কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে পরতে পরতে রহস্য। গোপাল দলপতি (Gopal Dalpati) ওরফে আরমান গঙ্গোপাধ্যায় ও হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের বেহালার ফ্ল্যাটের ল্য়ান্ডিংয়ে আবর্জনার মধ্যে মিলল সিরিয়াল ও রোল নম্বর লেখা কাগজ। কীসের সিরিয়াল নম্বর, কাদের রোল নম্বর, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্য। চাকরি-বিক্রির সঙ্গে এই সিরিয়াল ও রোল নম্বর লেখা কাগজের কোনও যোগসূত্র রয়েছে, উঠছে প্রশ্ন। ফ্ল্যাটের বাইরে মিলেছে হৈমন্তী ও বিভিন্ন সংস্থার নাম লেখা ফাইল।  


নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে নাম উঠে আসা রহস্যময়ী হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের এখনও কোনও খোঁজ নেই। পাত্তা নেই তাঁর স্বামী গোপাল দলপতিরও। সূত্রের খবর, গোপালের বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিস দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে সিবিআই। এই গোপাল দলপতির মুখেই প্রথমবার উঠে এসেছিল কালীঘাটের কাকুর কথা। আবার তারপরই কুন্তল ঘোষ দাবি করেন নিয়োগ দুর্নীতির টাকা গেছে গোপালের স্ত্রী হৈমন্তীর কাছে।


নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে রহস্যময়ী এই নারীর নাম ভাসিয়ে, হঠাৎই যেন গোটা তদন্তকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন যুব তৃণমূলের রাজ্য় সম্পাদক কুন্তল ঘোষ।হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায় গোপাল দলপতি ওরফে আরমান গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী।নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সবার প্রথমে গোপাল দলপতির মুখে শোনা গিয়েছিল কালীঘাটের কাকুর কথা।কিন্তু সেই কালীঘাটের কাকু? সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের নাম সামনে আনেন, নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত তাপস মণ্ডল। আর কালীঘাটের কাকুর নাম উঠতেই, রহস্যময়ী নারী অর্থাৎ হৈমন্তীর নাম সামনে আনেন যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুন্তল ঘোষ।

এখন প্রশ্ন উঠছে, এই হৈমন্তীর হাত ধরেই কি পৌঁছনো যাবে নিয়োগ দুর্নীতির পিরামিডের একেবারে শীর্ষে? না কি, স্রেফ তদন্তকারীদের গুলিয়ে দিতেই ভাসিয়ে দেওয়া হল হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম? নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে গোপাল দলপতির নাম প্রথমে শোনা গিয়েছিল কুন্তল ঘোষের মুখে। কিন্তু প্রথমে তাঁর কোনও খোঁজ মিলছিল না! কিন্তু আচমকাই ৩০ জানুয়ারি ইডি দফতরে তাঁর ফোন আসে। পরের দিন তাপস মণ্ডলের সঙ্গে ইডি অফিসে হাজির হন গোপাল দলপতি।

১৯ ফেব্রুয়ারি তাপস মণ্ডলকেই গ্রেফতার করে সিবিআই। সেদিনই কুন্তল ঘোষকেও হেফাজতে নেয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। সিবিআই সূত্রে দাবি, এরপর কুন্তল ঘোষ ও গোপাল দলপতিকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখনই প্রথমবার উঠে আসে হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম। সূত্রের দাবি, দেখা গেছে, বিভিন্ন জায়গা থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ঢুকেছে গোপালের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। সেখান থেকে একটা মোটা অংশের টাকা আবার তাঁর স্ত্রী হৈমন্তীর মুম্বইয়ের সংস্থার অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে।

এখানেই তদন্তকারীদের প্রশ্ন, নিয়োগ দুর্নীতির টাকা কি স্ত্রীর মাধ্যমে অন্য কোনও জায়গায় পৌঁছে গেছে? না, স্ত্রীর সংস্থার মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে? সিবিআই সূত্রে দাবি, গোপাল দলপতি ও তাঁর কোম্পানির নামে হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুরে মোট ২৩ একর জমির হদিশ মিলেছে। কিন্তু এই জমি কেনার ক্ষেত্রে কোনও ব্যাঙ্ক রেকর্ড নেই।  তাহলে কি গোটা লেনদেনই নগদ টাকায় হয়েছিল? এ প্রসঙ্গে নথি জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল গোপাল দলপতিকে।  আর তারপর থেকেই বেপাত্তা গোপাল। এই প্রেক্ষাপটে সূত্রের খবর, গোপাল দলপতির বিরুদ্ধে লুকআউট সার্কুলার জারির কথা ভাবছে সিবিআই। এছাড়াও হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের নামে কী কী সম্পত্তি রয়েছে, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।


আরও পড়ুন: North 24 Parganas: দুষ্কৃতী খুনের বদলা নিতেই উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দলে তৃণমূল নেতাকে গুলি, দাবি পুলিশের