প্রকাশ সিনহা, কলকাতা: রেশন বণ্টন (Ration Scam) দুর্নীতি মামলায় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের পর ED-র হাতে ফের গ্রেফতার আরও এক তৃণমূল নেতা। CGO কমপ্লেক্সে প্রায় ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর দেগঙ্গার তৃণমূল ব্লক সভাপতি আনিসুর রহমান গ্রেফতার। গ্রেফতার করা হয়েছে আনিসুরের দাদা, চালকল ব্যবসায়ী আলিফ নুরকেও।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ ED-র তলবে CGO-তে হাজিরা দিয়েছিলেন দুই ভাই। ED সূত্রে দাবি, আলিফ নুরের চালকল রেশন বণ্টন দুর্নীতিতে ব্যবহারের যথেষ্ট প্রমাণ মিলেছে। আনিসুর ও তাঁর দাদা আলিফকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ। ধৃত দুই ভাইয়ের মেডিক্যাল পরীক্ষা হয়েছে জোকা ESI-তে। স্বাস্থ্য়পরীক্ষার পর আদালতে আনা হয়েছে আনিসুর-আলিফকে।
কী কী অভিযোগ?
অভিযোগ উঠেছে ৪টি রাইস মিলকে সামনে রেখে ৪৫ কোটি টাকার গরমিল ধরা পড়েছে। মোট ৪৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। আনিসুর, আলিফের অ্যাকাউন্টে সাড়ে ৬ কোটি টাকা মিলেছে, খবর ED সূত্রে। তালিকায় ভুয়ো কৃষকের নাম তুলে ধান কেনাবেচার অভিযোগ রয়েছে। নিজেদেরই চালকল শ্রমিকদের কৃষক দেখিয়ে ধান বিক্রির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে এদের বিরুদ্ধে। ইডির দাবি, সেই দুর্নীতির টাকা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সংস্থার অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছিল। ED সূত্রে দাবি, চারটি চালকলের মালিক আনিসুর ও জ্যোতিপ্রিয়-ঘনিষ্ঠ আলিফ। ২টি চালকলে তাঁরা ডিরেক্টর, ২টিতে তাঁরা অংশীদার, খবর সূত্রের। ED সূত্রে দাবি, দুই ভাইয়ের চালকলে তল্লাশিতে যে যে নথি পাওয়া গিয়েছে। সেখানে দেখা গিয়েছে মেলা নথিতে দেখা গিয়েছে অস্তিত্বহীন কৃষকদের নাম।
নিজেদের চালকলের কর্মীদের কৃষক সাজিয়ে, তাঁদের নামে ধান বিক্রির হিসাব নথিভুক্ত করা হয়েছে বলে দাবি ED-র। এভাবেই রেশনের ধান বিক্রির নামে টাকা নয়ছয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের। অভিযোগ, কৃষকদের অ্যাকাউন্ট টাকা না গিয়ে, সেই টাকা ঢুকেছে আলিফ নুর ও আনিসুর রহমানের অ্যাকাউন্টে। ED সূত্রে দাবি, তাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সংস্থার ৩টি অ্যাকাউন্টে এক কোটি টাকা পাঠানো হয়েছে।
রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্তে আজ বারিক বিশ্বাসকে তলব করেছে ED. CGO কমপ্লেক্সে হাজির হতে বলা হয়েছে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীকে। ED সূত্রে দাবি, বারিক বিশ্বাসের রাজারহাটের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে, দুবাইয়ের সম্পত্তির নথি মিলেছে। ওই সম্পত্তি কার? রেশন দুর্নীতির কালো টাকা কি পৌঁছেছিল দুবাই পর্যন্ত? সূত্রের খবর, এমন নানা প্রশ্নের উত্তর পেতেই আজ জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক-ঘনিষ্ঠ ব্য়বসায়ী বারিক বিশ্বাসকে তলব করেছে ED। মঙ্গলবার, বসিরহাটের সংগ্রামপুরে বারিক বিশ্বাসের প্রাসাদোপম বাড়ি, অফিস এবং রাজারহাটে একই আবাসনে তাঁর জোড়া ফ্ল্য়াটে তল্লাশি চালিয়েছিল ED। তল্লাশি চালানো হয় তাঁর গ্য়ারাজে থাকা, মার্সিডিস, ফরচুনারের মতো গাড়িতেও। এর আগে গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার করা হয় বারিক বিশ্বাসকে। সোনা পাচারেও তাঁর নাম জড়ায়। রেশন দুর্নীতির টাকায় সোনা কিনে, বিদেশে পাচার করা হয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে ED সূত্রে দাবি।
ইডি সূত্রের খবর, এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে যে চিঠি লিখেছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সেখানে যেমন নাম ছিল শেখ শাহজাহানের, তেমনই এই দুজনের নামও ছিল। সেই চিঠি ইডির হাতে আসার পরেই সূত্র ধরে তদন্ত শুরু হয়।
বিরোধীদের তোপ:
'বড় চক্র, অনেকে জড়িত। সবার নাম সামনে আসবে', মন্তব্য বিজেপি রাজ্য সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। 'এটা হিমশৈলের চূড়া। পশ্চিমবঙ্গের রেশন দুর্নীতি ইদানিংকালে সারা দেশে যা দুর্নীতি হয়েছে সব অঙ্ক ছাড়িয়ে যাবে,' তোপ বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের। 'এরা দাবার বোড়ে। সব দুর্নীতির ক্ষেত্রেই একটা কেন্দ্র থেকে পরিকল্পনা রয়েছে', বলছেন সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।
তৃণমূলের পাল্টা:
'তৃণমূল কংগ্রেস দুর্নীতির সঙ্গে আপোষ করে না। কাজে করে দেখায়। প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়। ইডি বিজেপির শাখা সংগঠন।' নিট-এর প্রসঙ্গ তুলে বিজেপিকে তোপ তৃণমূল মুখপাত্র শান্তনু সেনের।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও পড়ুন: 'হাতে স্মার্টফোন আসায় দারিদ্র্য থেকে মুক্তি ৮০ কোটির', ভারতের ভূয়সী প্রশংসা কার মুখে?