পার্থপ্রতিম ঘোষ, কলকাতা: নদিয়ার (Nadia) তিনটে থানায়, ED-র হাতে ধৃত বাকিবুর রহমানের সংস্থার বিরুদ্ধে, চার-চারটে FIR দায়ের করেছিল, রাজ্য় পুলিশ। কিন্তু তা সত্ত্বেও তদন্ত এগোয়নি। এখানেই প্রশ্ন উঠছে রাজ্য পুলিশ যদি তখনই সক্রিয় হত, তাহলে কি আগেই এই চক্র বন্ধ করা যেত না?
আগেই দুর্নীতির পর্দাফাঁস: রেশন বণ্টনে দুর্নীতির অভিযোগে ED-র তদন্ত এবং প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেফতারি নিয়ে এখন রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় হচ্ছে। প্রায় ৩ বছর আগে, রাজ্য পুলিশের তদন্তেই কার্যত পর্দাফাঁস হয়েছিল রেশন বণ্টনে দুর্নীতির। নদিয়া জেলা থেকেই চার চারটে FIR হয়েছিল।উদ্ধার হয়েছিল হাজার হাজার কেজি আটা। নাম উঠে এসেছিল বাকিবুর রহমানের। খোঁজ মিলেছিল তাঁর রাইস মিলের।
২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি, কোতোয়ালি থানা এলাকায় প্রদীপ কুমার দে নাম এক ব্যক্তির দোকান থেকে উদ্ধার হয় প্রচুর রেশনের আটা। স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করে কোতোয়ালি থানার পুলিশ। অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করা হয়। তখনই সামনে এসেছিল নদিয়ার NPG রাইস মিলের নাম। যার মালিক বাকিবুর রহমান। এখন যাকে ED-র গ্রেফতার করা নিয়ে নিয়ে তোলপাড় চলছে। অভিযুক্ত প্রদীপকুমার দে-কে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, কল্যাণ সাধুখাঁ নামে এক ব্যবসায়ীর থেকে তিনি এই আটাগুলো কিনেছিলেন।এরপর কোতোয়ালি থানার পুলিশ এই কল্যাণের খোঁজ শুরু করে। ২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি, এই কল্যাণের বাড়ি সংলগ্ন গোডাউন থেকে, ৭৬২ কেজি রেশনের আটা বাজেয়াপ্ত করা হয়। ED-র দাবি সেই সময় কল্যাণের কোনও খোঁজ পায়নি পুলিশ।
এরপর, ED-র আধিকারিকরা ২০২৩ সালে কল্যাণের বাড়িতে হানা দেন। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তখনও রেশনের আটা বাইরে বিক্রির কারবার চলছে। সেই আটা বাজেয়াপ্ত করা হয়। এবার, সেই কল্যাণেরই খোঁজ পাওয়া গেল। কোতোয়ালি থানায় ২০২১ সালের ৬ জুলাই আরও একটি FIR হয়। গ্রেফতার করা হয় বিশ্বনাথ প্রামাণিক নামে এক ব্যবসায়ীকে। তার বাড়ি থেকেও উদ্ধার হয়েছিল ১৯০ কেজি রেশনের আটা। তাতে ছিল, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ফুড অ্যান্ড সাল্পাই ডিপার্টমেন্টের স্টিকার। রেশন বণ্টনে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ প্রামাণিক জানিয়েছেন, “১৮-১৯ টাকায় কিনতাম। ২১-২২ টাকায় বিক্রি করতাম। পার্টি নিয়ে এসে দিত আমাদের, ডিলাররা তোলে, ওরাই এসে দিত। আমার কাছ থেকে ১৯০ কেজি পেয়েছিল। আমি ধরা পড়ি। তারপর বন্ধ করে দেই। কী স্ট্যাম্প থাকত, তা আমি জানি না।।
এখানেও, চলে আসে বাকিবুরের NPG রাইস মিলের নাম। কিন্তু, এতকিছুর পরও বাকিবুর রহমানের বিরুদ্ধে সেরকম কোনও পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ। আর এখন ED-র তদন্তে কেঁচো খুঁড়তে বের হয় কেউটে। সামনে আসে বাকিবুরের সাম্রাজ্য। যোগ মেলে মন্ত্রীর।তবে, এখানেই শেষ নয়, রেশন বণ্টনে দুর্নীতির অভিযোগে রাজ্য পুলিশ আরও ২টো FIR করেছিল।একটি ধুবুলিয়া থানায় এবং আরেকটি নবদ্বীপ থানায়।
এখানেই প্রশ্ন উঠছে যে, রাজ্য পুলিশ যদি তখনই সক্রিয় হত, তাহলে কি আগেই এই চক্র বন্ধ করা যেত না? নিয়ম অনুযায়ী, FCI গোডাউন থেকে গম আসে মিলের কাছে।তারপর, সেখানে আটা তৈরি হওয়ার পর তা চলে যায় ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে।এরপর, ডিলারের হাত ঘুরে বিনামূল্যের আটার সেই প্যাকেটগুলো যাবে সাধারণ মানুষের কাছে।কিন্তু অভিযোগ যে বাস্তবে, FCI গোডাউন থেকে গম গেছে মিলে। সেখান থেকে আটা তৈরি হয়ে, তা বিভিন্ন হাত ঘুরে চলে গেছে খোলা বাজারে।এই অবস্থায়, প্রশ্ন উঠছে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করলেও, কে ধামাচাপা দিয়েছিল? কেন দিয়েছিল? কার হাত?
আরও পড়ুন: Jhargram News: রাস্তার পাশে 'রেশনের' নষ্ট হয়ে যাওয়া ছোলার বস্তা? শুরু রাজনৈতিক তরজা