ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা : আসফাকুল্লা নাইয়ার পরে এবার স্ক্যানারে কিঞ্জল নন্দ ! আর জি কর-আন্দোলনের অন্যতম মুখ চিকিৎসক কিঞ্জল নন্দকে নিয়ে তথ্য জানতে চেয়ে অধ্যক্ষকে চিঠি পাঠাল রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল। জানতে চাওয়া হয়েছে, 'কতদিন ছুটি নিয়েছেন কিঞ্জল ? নিয়ম মেনে নিয়েছিলেন ? আর জি কর মেডিক্যালে PGT হিসেবে কত স্টাইপেন্ড পান তিনি ? বিজ্ঞাপন আর সিনেমায় অভিনয় করতে অনুমতি নিয়েছিলেন ? বিভাগ, কলেজ, স্বাস্থ্য দফতর থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছিল ? PGT হিসেবে ৮০ শতাংশ উপস্থিতি আছে তাঁর ?' আর জি কর মেডিক্যালের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইল মেডিক্যাল কাউন্সিল। পাশাপাশি কিঞ্জল নন্দকে নিয়ে তথ্য জানতে চেয়ে নবান্ন-স্বাস্থ্য সচিবকেও ইমেল পাঠিয়েছে কাউন্সিল।
এ প্রসঙ্গে আন্দোলনকারী অপর এক জুনিয়র চিকিৎসক অনিকেত মাহাতো বলেন, "৯ অগাস্টের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাঁরা আন্দোলন করেছিলেন, সেই আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সম্পর্কে নানা বক্তব্য-নানা প্রশ্ন উঠে আসছে। কিন্তু যে প্রশ্নটা উঠে আসছে না সেটা হচ্ছে, আপনারা বলুন, এতদিন ধরে আর জি করে যে দুর্বৃত্তায়ন চলত, থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার কী অবস্থান নিল ? রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল কী অবস্থান নিল ? কলেজ কাউন্সিল তো তাদের সরাসরি সাসপেন্ড করেছিল। সেই সাসপেনশনের পরিপ্রেক্ষিতে আপনার কী অবস্থান নিলেন ? নবান্ন সভাঘরের মিটিংয়ের দিকে নজর রাখলে দেখা যাবে, সেদিন মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি থ্রেট কালচারকে সমর্থন করলেন। তাহলে তাঁরা থ্রেট কালচারের পক্ষে এবং আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা হলেন তাঁদের দু'চোখের বালি। আসফাকুল্লা নাইয়া যেভাবে লড়াই করেছেন, কিঞ্জল নন্দও সেভাবেই লড়াই করেছেন। আমাদের কাছে লুকানোর কিছু নেই। আমরা সাধারণ মানুষ, সংবাদ মাধ্যম...সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এই লড়াই করেছি। যাবতীয় যা কিছু আছে তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। নতুন করে কিছু বলার নেই। আন্দোলনকে দমানোর চেষ্টা। একের পর এক অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু আর জি কর আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র, সেই জায়গা থেকে আর জি করের চিকিৎসকদের সঙ্গে একের পর এক এই ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। কিন্তু, জুনিয়র ডাক্তাররা, সরকারের এ ধরনের দমন-পীড়ন নীতির সমপূর্ণ বিরোধিতা করবেন। প্রতিবাদ করে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।"
সম্প্রতি আসফাকুল্লা নাইয়ার বিরুদ্ধে নিয়ম ভেঙে, ভুল পরিচয় দিয়ে, প্রাইভেট প্র্যাকটিসের অভিযোগ ওঠে। সিঙ্গুরের একটি হেলথ সেন্টারের একটি পোস্টারে ENT বিভাগের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি আসফাকুল্লা নাইয়াকে ENT বিশেষজ্ঞ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। সেই ছবি সামনে আসতে, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের কাছে আসফাকুল্লা নাইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানায় ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন। তারপরই তড়িঘড়ি ৭ দিনের মধ্যে এর ব্যখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠায় রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল। এরপর আচমকাই তাঁর কাকদ্বীপের বাড়িতে পৌঁছে যায় পুলিশ! তাঁকে না পাওয়ায়, পরের দিনই জুনিয়র চিকিৎসক আসফাকুল্লাকে ডেকে পাঠায় সল্টলেকের ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানা। পাল্টা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন জুনিয়র চিকিৎসক আসফাকুল্লা। অভিযোগ ওঠে, আর জি করকাণ্ডে (R G Kar News) পথে নামাতেই প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠেছে রাজ্য় সরকার।
চিকিৎসক বিরুদ্ধে FIR নিয়ে দিনকয়েক আগে হাইকোর্টে কার্যত ভর্ৎসিত হয় পুলিশ । তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। ৬ সপ্তাহের জন্য তদন্তে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। FIR বিতর্কে আদালতে জোর ধাক্কা খায় পুলিশ। এর পাশাপাশি ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানার FIR নিয়ে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের প্রশ্ন, 'একপাতার অভিযোগেই তদন্ত শুরু হয়ে গেল, প্রমাণ কোথায় ? তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করে তদন্ত শুরু করলে কি ক্ষতি হত ?'