ঋত্বিক প্রধান, কাঁথি : সামনেই পঞ্চায়েত ভোট (Panchayat Vote)। তার আগে সংগঠন মজবুত করতে ময়দান নেমেছে কমবেশি প্রতিটি রাজনৈতিক দলই। এই আবহে শীঘ্রই পূর্ব মেদিনীপুরে (Purba Medinipur) আসার কথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee)। কিন্তু, তার আগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নিজের এলাকা কাঁথিতে শাসক দলের গোষ্ঠী কোন্দল চরমে উঠেছে। তা এতটাই তীব্র যে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করতে হল কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল নেতৃত্বকে। রবিবার সন্ধ্যায় জেলা কমিটির বর্ধিত মিটিং হয় কাঁথি-তে।
তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে, মূলত সাংগঠনিক জেলার ১৪টি ব্লক এবং অঞ্চল কমিটির অনুমোদন দেওয়া ঘিরে এদিন জেলা কমিটির বর্ধিত সভায় তুলকালাম কাণ্ড বাধে। কয়েকদিন আগে সবকটি ব্লক ও অঞ্চলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু, সহমতের ভিত্তিতে কোথাও কমিটি গঠন হয়নি বলে পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সরব হয় জেলা তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী।
এদিন মিটিংয়ে হাজির ছিলেন এরকম কয়েকজন জেলা কমিটির নেতা বলছেন, "কমিটির অনুমোদন দূরে থাক, একের পর এক নেতা পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অভিযোগ তুলে সরব হন। একে অপরকে কটূক্তি এবং গালিগালাজ করার অভিযোগ উঠেছে। সভা চলাকালীন পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে প্রায় হাতাহাতি হওয়ার উপক্রম হয়ে ওঠে।
তৃণমূল যুবর কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি এবং কাঁথি -১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রদীপ গায়েনের মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডা চলে। একই রকম ভাবে চণ্ডীপুর, কাঁথি -১, দেশপ্রাণ,পটাশপুর -১, এগরা -২, খেজুরি -২, রামনগর ব্লকের কমিটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই শিবিরের তীব্র মতবিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে বলে তৃণমূলের একাংশের দাবি। শেষ পর্যন্ত ব্লক ও অঞ্চল এবং পুরসভার পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন স্থগিত রাখা হয়। এমনকি জেলা কমিটির চেয়ারম্যান এবং ইতিমধ্যে যাঁরা ইস্তফা দিয়েছেন সেব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। পরে, নতুন কমিটির অনুমোদন দেওয়ার আগে সব স্তরে কিছু সংযোজন এবং বিয়োজন করার প্রস্তাব দেওয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে। তা কার্যকর করার জন্য সমস্ত ব্লক ও অঞ্চল কমিটির সভাপতিদের সঙ্গে আলোচনা করতে একটি পাঁচ সদস্যের কমিটি তৈরি করা হয়। কমিটির মাথায় রয়েছেন জেলা সভাপতি তরুণ মাইতি। তিনি বলেন, সভা চলাকালীন একটি অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। পরিস্থিতির কথা ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে জানিয়েছি।
তরুণ মাইতি বলেন, এই মিটিংয়ের পরের দিন কাঁথি ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রদীপ গায়েন অভিযোগ করেন সভা চলাকালীন তাঁকে কটূক্তি, প্রাণনাশের হুমকি ও জেল খাটানোর হুমকি দিয়েছেন জেলা যুব সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি। এ নিয়ে তিনি আতঙ্কিত। তাই মেলে সমস্ত ঘটনার কথা জানিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও মমতা ব্যানার্জির দ্বারস্থ হয়েছেন।
কাথি ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রদীপ গায়েন বলেন, "চোর, শেষ করে দেব, জেল খাটাব বলে হুমকি দিয়েছেন সবার সামনে। গতকাল থেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমার জীবন সংশয় রয়েছে। দলীয় নেতৃত্বের কাছে-সভাপতির কাছে জানিয়েছি, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।"
যদিও এই ব্যাপারে সুপ্রকাশ গিরির দাবি, সভার মধ্যে যদি কোনও বিতর্ক হয়ে থাকে তা, রাজনৈতিক বিতর্ক। আসল কথা উনি আমার বলাগেড়িয়া ব্যাঙ্ক ও ইউকো ব্যাঙ্ক থেকে প্রচুর টাকা ঋণ নিয়েছেন, যা পরিশোধ করছেন না। এছাড়াও উনি বেশ কিছু সমবায় ব্যাঙ্কের টাকা নয়ছয় করেছেন। মিটিং চলাকালীন যদি প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে সেখানে অনেক নেতৃত্বই উপস্থিত ছিলেন, আমি তাঁদের কাছেও জানতে চাইব। সমস্ত ব্যাঙ্কের নথি নিয়ে আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগপত্র জমা দেব। এছাড়া ওঁর কাছে ব্যাঙ্কের তরফে যে নোটিশ পাঠানোর কথা তা-ও পাঠানো হবে।
আরও পড়ুন ; স্যালাডে শসা ও টোম্যাটো একসঙ্গে খাচ্ছেন ? শরীরের কী ক্ষতি হতে পারে ?