সুনীত হালদার, হাওড়া : অভিনব কায়দায় রেল যাত্রীদের প্রতারণা। দেশ জুড়ে রেলের নকল ই টিকিট বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করছিল এক যুবক! অবশেষে রেল পুলিশের হাতে গ্রেফতার ওই যুবক। 


২৭ বছরেই জালিয়াতির জাল সারা দেশে 
চটকদার জীবন। তাক লাগানো জীবনযাত্রা। কখনও ট্রেনে , আবার কখনও বিমানে  চড়ে  ঘুরে বেড়াত সে হিল্লি-দিল্লি। বড় শহরে গিয়ে থাকত সে মাল্টিস্টারার হোটেলে ! এভাবে যে তার সব কীর্তি ফাঁস হয়ে যাবে ভাবেনি। কোচবিহারের দিনহাটার যুবক সুনীল বর্মনের বয়স মাত্র ২৭। এর মধ্যেই জালিয়াতির ফাঁদে কতজনকে যে ফেলেছে সে, ইয়ত্তা নেই। 

বড় বড় শহরের রেল স্টেশনগুলিতে ছিল সুনীলের  জাল টিকিটের কারবার । মঙ্গলবার সন্ধেয় শালিমার স্টেশনে এরকম  জাল টিকিট দূরপাল্লার ট্রেনের এক যাত্রীকে বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়ে সে। এন্টি ফ্রড টিমের চিফ কমার্সিয়াল টিকিট ইন্সপেক্টর রোনাল্ড ব্রেগস ধরে ফেলেন সুনীলকে। পরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখে জিআরপি র হাতে তুলে দেওয়া হয়। জিআরপি তাকে গ্রেফতার করে ‌।

আরও পড়ুন :


 শোনা যাবে না এখন পাহাড়ের কোলে কু-ঝিকঝিক, টয় ট্রেন নিয়ে মন খারাপের খবর


এই প্রথম নয়। সুনীল পুলিশকে জানিয়েছেন, এর আগেও এই ধরনের কাজের জন্য বেঙ্গালুরুতে ধরা পড়ে জেল খেটেছিল সে। কিছুদিন আগে সেখান থেকে চলে আসেন হাওড়া স্টেশনে। হাওড়া স্টেশনের কাছে দূরপাল্লার ট্রেনের জাল টিকিট বিক্রি করতে গিয়ে জিআরপির হাতে ধরা পড়েন। পরে অবশ্য রেল পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। 

কীভাবে রেল যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করতেন সুনীল ?
তিনি জানান, রেলের কাউন্টার থেকে যখন বলে দেওয়া হয় যে টিকিট নেই তখন সে সেই সব ট্রেনের নকল কনফার্ম ই-টিকিট বিক্রি করতেন। মূলত ট্রেনের এসি টু টায়ার এবং থ্রি টায়ারের বেশি দামের জাল টিকিট বিক্রি করতেন। এর জন্য তার কাছে দু তিনটে মোবাইল ফোন ছিল। শেষ মুহূর্তে যাত্রীরা যখন স্টেশনের কাউন্টারের সামনে টিকিট কিনতে যেতেন তখন সুনীল সেখানে ওত পেতে থাকতেন। যাত্রীদের আলাদা করে ডেকে তাদের কনফার্ম টিকিটের নামে নকল পিএনআর এ জাল ই টিকিট মোবাইলে তৈরি করে বিক্রি করে দিতেন।


এরপর তাদের থেকে টাকা হাতিয়ে চম্পট দিতেন। এই ধরনের অপারেশন সে আগে শিয়ালদা, চেন্নাই , দিল্লি,  মুম্বাই সহ বিভিন্ন রেল স্টেশনে করেছেন বলে নিজেই তিনি ক্যামেরার সামনে স্বীকার করেন। একেবারে সাদামাটা চেহারার সুনীল ক্লাস টেন অব্দি পড়াশোনা করেছেন। বাড়িতে বাবা-মা কেউ নেই। একাই সে সারা ভারত জুড়ে ব্যবসা ফেলেছিলেন। মঙ্গলবার সকালে তিনি শালিমার স্টেশনে আসেন। ওই স্টেশনে যখন এক যাত্রীকে কাউন্টার থেকে বলে দেওয়া হয় যে কোন টিকিট নেই তখন সুনীল তাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে সেই ট্রেনেরই আসল টিকিটের  মত দেখতে একটি ই টিকিট বিক্রি করেন। তখন ওই রেল যাত্রী টিকিট কাউন্টারে এসে চেঁচামেচি করেন যে, কাউন্টার থেকে টিকিট দেওয়া হচ্ছে না অথচ বাইরে থেকে অনলাইনে সেই ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। যাত্রীর কথা শুনে প্রথমে অবাক হন রেল কর্মীরা। তারপর সেই যাত্রীকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে সুনীলকে হাতেনাতে ধরে শালিমার স্টেশনে কর্তব্যরত টিকিট পরিক্ষক পূর্ণেন্দু সিংহ।


পূর্ণেন্দু  খবর দেন এন্টি ফ্রড টিমের চিফ কমার্সিয়াল টিকিট ইন্সপেক্টর রোনাল্ড ব্রেগসকে। সুনীলের কাছ থেকে দু তিনটে মোবাইল ফোন এবং কিছু জাল টিকিট  উদ্ধার হয়েছে। তার পাঁচটি ব্যাঙ্ক একাউন্টের হদিশ মিলেছে।