বিটন চক্রবর্তী, নন্দীগ্রাম: আদ্য়োপান্ত গৃহস্থ জীবন। সাজানো সংসারের গুরুভার কাঁধে। তার মাঝে পড়ে মনের স্বাস্থ্যের দিকে নজর পড়েনি কারও। তাতে আচমকাই ছন্দপতন ঘটে যায় বছর ছয়েক আগে। নিখোঁজ হয়ে যান গুজরাতের গৃহবধূ বাবরধনি বেন। তার পর মাঝের পাঁচ বছর ঝাপসা। তবে শেষ মেশ বাংলা থেকে ‘ঘর ওয়াপসি’ হচ্ছে ওই গৃহবধূর (Gujarat Woman Ghar Wapsi)।


বাংলা থেকে ‘ঘর ওয়াপসি’ হচ্ছে গুজরাতের হারিয়ে যাওয়া গৃহবধূর


গুজরাতের দাহদের বাসিন্দা বাবরধনি বেন। ২০১৭ সালে আচমকা বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। ছাপোষা পরিবারে এমন ঘটনা সচরাচর ঘটে না। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিয়ম মাফিক থানায় ছুটে গিয়েছিলেন পরিবারের লোকজন। নিখোঁজ বলে দায়ের করা হয়েছিল লিখিত অভিযোগ। কিন্তু দৌড়াদৌড়িই সার, বাবরধনির খোঁজ পাননি পরিবারের লোকজন।


তার পর এক দু’মাস বা বছর নয়, কেটে যায় পাঁচ বছর। তার মধ্যেই ঘটে যায় পট পরিবর্তন, গুজরাত থেকে কাট টু বাংলা। ২০২২-এর সেপ্টেম্বর মাসে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রামে (Nandigram News) আচমকা উদয় হন ভবঘুরে এক মহিলা। বলা বাহুল্য, তিনি গুজরাতের নিখোঁজ গৃহবধূ বাবরধনি। তারাচাঁদবাড়ে ইসস্তত ঘুরে-বেড়াতে দেখা যায় তাঁকে।


তার পর গত পাঁচ মাসে হলদি নদী দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। রাস্তা থেকে হলদিয়ার বাসুদেবপুরের সরকারে হোমে ঠাঁই হয় বাবরধনির। পুলিশই উদ্ধার করে হোমে পাঠায়। বোঝা যায় মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। সেই মতো শুরু হয় চিকিৎসা। কখনও কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে বিশেজ্ঞদের দেখানো হয়। কখনও আবার কাউন্সেলিং করে স্বাভাবিক করে তোলার চেষ্টা হয় হোমেই।


আরও পড়ুন: Money Laundering : এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কয়লার টাকা পাচারের চেষ্টা করছিলেন, বালিগঞ্জে অর্থ উদ্ধার নিয়ে বিস্ফোরক দাবি ইডি-র


ফল মিলতে খুব বেশি দেরি হয়নি। সেবা-শুশ্রূষা এবং চিকিৎসায় ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠার লক্ষণ দেখা যায় বাবরধনির মধ্য়ে। তাতেই হালকা কথোপকথনের মাধ্যমে শুরু হয় কথা বের করার পালা। ধীরে ধীরে নাম, ধাম সবই জানান বাবরধনি। তাতেই নন্দীগ্রাম থানার সঙ্গে যোগাযোগ করেন হোম কর্তৃপক্ষ। তাতে নন্দীগ্রাম থানার তরফে যোগাযোগ করা হয় গুজরাতের দাহদ জেলা পুলিশের সঙ্গে।


এর পর দাহদ পুলিশই বাবরধনির পরিবারকে খুঁজে বের করে। কিন্তু খুঁজে বের করলেই হল না, আইনি প্রক্রিয়া মেনে এগনো নিয়ম। সেই মতো প্রথমে ভিডিও কলে দফায় দফায় সারা হয় পুনর্পরিচয়, শনাক্তকরণের পালা। ধীরে ধীরে সহজ হয় কথাবার্তা।  তার পর শুরু হয় বাবরধনিকে নিজের ঘরে, নিজের মানুষদের কাছে ফেরানোর পালা। শেষ মেশ পুলিশের দুই রাজ্যের পুলিশের উপস্থিতিতে বাবরধনিকে তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।


পরিবারের কাছে ফিরতে পেরে যারপরনাই খুশি বাবরবেন। এত বছর পর, আশা যখন ছাড়তে বসেছিলেন সকলে, বাবরধনি ফিরে আসায় আনন্দের রেশ তাঁর পরিবারেও। কিন্তু বাসুদেবপুরের হোমে বিষণ্ণতা নেমে এসেছে। কারণ গত পাঁচ মাসে হোমের অন্য আবাসিকদের কাছের জন হয়ে উঠেছিলেন বাবরধনি। তিনি বাড়ি ফিরছেন শুনে চোখের জল আটকাতে পারেননি কেউ। কিন্তু ঘরের মানুষ ঘরে ফিরে যাচ্ছেন, তাতে মিলছে স্বস্তিও।


মাঝের পাঁচ বছর কোথায় ছিলেন বাবরধনি, সদুত্তর নেই


নন্দীগ্রাম থাবনার আইসি সুমন চৌধুরী জানিয়েছেন, গুজরাতের গৃহবধূকে বাড়ি ফেরানোর কাজে সফল হয়ে তাঁরাও স্বস্তি পাচ্ছেন। সরকারি হোমে বাবরধনির কাউন্সেলিংয়ের দায়িত্বে থাকা পূজা সাহু বলেন, “নন্দীগ্রাম থানার পুলিশ ওঁকে পাঠিয়েছিল। কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে নাম-ধাম জানা যায়। পুলিশ ঠিকানা সম্পর্কে নিশ্চিত হয় প্রথমে। তার পর যোগাযোগ করে বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা হয়।” তবে মাঝের পাঁচ বছর কোথায় ছিলেন বাবরধনি, নন্দীগ্রামেই বা পৌঁছলেন কী করে, সদুত্তর মেলেনি এখনও।