কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, ময়ূখঠাকুর চক্রবর্তী, উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা : তৃণমূলপন্থী কর্মচারী সংগঠনের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর অভিযোগ করেছেন রাজ্য়পাল (Bengal Governor) নিযুক্ত রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের (Rabindra Bharati University) অন্তর্বর্তী উপাচার্য। তিনি বলেন, ভয় পাচ্ছি, বাড়ি থেকে কাজ করতে হচ্ছে। যেতে পারছি না বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই ঘটনায় ঘটনায় অনেকেরই স্মৃতিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্য়ালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য সন্তোষ ভট্টাচার্যের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা। আটের দশকের সেই সময়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সন্তোষ ভট্টাচার্যকে চরম অসম্মান করা হয়েছিল। সেদিন অভিযোগ ছিল সিপিএমের বিরুদ্ধে। 


আটের দশক।  ক্ষমতায় তখন বামেরা। মুখ্য়মন্ত্রী জ্য়োতি বসু। (Jyoti Basu) রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিটি রোড ক্যাম্পাসের থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগকে কেন্দ্র করে  চরম বিতর্ক বাধে। বাম সরকারের সুপারিশ উপেক্ষা করে সন্তোষ ভট্টাচার্যকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করেছিলেন তৎকালীন আচার্য তথা রাজ্যপাল অনন্তপ্রসাদ শর্মা।  যার ফলে দীর্ঘদিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাস অচল করে রেখেছিল সিপিএম প্রভাবিত কর্মচারী সমিতি ৷


বাধ্য হয়ে সন্তোষ ভট্টাচার্যকে মাঝে-মধ্যে বাড়িতে বসেই ফাইল দেখতে হত ৷ পরিস্থিতির চাপে দু’একবার সিন্ডিকেটের বৈঠকও তাঁকে ডাকতে হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে ৷  তা সত্বেও নিজের দায়িত্বে অনড় ছিলেন তিনি। আর এখন তৃণমূল জমানায় তৃণমূলপন্থী কর্মচারী ইউনিয়নের চরম অসহযোগিতার অভিযোগ করছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য।


রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, ' আমি যখন সন্তোষবাবু ভিসি ছিলেন তখন ছিলাম না, আমি ওকে ডিন হিসাবে পেয়েছি। উনি বড় মাপের মানুষ, পণ্ডিত মানুষ। যা ভাল ভেবেছেন করেছেন। এই অসভ্যতা অসহযোগিতা উপাচার্যের সঙ্গে করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কী মঙ্গল হবে? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কী লাভ হয়েছে, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কী লাভ হচ্ছে?' 


কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শান্তা দত্ত দে জানান, ' আমি তখন ছোট, তাঁকেও চরম হেনস্থার শিকার হতে হয়েছিল। আজকে রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্যকেও হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। আমি উপাচার্য হিসাবে এটা মেনে নেই না, শাসক পাল্টেছে, কিন্তু তার মনোভাব বদলাল না। ' 


যদিও তৎকালীন শাসকের রোষে পড়া সত্ত্বেও, উপাচার্য পদ থেকে ইস্তফা দেননি সন্তোষ ভট্টাচার্য। তবে, তাঁর গভীর অভিমান হয়েছিল। সন্তোষ ভট্টাচার্যের মৃত্যুর পর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্জি সত্ত্বেও মৃতদেহ নিয়ে যেতে দেওয়া হয়নি কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে৷ কারণ তিনি পণ করেছিলেন, আর বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠ মাড়াবেন না৷