সুনীত হালদার, হাওড়া: করোনা পরবর্তী সময়ে বদলেছে জীবনযাত্রা। একসময় যে কারখানা থেকে রথের দড়ি তৈরি হত, সেই কারখানা থেকে এখন দড়ি যাওয়া বন্ধ। তাই রথের (Rath Yatra 2025) আগের সেই ব্যস্ততা আর দেখা যায় না হাওড়ার সাঁকরাইলের কারখানায়। 

মন খারাপ বাংলার শ্রমিকদের: ফি বছর পুরীর রথযাত্রায় জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার রথ টানতে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় করেন। রথের দড়িতে একবার স্পর্শ করার জন্য ভক্তদের মধ্যে হুড়োহুড়ি লেগে যায়। আর সেই দড়িই তৈরি হত সাঁকরাইলের আলমপুরের একটি বেসরকারি কারখানায়। যদিও করোনার পর এই কারখানা থেকে পুরীতে দড়ি যাওয়া বন্ধ রয়েছে। 

পুরীর রথের জন্য লাগত ২২০ মিটার পাটের দড়ি। সেই দড়ি সাঁকরাইলের আলমপুরের একটি কারখানায় তৈরি হত। রথযাত্রার সপ্তাহ তিনেক আগে এজেন্সি মারফত ওই দড়ি তৈরির অর্ডার আসত কারখানায়। এই কারখানার দক্ষ শ্রমিকরা বিশেষ মেশিনে দু-তিন দিনের মধ্যেই দড়ি তৈরির কাজ শেষ করে ফেলতেন। তারপর লরিতে করে সেই দড়ি পৌঁছে যেত পুরীর জগন্নাথ ধামে। কাজ চলাকালীন রথের দড়ির জন্য আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হত। গোটা কারখানায় হৈ হৈ লেগে থাকত। এমনকী স্থানীয় বাসিন্দারাও কারখানায় উঁকি মেরে রথের দড়ি দেখে যেতেন। এখানকার কর্মচারীরা জানিয়েছেন শুধু পুরী নয় এখান থেকেই দড়ি যেত তিরুপতি মন্দির এবং রাজ্যের বড় বড় রথ যাত্রায়। কারখানার ম্যানেজার আব্দুল হালিম জানিয়েছেন, "পুরীর রথে ২২০ মিটার মোটা দড়ি লাগত। অর্ডার পাওয়ার দু তিন দিনের মধ্যেই কাজ শেষ করে ফেলতাম। তারপর লরিতে করে পাঠিয়ে দেওয়া হত পুরীতে।'' তিনি আরও বলেন একটা সময় এই বড় কারখানায় প্রায় ৫০০ লোক কাজ করতেন। রাতদিন ব্যস্ত থাকতেন শ্রমিকরা। কিন্তু করোনার পর থেকে দড়ির চাহিদা কমে যাওয়ায় অধিকাংশ মেশিন বসে গেছে। আর কাজ হয় না। বর্তমানে কারখানায় মাত্র ৫০ জন কর্মী আছেন। অর্ডার অনুযায়ী উৎপাদন হয়।

করোনা পরিস্থিতির অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। পুরনো ছন্দে ফিরেছে জনজীবনও। মহসমারোহে আয়োজিত হচ্ছে পুরীর রথও। রথের দড়িতে টানা নিয়ে ভক্তদের মধ্যে এক ধর্মীয় আবেগ থাকে। সেই কারণেই ভক্তরা দড়িকে একবার স্পর্শ করতে চায় অথবা ধরতে চায়। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এই প্রথা। তাই আলমপুরের কারখানায় পুরীর রথের দড়ি তৈরীর কাজ বন্ধে মন খারাপ শ্রমিকদের।