রানা দাস, কেতুগ্রাম: ঘরে ঘরে বিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দিতে বিশেষ ভাবে উদ্যোগী রাজ্য সরকার। 'জলস্বপ্ন' প্রকল্পের আওতায় ঘরে ঘরে বিশুদ্ধ জল পৌঁছে গেলে, সেই গ্রামকে 'স্বজল গ্রাম' ঘোষণা করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। কিন্তু রাজ্যের এই প্রকল্প ঘিরেই এবার বিতর্ক বাধল পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামে। প্রত্যেক ঘরে বিশুদ্ধ জল পৌঁছনের আগেই গ্রামকে 'স্বজল গ্রাম' ঘোষণা করা হয়েছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। (Swajal Gram Row)


পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম ২ নং ব্লকের সীতাহাটি পঞ্চায়েতের শাখাই গ্রামের ঘটনা। শাখাই গ্রামকে 'স্বজল গ্রাম' ঘোষণা করে বোর্ডিং লাগানো হয়েছে। সেই নিয়েই চাপানউতোর শুরু হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, গ্রামের প্রতিটি ঘরে এখনও পর্যন্ত বিশুদ্ধ পানীয় জলের কল বসানো যায়নি। দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করে, শেষ পর্যন্ত ধারদেনা করে অনেকে নিজে থেকেই বাড়িতে কল বসিয়েছেন। সেক্ষেত্রে 'স্বজল গ্রাম' ঘোষণা করে হোর্ডিং লাগানো যুক্তিহীন। (Purba Bardhaman News)


বিষয়টি সামনে আসতেই শোরগোল শুরু হয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে স্থানীয় পঞ্চায়েতের তরফে সাফাই দিয়ে জানানো হয়, জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগ থেকে ওই হোর্ডিং লাগানো হয়েছে। হোর্ডিং লাগানোর আগে পঞ্চায়েতকে কিছু জানানো হয়নি। যদিও ব্লকের জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের আধিকারিকের দাবি, পঞ্চায়েত প্রধানের সম্মতি নিয়ে, তাঁর স্বাক্ষর সংগ্রহের পরই ওই হোর্ডিং লাগানো হয়। হতে পারে জেলা জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগ থেকে হোর্ডিংটি লাগানো হয়েছে।


আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনের দিন বাংলায় ‘সম্প্রীতি মিছিল’, নবান্ন থেকে ঘোষণা মমতার


বিষয়টি নিয়ে কার্যতই দায় ঠেলাঠেলি চলছে। এ নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় সরকারের টাকা নয়ছয় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন জেলা নেতৃত্ব। দলের তরফে বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে গেরুয়া শিবির। জলের সংযোগ প্রত্যেক বাড়িতে পৌঁছয়নি যেখানে, কোন যুক্তিতে হোর্ডিং টাঙানো হল, প্রশ্ন তুলছেন গ্রামের বাসিন্দারাও। 


সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, যে গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে বিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে, সেই গ্রামকে 'স্বজল গ্রাম' হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। প্রত্যেক বাড়িতে বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংযোগ পৌঁছে গিয়েছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব স্থানীয় পঞ্চায়েতের। বাড়ি বাড়ি ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করবেন তাঁরা। তার পর জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগকে বিষয়টি জানাতে হবে তাদের। এর পরই ওই গ্রামকে 'স্বজল গ্রাম' ঘোষণা করা হবে।


স্থানীয়দের দাবি, প্রত্যেক বাড়িতে বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংযোগ তো পৌঁছয়ইনি, এমন কিছু বাড়ি রয়েছে, যেখানে কল বসানো হলেও, জল পড়ে না। বাধ্য হয়ে গাঁটের কড়ি খরচ করে বাড়িতে কল বসাতে হয়েছে অনেককে। সব বাড়িতে যে জলের সংযোগ পৌঁছয়নি তা মেনে নিয়েছে স্থানীয় পঞ্চায়েতও। তাই 'স্বজল গ্রাম' হোর্ডিং দেখে ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।