সুদীপ্ত আচার্য, কলকাতা: শুকিয়ে যাচ্ছে রবীন্দ্র সরোবর (Rabindra Sarobar)! প্রাতঃভ্রমণ বা সান্ধ্যভ্রমণে গিয়ে যারা রোজ এই শতাব্দীপ্রাচীন সরোবরকে দেখেন তাঁরা বলছেন, একটু একটু করে জল কমছে সরোবরের। বিশেষজ্ঞদের দাবি, উপায় এখন, ড্রেজিং (Dredging) বা পলি নিষ্কাশন করা। 


কী পরিস্থিতি?
আমার শহরে শুকিয়ে যাচ্ছে জল| আস্তে আস্তে লুকিয়ে যাচ্ছে জল| অন্য কোথাও চল...| পরিচিত বাংলা গানের লিরিকস...কিন্তু, আমার শহরে যেন সত্য়ি হয়ে উঠছে এই কথাগুলোই! শুকিয়ে যাচ্ছে রবীন্দ্র সরোবর! 
জাতীয় এই সরোবরের বয়স ১০৩ বছর। ইংরেজ আমলে খনন করা হয়েছিল এর কৃত্রিম জলাশয়। ১৯২ একর রবীন্দ্র সরোবরের ৯০ একর জুড়ে জলাশয়। প্রাতঃভ্রমণ বা সান্ধ্যভ্রমণে গিয়ে যারা একে রোজ দেখেন তাঁরা বলছেন, একটু একটু করে জল কমছে সরোবরের। বাঁধানো পাড় থেকে ২০ ফুট অবধি ভাঙা, যেখানে জল, সেখানেও গভীরতা কম। নোংরা জল, শ্যাওলা, এই সিঁড়ি আগে দেখা যেত না। কিন্তু, কেন কমছে জল? কারণ কি শুধুই তীব্র গরম? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, না। নেপথ্য়ে রয়েছে শতাব্দীপ্রাচীন এই সরোবরের সংস্কারের অভাব। বছরের পর বছর পলি না সরানোয়, গভীরতা কমে গেছে সরোবরের। কমে গেছে জলধারণ ক্ষমতা। এখন কি আর কোনও উপায় নেই সরোবরকে বাঁচানোর? বিশ্বের নানা প্রান্তে সরোবর সংস্কারের কাজ করেছেন পরিবেশ বিজ্ঞানী শঙ্কর চট্টোপাধ্য়ায়। তিনি বলছেন, কৃত্রিম এই জলাশয়ের উৎস বৃষ্টি ও মাটির নীচের জল। বিশেষজ্ঞের দাবি, কঠিন পলি পড়ে যাওয়ায় মাটির নীচের জল উপরে উঠতে পারছে না। এখন উপায়, ড্রেজিং করা বা পলি নিষ্কাশন।  ২০১৭ সালে জাতীয় পরিবেশ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল রবীন্দ্র সরোবরের পলি তুলতে হবে। তখন কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বলে ড্রেজিং করলে রবীন্দ্র সরোবর সমপূর্ণ শুকিয়ে যেতে পারে। তখন পরিবেশ আদালত বলে ৩ ফুট ড্রেজিং করতে হবে। কিন্তু, কাজ হয়নি। পাস দিয়ে সামান্য মাটি কাটা হয়েছে। তাও, বিজ্ঞানসম্মতভাবে নয়। কংক্রিটের শহরে রবীন্দ্র সরোবর যেন এক টুকরো ‘ওয়েসিস’। কলকাতার ফুসফুস। তার সঙ্কট এখন কাটবে কীভাবে? প্রসঙ্গত, রোয়িং প্রশিক্ষণ চালু হতেই রবীন্দ্র সরোবরে একটি দুর্ঘটনা ঘিরে হইচই পড়ে যায়। উল্টে যায় রোয়িং বোট। বোটে ছিলেন এক সিনিয়র রোয়ার। উদ্ধারকারী বোট থাকায় দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করা হয়। গত বছর, ২১ মের ঘটনা।  প্রবল ঝড়ে রোয়িং বোট উল্টে জলে ডুবে মৃত্যু হয় দুই কিশোরের।


আরও পড়ুন:কোথা থেকে শুরু বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন? কেনই বা গুরুত্বপূর্ণ এই দিন?