ঋত্বিক প্রধান, পটাশপুর: ধর্ষণ করে কীটনাশক খাইয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। এতে বাড়ি থেকে বের করে এনে অভিযুক্তকে গণধোলাই দেন স্থানীয়রা। তাতে এবার মৃত্যু হল পটাশপুরের অভিযুক্তের। অভিযুক্তকে গণপ্রহার করা হচ্ছে খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। সেখানে পুলিশের সঙ্গে বচসা বাধে স্থানীয়দের। কোনও রকমে অভিযুক্তকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় অভিযুক্তকে। সেখানে মারা যান অভিযুক্ত যুবক। (Patashpur News)


এদিন সকালে পুলিশ যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়, সেই সময় বেধড়ক মারধর করা হচ্ছিল। যে ভিডিও সামনে এসেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, তাতে অভিযুক্তকে ফেলে এলোপাথাড়ি লাঠি, বাঁশ দিয়ে পেটাতে দেখা গিয়েছে মহিলাদের। গোল হয়ে সেই দৃশ্য দেখছিলেন স্থানীয় মানুষজন। মোবাইল ফোনে সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দিও করছিলেন অনেকে। পুলিশ অভিযুক্তকে উদ্ধার করতে গেলে বচসা বাধে। কঠোর শাস্তির দাবি জানাতে থাকেন গ্রামবাসীরা। (Purba Medinipur News)


এর পর কোনও রকমে অভিযুক্তকে উদ্ধার করে এগরা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন মারা যান ওই যুবক। এই মুহূর্তে বিরাট পুলিশবাহিনী পটাশপুরের গ্রামে পৌঁছেছে। যেখানে ফেলে মারধর করা হয় অভিযুক্তকে, সেই জায়গাটি বাঁশ দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে।


আর জি কর কাণ্ডে প্রতিবাদ, আন্দোলনের মধ্যেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে ন'বছরের বালিকাকে ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগ সামনে এসেছে। সেই রেশ কাটার আগেই পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরে গৃহবধূকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগ ওঠে। জানা যায়, কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন ওই মহিলার স্বামী। সেই সুযোগেই মহিলাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান প্রতিবেশী এক যুবক। ধর্ষণের পর জোর করে কীটনাশক খাইয়ে হত্যা করা হয় তাঁকে। (Purba Medinipur News)


গ্রামবাসীরা জানান, কীটনাশক খাওয়া অবস্থায় ওই মহিলাকে উদ্ধার করেন তাঁরা। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে মারা যান তিনি। বিষয়টি সামনে আসতেই পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে ওঠে। অভিযুক্ত যুবককে বাড়ি থেকে টেনে বের করে এনে গণধোলাই দেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশের একটি দল। পুলিশকে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা।


বিষয়টি সামনে আসতে রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "এই ধরনের ঘটনা যে ঘটছে, তার কারণ হল, সমস্ত দুষ্কৃতী আজ নিয়ন্ত্রণহীন সমাজে থেকে, আইনের শাসন না থাকায় ভয়মুক্ত হয়ে গিয়েছে। ভাবছে, সরকার তাদের, তাই পুলিশ কিছু করতে পারবে না। পুলিশও আক্রান্ত হচ্ছে। পুলিশের এমনই পরিণতি হওয়ার কথা ছিল। উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের সরীসৃপ হয়ে যাওয়ার কারণে, আত্মসমর্পণের কারণে, উদাসীনতার কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আজ এটা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। কারও মনে ভয় বলে আর কিছু নেই।"


সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "পশ্চিমবঙ্গে যা চলছে, আমাদের মুখ দেখানোর সুযোগ কমে যাচ্ছে। ভয়াবহ। বাড়ছে। অপরাধীরা যেন মনে করছে, যা খুশি করতে পারে, কেউ কিছু করার নেই। আর জি কর নয় শুধু, নানা ঘটনার বিস্ফোরণ ঘটে আর জি করে। কিছু লাভ হল না। জয়নগরে বাচ্চা মেয়ে, এখন পটাশপুরে গৃহবধূ। কোথায় যাচ্ছি আমরা? কী করে এত সাহস পাচ্ছে? ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে রয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী আরও উৎসাহিত হয়ে নিশ্চয়ই উৎসবে মেতে উঠবেন। একদিকে মায়ের কোল খালি হচ্ছে, অন্য দিকে মুখ্যমন্ত্রী উৎসবে নেচে বেড়াচ্ছেন। আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে। সরকারের যখন এমন হাবভাব, মানুষকেই রুখে দাঁড়াতে হবে।" আর জি কর কাণ্ডের পরও লাগাতার এমন ঘটনায় রাজ্যের সমালোচনা করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও।