বিটন চক্রবর্তী, পূর্ব মেদিনীপুর: টাকার বান্ডিল হাতে ধরিয়ে সোনাদানা নিয়ে পগারপার প্রতারকের দল (Fraud Gang)। একবার নয়, বার বার একই ধরনের ঘটনা সামনে আসছিল। তাতে তক্কে তক্কে ছিল পুলিশও। তাই নতুন করে জাল বিছোনোর কাজ শুরু করতেই হাতেনাতে প্রতারণাচক্রকে ধরে ফেলল পুলিশ। তাদের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা এবং একটি আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার হয়েছে। তবে এই প্রতারণা চক্রের শিকড় অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত বলেই মনে করছে পুলিশ।
পূর্ব মেদিনীপুরের (Purba Medinipur News) কোলাঘাটে (Kolaghat News)এই প্রতারণাচক্রকে পাকড়াও করে বড় ধরনের সাফল্য পেল পুলিশ (Kolaghat Police)। রবিবার কোলাঘাটের হলদিয়া মোড় থেকে দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযুক্তদের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, ধৃতদের নাম রাজা এবং লাল্টু হালদার। রাজার বাড়ি বারুইপুর এবং লাল্টুর বাড়ি কুলপি থানা এলাকায়। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
প্রতারণাচক্রকে হাতেনাতে ধরল পুলিশ
পুলিশ সূত্রে খবর,সাত-আটজনের একটি দল পূর্ব মেদিনীপুর-সহ একাধিক জেলায় প্রতারণার জাল পেতেছিল।মূলত মহিলাদেরই নিশানা করত তারা। তার জন্য বিশেষ কৌশলও সাজিয়ে নিত বলে জানা গিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, কোনও এলাকায় গিয়ে আগে মহিলাদের গতিবিধি মেপে নিত তারা। তার পর আচমকাই টাকার বান্ডিল হাতে কোনও মহিলার সামনে হাজির হত। টাকার বান্ডিল দেখিয়ে একজন জানাতেন, রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছেন তিনি। ওই মহিলার টাকা খোয়া গিয়েছে কিনা জানতে চাইতেন।
অত টাকা দেখে স্বাভাবিক ভাবেই ঘাবড়ে যেতেন ওই মহিলা। জানিয়ে দিতেন তাঁর কোনও টাকা খোয়া যায়নি। এর পর মানে মানে বিদায় নিতেন টাকার বান্ডিল নিয়ে ছুটে যাওয়া ওই ব্যক্তি। কিন্তু দূর থেকে ওই মহিলার উপর নজর রাখতেন তাঁর সঙ্গীরা। তাই কিছু ক্ষণ পর তাঁদের মধ্যে থেকে অন্য এক জন ওই মহিলার সামনে হন্তদন্ত হয়ে হাজির হতেন। কারত ভাবে জানতে চাইতেন, টাকার বান্ডিল পড়ে থাকতে দেখেছেন কিনা। কারণ তাঁর মোটা টাকা খোয়া গিয়েছে তাঁর।
আরও পড়ুন: Coochbehar News: কোচবিহারে তুঙ্গে বিরোধ, পার্থপ্রতিম রায়কে কড়া ভাষায় আক্রমণ রবীন্দ্রনাথ ঘোষের
ওই মহিলার সঙ্গে কথা বলে দ্বিতীয় জন সরে পড়তেন। কিছু ক্ষণ পর প্রথম জন ফের ওই মহিলার সামনে হাজির হতেন। জানাতেন, অনেক খোঁজাখুঁজি করেও টাকার মালিকের খোঁজ পাননি। তাই ওই মহিলার সঙ্গে টাকা ভাগ করে নিতে চান তিনি। মহিলা রাজি হলে ফের নতুন প্রস্তাব দেওয়া হতো। বলা হতো, মহিলাকে পুরো টাকাই দিয়ে দিতে চান তিনি। তার বদলে ওই মহিলা বরং তাঁকে গায়ের সোনা দিলেই হবে। চোখের সামেন টাকার বান্ডিল দেখে প্রলোভনের ফাঁদ এড়াতে পারেননি বহু মহিলাই।
টাকার বান্ডিল ধরিয়ে গয়না লুঠ
ফলে টাকার বান্ডিলের বিনিময়ে গয়না দিতে দ্বিধা করতেন না। কিন্তু ভুল ভাঙত বাড়ি গিয়ে। টাকার বান্ডিল খুলে দেখতেন, বান্ডিলের উপরে এবং নীচেই কেবলমাত্র ২০০-৫০০-র নোট রয়েছে এক-দু'টি। মাঝে ঠেসে ভরে রাখা হয়েছে টাকার আকারে কেটে রাখা খবরের কাগজের টুকরো। এ বাবে জাল বিছিয়ে ওই প্রতারণা চক্র লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। শুধু পূর্ব মেদিনীপুর নয়, দুই ২৪ পরগনা, কলকাতা-সহ একাধিক জায়গায় মানুষকে ফাঁদে ফেলেছে তারা।
পুলিশের কানেও সেই খবর পৌঁছয়। তার পর থেকে ওই প্রতারণেচক্রকে ধরতে তক্কে তক্কে ছিল তারা। তার মধ্যেই শনিবার গোপন সূত্রে পুলিশের কাছে খবর পৌছয় যে, হলদিয়া মোড়ে এমনই নতুন শিকার খুঁজছে তারা। তাতেই আগে থেকে সক্রিয় হয় কোলাঘাট থানার পুলিশ। রবিবার সেখান থেকে হাতেনাতে দু'জনকে গ্রেফতার করে তারা। ধৃতদের কাছ থেকে নগদ ১ লক্ষ ১১ হাজার ৮০০ টাকা, একটি ছুরি, লোহার রড, এমনকি একটি পিস্তলও উদ্ধার হয়েছে। কোলাঘাট থানার ওসি ইমরান মোল্লা এবং এসডিপিও তমলুক, সাকিব আহমেদ সাংবাদিক বৈঠকে জানান, সাত-আটজন মিলে এই চক্র চালাতেন। বাকিদের ধরার চেষ্টা চলছে।