা করবে। জমির স্বত্ব সরকারের থাকছে।'
কেন সরব বিরোধীরা:
মাছ চাষের স্বত্ব পেলেও, জমির স্বত্ব পাচ্ছেন না মত্স্যজীবীরা। তা সরকারের হাতেই থাকবে। এই নিয়ে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেছেন বিরোধীরা। সিপিএমের (CPIM) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, 'অপরিকল্পিত কাজ। টাকার খেলা চলছে। টাকা রোজগারের জায়গা করতে চাইছে। স্বাধীনভাবে মত্স্যজীবীরা কাজ করতেন। মানুষের সুবিধা হবে বলে মনে হয় না।' বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'নয়াচরে মাছ চাষীদের বাজার কই? সরকার তোলাবাজি করতে চাইছে।'
নন্দীগ্রামে (Nandigram) জমি অধিগ্রহণ নিয়ে আন্দোলন শুরুর পরে সামনে আসে নয়াচরের নাম। হলদিয়ার কাছেই হুগলি নদীর মোহনা ও হলদি নদীর সংযোগস্থলে রয়েছে নয়াচর। সেখানে সাড়ে ৫ হাজার মানুষ বসবাস করেন। এর আগে ক্ষমতার থাকার সময় বামেরা নয়াচরে কেমিক্যাল হাব তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতার কারণে তা আর বাস্তবায়ন হয়নি। এরপরে পালাবদল হয় রাজ্যে। ২০১১ সালে ক্ষমতা আসে তৃণমূল। রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে নয়াচরে পরিবেশবান্ধব শিল্প গড়ার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেশ কয়েকবার প্রশাসনিক উদ্যোগও নেওয়া হয়। কিন্তু কাজ সেভাবে এগোয়নি নয়াচরে। এবার মৎস্য হাব নিয়ে আশার আলো দেখছেন নয়াচরের বাসিন্দারা। নয়াচরের এক মৎস্যজীবী রবীন্দ্রনাথ মান্না বলেন, 'এই উদ্যোগে খুশি এলাকার মৎস্যজীবিরা। পাশাপাশি পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন তাঁরা।'
আরও পড়ুন: স্কুল পরিচালন ভোটে দ্বন্দ্ব! তৃণমূলেরই একাধিক প্রার্থী