ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, সন্দীপ সমাদ্দার, পুরুলিয়া: ভাইয়ের খুনে লিপ্ত থাকার অভিযোগে দাদাকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে। ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর (Jhalda Congress Councilor Murder) খুনের নেপথ্যে এ বার পারিবারিক বিবাদেই সিলমোহর দিল পুলিশ। তাদের দাবি, ঘরোয়া বিবাদেই খুন হন ঝালদার কংগ্রেস নেতা তপন কান্দু (Tapan Kandu Murder)। খুনিকে ৭ লক্ষ টাকা দেন তাঁর দাদা নরেন কান্দু। কংগ্রেস কাউন্সিলর হত্যাকাণ্ডে এমনই দাবি করলেন পুরুলিয়ার (Purulia News) পুলিশ সুপার। যদিও তা মানতে নারাজ নিহতের স্ত্রী। ঝালদার আইসিকে ক্লিনচিট দিয়েছেন এসপি। আইসিকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন নিহতের পরিবারের লোকজন।
পারিবারিক বিবাদের তত্ত্ব তুলে ধরছে পুলিশ
তপন খুনের ঘটনায় রবিবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগান। তিনি বলেন, "পারিবারিক বিবাদ ছিল দুই ভাইয়ের মধ্যে। তপন কান্দু বনাম নরেন কান্দু। নরেন কান্দু ৭ লাখ টাকা দিয়েছিল।" পাশাপাশি শুরু থেকেই নিহতের পরিবার যাঁর বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছিল, সেই ঝালদা থানার IC-কে ক্লিনচিট দিলেন খোদ পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, "এখনও পর্যন্ত তদন্তে জানা গেছে ঝালদার আইসি জড়িত নন। ভাইরাল অডিও আলাদা ইস্যু। আমরা তার সত্যতা যাচাই করছি। যদি কিছু পাওয়া যায় তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব।"
যদিও পুলিশের দাবিকে নস্যাত্ করে দিয়েছেন নিহত কংগ্রেস কাউন্সিলরের স্ত্রী। জানিয়েছেন, তদন্তে আস্থা রাখতে পারছে না পরিবার। সিবিআই তদন্তের দাবিতে অনড় তাঁরা। নিহত কাউন্সিলরের স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দু বলেন, "পারিবারিক কোনও তেমন কিছু ছিল না। পুলিশের উপর আস্থা নেই আমাদের। পুলিশের তদন্তে খুশি নই। সিবিআই চাই। আইসিকে গ্রেফতার করলে জানা যাবে। ওঁর ফোন কেন সিজ করা হয়নি।"
শনিবার নিহত তপন কান্দুর দাদা নরেন কান্দু ও আসিক খান নামে ঝালদার এক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃত সুপারি কিলার কলেবর সিংয়ের সঙ্গে সামনা সামনি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় দু’জনকে। পুলিশের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে পারিবারিক অশান্তির কথা উঠে এসেছে। পুলিশ সুপার বলেন, "নরেন কান্দু ভাইয়ের উত্থান সহ্য করতে পারছিলেন না। এটা হতে পারে। এখনও পর্যন্ত আমরা জানতে পেরেছি পারিবারিক বিবাদ।"
পুলিশের উপর ভরসা নেই, সিবিআই চাইছে পরিবার
পুরভোটে ভাইপো তৃণমূল প্রার্থী দীপক কান্দুকে হারিয়ে জয়ী হন কংগ্রেস প্রার্থী তপন কান্দু। দীপককে আগেই গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, ভোটের ফল নিয়ে দাদা নরেনের সঙ্গে বাজি হয় তপনের। পুলিশের এই দাবিও খারিজ করে দিয়েছে পরিবার। নিহত কাউন্সিলরের ভাইপো মিঠুন কান্দু বলেন, "সম্পত্তি সব ভাগ হয়ে গিয়েছে। পারিবারিক সমস্যা থাকলে কোনও এফআইআর থাকত। তা তো কিছু নেই! যদি দু’জনের মধ্যে মিল না থাকে, তাহলে কেন বাজি ধরবে? পুলিশ মিথ্যা বলছে।" ভাইয়ের সঙ্গে বেটিংয়ে প্রসঙ্গ মানতে চাননি ধৃত নরেনও।
এ দিকে, আইসিকে ক্লিনচিট দেওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। যদিও তৃণমূলের দাবি, পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করছে। পুরুলিয়া জেলায় কংগ্রেসের সভাপতি নেপাল মাহাতো বলেন, "পুলিশের এই প্রেস কনফারেন্স আইসি-কে ক্লিনচিট দিতে। ওঁদের পারিবারিক বিবাদের কোনও তথ্য দেখাতে পারবেন এসপি? পারিবারিক বিবাদ বলে চালানো ঠিক নয়। ঘরোয়া হতে পারে না। আমরা আদালতে জানাব। বড় ষড়যন্ত্র আছে।" ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর হত্যাকাণ্ডে সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে হবে শুনানি।