সুকান্ত মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: কর্তব্যরত অবস্থায় চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় তোলপাড় সব মহল। গত ৯ অগাস্ট মৃত্যু হয়েছে আরজি করের নির্যাতিতার। যার মৃত্যুতে প্রতিবাদে সামিল হচ্ছেন তাঁরই সহ নাগরিকরা। যাঁকে কয়েকদিন আগেও কেউ চিনতেন না, সেই তরুণীর নির্মম পরিণতিতে প্রতিবাদের আঁচ পৌঁছে গিয়েছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। এই অবস্থায় নির্যাতিতার মা বলছেন, 'কোটি কোটি মেয়েকে পেয়েছি পাশে, যতদিন না বিচার পাচ্ছি ততদিন যেন পাশে থাকে।'


এক সপ্তাহ আগে এমনই এক শুক্রবার মেয়ের মৃত্যুর খবর এসেছিল তাঁর কাছে। আর সেই মৃত্যুতে তোলপাড় রাজ্য থেকে দেশ। প্রতিবাদের আঁচ পৌঁছে গিয়েছে বিশ্বের কোণায় কোণায়। আরজি করের নিহত চিকিৎসকের পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন কোটি কোটি মানুষ। এদিন এবিপি আনন্দের ঘণ্টাখানেক সঙ্গে সুমন অনুষ্ঠানে সুবিচার পাওয়া পর্যন্ত সবাইকে পাশে থাকার আর্জি জানিয়েছেন নির্যাতিতার মা। 


এবিপি আনন্দ: কেন কলকাতা পুলিশের থেকে আস্থা চলে গেল? 


নির্যাতিতার মা: দেরি হয়ে যাচ্ছিল। ব্যাপারটা আমাদের ভাল লাগছিল না। আমি তো মা। আমি তো সব হারিয়ে ফেলেছি। আজকেই সেই অভিশপ্ত দিন। এমন দিন যেন কোনও মায়ের কাছে না আসে। আমি বলে বোঝাতে পারব না আমার মনের অবস্থা। হাসপাতাল থেকে একজন ফোন করে বলেন আপনারা আসুন আপনার মেয়ে অসুস্থ। তাঁকে বারবার জিজ্ঞেস করি, মেয়ের কী হয়েছে। আমি কি ডাক্তার? আমি বলতে পারি না। আপনারা আসুন। সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে গিয়েছি। তখন তিনি বলছেন, আমি হাসপাতালের সুপার বলছি আপনার মেয়ে আত্মহত্যা করছি। ওখানে (হাসপাতালে) বসিয়ে রেখেছিল। দেখতেই দিচ্ছিল না। পুলিশের পায়ে ধরছি একবার দেখতে দাও। তখন বলছে তদন্ত চলছে। সেদিন খুব হেনস্থা হতে হয়েছে। খুব চাপে রেখেছিল আমাদের। মেয়ের গাড়ি ভাঙার চেষ্টা করছিল। পুলিশ তাড়াহুড়ো করে বের দিল। আমি তখন নেমে বলেছি আমার মেয়ে চলে গিয়েছে। আমার মেয়ের প্রিয় জিনিসটা ভাঙবেন না। আমি সব হারিয়ে ফেললাম। 


এবিপি আনন্দ: শুক্রবার প্রথম ফোনটা কখন এসেছিল? 


নির্যাতিতার মা: প্রথম ফোন আসে সকাল ১০টা ৫৩ মিনিটে। একটা মোবাইল থেকেই ফোনটা এসেছিল। হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার বলল। সিজার লিস্ট যখন হয়, তখন ওখানে বসেছিলাম। পুলিশ কেস ঘোরানোর চেষ্টা করছিল। আমার মেয়ের ব্যাগ থেকে কয়েকটা রিপোর্ট বের করে দেখান। বলেন আপনার মেয়ে তো অসুস্থ। এত ওষুধ খেত, এত রিপোর্ট। গত সপ্তাহে এই রিপোর্টগুলো করিয়েছিল। আর ওপিডি-তে ডিউটির সময় এমআর ওকে এই ওষুধগুলো দিয়েছিলেন। তারপর আর পারেনি। 


এবিপি আনন্দ: হাসপাতালে কতক্ষণ বসিয়ে রাখা হল? 


নির্যাতিতার মা: আমরা সাড়ে ১২টা নাগাদ পৌঁছে গিয়েছিলাম। আমাদের ৩টে নাগাদ দেখতে দেওয়া হয়েছে। তারমধ্যে বসিয়ে রেখেছিল চেস্ট মেডিসিন বিভাগে। এমনকী ওই সময় অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার বা বিভাগীয় প্রধান কেউ এসে কোনও কথা বলেনি। 


এবিপি আনন্দ: সিবিআই তদন্ত কী আশা রাখছেন?


নির্যাতিতার মা: আমরা আশা রাখছি, আমার মেয়েটা তো চলেই গেছে। অন্তত দোষীরা যেন সাজা পায়। কোনও মা যেন আমার মতো সন্তানহারা না হয়। 


এবিপি আনন্দ: এই ঘটনায় উত্তাল রাজ্য রাজনীতি, চিকিৎসকরা কর্মবিরতি করছেন, রাস্তায় নামছেন মহিলারা, কীভাবে দেখছেন? 


নির্যাতিতার মা: দেশবাসীকে অন্তরের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সেদিনও জানিয়েছি। একটা মেয়েকে হারিয়ে কোটি কোটি মেয়েকে পাশে পেয়েছি। যতদিন না বিচার পাচ্ছি তাঁরা যেন এভাবেই আমার পাশে থাকে। 


এবিপি আনন্দ: হাসপাতাল ভাঙচুর কি টার্গেট করে করা হল? 


নির্যাতিতার মা: আমার মনে হয়েছে এটা প্রমাণ লোপাটের জন্য করা হয়েছে। 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে। 


আরও পড়ুন: R G Kar Update: চিকিৎসক ধর্ষণ-খুনে তোলপাড়, পথে তিন বিশ্ববিদ্য়ালয়ের পড়ুয়ারা, যাদবপুরে বন্ধ ক্লাস