পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া : উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের নাবালিকার মৃত্যু নিয়ে ক্ষোভের আঁচ পড়ল বাঁকুড়ার ছাতনায়। নাবালিকা ও রাজবংশী যুবক মৃত্যুঞ্জয় বর্মনের মৃত্যুর বিচার চেয়ে তৃণমূল নেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় গর্জে উঠলেন এক রাজবংশী মহিলা।
শুক্রবার ছাতনার ঝাঁটিপাহাড়িতে সভা করছিলেন রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তিকা। সেই সভাতেই কালিয়াগঞ্জের নাবালিকা ও রাজবংশী যুবক মৃত্যুঞ্জয় বর্মনের মৃত্যুর বিচার চান সঙ্ঘমিত্রা অধিকারী নামে এক রাজবংশী মহিলা। দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়ে যান সায়ন্তিকা। বিষয়টি বিচারাধীন বলে দায় এড়ান তিনি। সায়ন্তিকার মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছিলাম, মন্তব্য রাজবংশী মহিলার।
নাবালিকা খুন মামলার প্রেক্ষাপট
২১ এপ্রিল, নিখোঁজ হওয়ার পরের দিন, কালিয়াগঞ্জে কিশোরীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এরপরই, ক্ষোভে ফেটে পড়েন মৃতের আত্মীয় এবং স্থানীয় বাসিন্দারা। মৃতদেহ নিয়ে রাস্তায় বিক্ষোভ-অবরোধ করেন তারা। মাস কয়েক আগে নাবালিকাকে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে, দোষীদের শাস্তির দাবিতে দফায় দফায় উত্তাল হয় কালিয়াগঞ্জ। কালিয়াগঞ্জ থানা চত্বরে আগুন লাগিয়ে তাণ্ডব চালানো হয়। আক্রান্ত হয় পুলিশও। মৃতদেহ টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে বিতর্কে জড়ায় পুলিশ। থানায় ভাঙচুর-আগুন...পুলিশকে মাটিতে ফেলে মারধর করা হয়। পাশাপাশি, মৃতদেহের অমর্যাদার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার জল বহুদূর গড়ায় । কালিয়াগঞ্জ কাণ্ডে উত্তাল হয় বঙ্গ রাজনীতি। কালিয়াগঞ্জের ঘটনাকে হাতিয়ার করে, আইনশৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগে পথে নামে বিজেপি। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টের উল্লেখ করে, নাবালিকার মৃত্যুর নেপথ্যে বিষক্রিয়া বলে দাবি করেন রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার সুপার। সিবিআই তদন্ত চেয়ে এর আগে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় নাবালিকার পরিবার। গত ১১ মে কালিয়াগঞ্জকাণ্ডের তদন্তে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা CBI-এর প্রাক্তন অ্য়াডিশনাল ডিরেক্টর উপেন বিশ্বাস, রাজ্য় পুলিশের প্রাক্তন IG পঙ্কজ দত্ত, এবং কলকাতা পুলিশের স্পেশাল CP 1 (ওয়ান) দময়ন্তী সেনকে নিয়ে ৩ জনের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম তৈরি করেন। গত ১৪ জুন মামলায় সিট গঠনের নির্দেশে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
রাজবংশী যুবক মৃত্যুঞ্জয় বর্মনের মৃত্যুর প্রেক্ষাপট
তার মধ্যেই গত ২৭ এপ্রিল পুলিশের গুলিতে রাজবংশী যুবক মৃত্যুঞ্জয় বর্মনের মৃত্যুকে ঘিরে আরও তেতে ওঠে এলাকা। প্রথম থেকেই এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবিতে সরব হয়েছিলেন মৃতের স্ত্রী। কিন্তু, তদন্ত ভার হাতে নেয় রাজ্য় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা সিআইডি। নিহত মৃত্য়ুঞ্জয় বর্মন, বিজেপির পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যের খুড়তুতো ভাই। যদিও নিহত যুবককে নিজেদের কর্মী বলেই দাবি করে বিজেপি। পুলিশ গুলি চালিয়ে ঠিক করেনি, মন্তব্য করে বিতর্ক আরও উস্কে দিয়েছিলেন তৃণমূলের পঞ্চায়েত উপপ্রধান।