কলকাতা: থ্রেট কালচারে (Threat Culture) অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এবার কড়া পদক্ষেপের পথে আর জি কর মেডিক্যালের কলেজ কাউন্সিল। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে বৈঠক শেষে ১০ জনের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানাল কাউন্সিল। বাকিদের বিরুদ্ধেও একাধিক কঠোর পদক্ষেপের উল্লেখ কাউন্সিলের নির্দেশনামায়। সেইসঙ্গে বৈঠকে গৃহীত হয়েছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের একগুচ্ছ সুপারিশও।
কড়া পদক্ষেপের পথে: দু'সপ্তাহ ধরে হযেছিল হাসপাতালে হুমকি-সংসকৃতির অভিযোগের শুনানি। ৫৯ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ করেছিল তদন্ত কমিটি। মোট ১৪ দফা অভিযোগের ভিত্তিতে সেই কমিটির রিপোর্টের প্রেক্ষিতে এবার কড়া ব্যবস্থা নিতে চলেছে আর জি কর মেডিক্যালের কলেজ কাউন্সিল। শনিবার সাড়ে আট ঘণ্টার বৈঠক শেষে সামনে এসেছে কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত সম্বলিত নির্দেশনামা। যাতে ৫৯-এর মধ্যে ১০ জনকে আর জি কর মেডিক্যাল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা করা হয়েছে। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পাকাপাকিভাবে হস্টেলও ছাড়তে হবে ওই ১০ জনকে। এছাড়া আরও ৪৩ জনকে হস্টেল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আরও ৬ জনকে সতর্ক করার সুপারিশ করেছে কলেজ কাউন্সিল। জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি, হুমকি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে তাদের লাগাতার আন্দোলনের প্রাথমিক জয়।
আর জি কর মেডিক্য়ালে চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের পর যে বিষয়টি আলোচনা ও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে, তা হল থ্রেট কালচার বা হুমকি সংস্কৃতি। যার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন ডাক্তারি পড়ুয়ারা। আর জি কর-কাণ্ডের পর রাজ্য়ের একের পর এক সরকারি মেডিক্য়াল কলেজ থেকে আসতে শুরু করে এই অভিযোগ। ভাইরাল হয় হুমকি-শাসানির একাধিক অডিও ক্লিপ। সেই সব অভিযোগের তদন্ত করতে, বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির কাছে অভিযোগ জমা পড়ে ৫৯ জনের বিরুদ্ধে। ২ সপ্তাহ ধরে অভিযুক্ত ও অভিযোগকারীদের বক্তব্য শোনার পর মঙ্গলবার আর জি কর মেডিক্য়ালের অধ্যক্ষ মানস বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের কাছে রিপোর্ট পেশ করে বিশেষ তদন্ত কমিটি।
সূত্রের খবর, ৪০ জনের বিরুদ্ধেই 'থ্রেট কালচারের' স্পষ্ট তথ্য়প্রমাণ মিলেছে। ১৪ জনের বিরুদ্ধে আংশিকভাবে 'থ্রেট কালচারের' প্রমাণ মিলেছে। খুব কম তথ্য়-প্রমাণ মিলেছে বাকি ৫ জনের বিরুদ্ধে। এই প্রেক্ষিতে শনিবার কাউন্সিলের সামনে রিপোর্ট পেশ করেন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ। রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা হয় কলেজ কাউন্সিলে। তারপরই সামনে আসে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে দোষী প্রমাণিতদের বিরুদ্ধে কলেজ কাউন্সিলের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও একাধিক সুপারিশের প্রস্তাব। সৌরভ পাল, আশিস পাণ্ডে, নির্জন বাগচী,শরিফ হাসান, তনভীর আহমেদ কাজি সহ ১০ জনকে কলেজ এবং হস্টেল থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কাউন্সিলের দাবি, ওই ১০ জনের বিরুদ্ধে কলেজ চত্বরের মধ্যেই মহিলাদের যৌন নিগ্রহের পর্যাপ্ত প্রমাণ মিলেছে। এই বিষয়টি কলেজের অভ্যন্তরীন অভিযোগ গ্রহণ কমিটিকে দেখতে বলেছে কাউন্সিল। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে নাম উঠে আসা চিকিৎসক পড়ুয়া থেকে ইন্টার্ন, হাউস স্টাফদের বিরুদ্ধেও একাধিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলেজ কাউন্সিল। হুমকি-সংস্কৃতিতে নাম উঠে আসা চিকিৎসক-পড়ুয়াদের ৬ মাস থেকে ১ বছর কলেজে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা জারির পাশাপাশি ইন্টার্নদের ক্ষেত্রে, ৩ মাস থেকে ৬ মাসের জন্য ইন্টার্নশিপ সাসপেন্ডের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, থ্রেট কালচারে জড়িত হাউস স্টাফদের ক্ষেত্রে, তাঁদের কাজের মেয়াদ কলেজ কাউন্সিলের চিঠি পাওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে খারিজ হয়ে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি করে, স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তাকে চিঠি দিয়েছেন কলেজের ২০ জন বিভাগীয় প্রধান ও এমএসভিপি। তাঁদের অভিযোগ, পরীক্ষা-দুর্নীতি-সহ একাধিক অভিযোগ উঠলেও, তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত হয়নি। সেই ইস্যুতে শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনায় বসেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তনীরা। থ্রেট কালচার নিয়ে এদিন সরব হয়েছে নার্সদের সংগঠনও।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।