ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, কলকাতা: এক এক করে ৯০০ দিন পেরিয়ে গেল SLST চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন। বৃহস্পতিবার ৯০০তম দিনে পা দিয়েছে ওই আন্দোলন। আর সেদিনই মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে কাতর আবেদন শোনা গেল নবম থেকে দ্বাদশের SLST-র চাকরি প্রার্থীদের গলায়। আর কতদিন লাগবে চাকরি হতে, প্রশ্ন আন্দোলনকারীদের। এক চাকরিপ্রার্থীর প্রশ্ন, 'মাননীয়া আপনি তো সাংবিধানিক প্রধান এবং রাজনৈতিক প্রধান, আপনার কথার যদি দাম না থাকে, তাহলে আর কার কাছে যাব আমরা?'


এরই মধ্য়ে বিজেপি বিরোধীদের জোট 'I.N.D.I.A'-এর তৃতীয় বৈঠকে যোগ দিতে মুম্বইয়ে রয়েছেন মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর, সেই সাগরপাড়ের শহর মুম্বই থেকে প্রায় ১ হাজার ৯০০ কিলোমিটার দূরে, কলকাতার মেয়ো রোডে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে কাতর আবেদন শোনা গেল নবম থেকে দ্বাদশের SLST-র চাকরি প্রার্থীদের গলায়।


কবে পরীক্ষা:
২০১৬ সালের নভেম্বরে SSC-র SLST পরীক্ষা হয়। তার এক বছর পর ২০১৭-র নভেম্বরে পরীক্ষার ফল বেরোয়। এরপর ধাপে ধাপে সফল পরীক্ষার্থীদের ভেরিফিকেশন ও ইন্টারভিউয়ের প্রক্রিয়া শেষ হয়। এই পর্যন্ত সব ঠিক থাকলেও, এরপরেই সমস্যা শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের দাবি, ২০১৮ সালের মার্চে নবম-দশম শ্রেণির এবং নভেম্বরে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে শিক্ষক নিয়োগের প্যানেল প্রকাশ করা হয়। আর সেখানেই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। আন্দোলনকারী তথা ওয়েটিং লিস্টে থাকা চাকরি প্রার্থীদের অভিযোগ, নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে। কী অভিযোগ? প্রথম দফায় ভেরিফিকেশন ও ইন্টারভিউ দিলেও, দ্বিতীয় দফায় যাঁরা ইন্টারভিউ দিয়েছেন, তাঁদের চাকরি আগে হয়ে গিয়েছে। এরপর ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দ্রুত নিয়োগের দাবিতে কলকাতা প্রেস ক্লাবের সামনে ২৯ দিনের অনশনে বসেন ওয়েটিং লিস্টে থাকা প্রার্থীরা। তাঁদের দাবি, সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগের আশ্বাস দিলেও, এখনও সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। যার ফলে সব স্বপ্নই ভেঙে গিয়েছে তাঁদের, এমনটাই বলছেন চাকরিপ্রার্থীরা। এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, 'আমাদের জীবনটা সর্বশান্ত হয়ে গেছে। আজকে আমরা ৪ বছর ধরে রাস্তায়। যেখানে সারা বিশ্বের ইতিহাসে ৯০০ দিন ধরে আন্দোলন চলেছে বলে কিন্তু আমরা জানি না। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী ২০১৯ সালে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, জেনে বুঝে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তারপরে আমাদের যে সমস্ত অভিযোগ যে সাদা খাতা, OMR বিকৃতি-সহ প্রায় ১৪ রকমের দুর্নীতি সেটি আজকে প্রকাশিত, দিনের আলোর মতো পরিষ্কার, সেখানে আমরা সম্পূর্ণ যোগ্য হয়েও কেন আজ পর্যন্ত বঞ্চিত? এটা কার লজ্জা? পশ্চিমবঙ্গের লজ্জা।' বৃহস্পতিবার বৃষ্টির মধ্যেই চাকরির দাবিতে স্লোগান ওঠে। মোমবাতি জ্বালিয়ে লেখা হয় ৯০০ দিন। আবার কারও হাতের পোস্টারে লেখা, 'ইসরোর চাঁদ জয় সম্ভব হল, কিন্তু, ৯০০ দিনেও যোগ্যদের চাকরি জয় সম্ভব হল না।'


তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া:
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, 'কারও কারও প্ররোচনায় পা না দিয়ে...তারা বাড়ি গিয়ে বাড়ির লোকের সঙ্গে থাকুন। আন্দোলন নিশ্চয়ই করুন। কিন্তু এভাবে আন্দোলন করে তো কোনও সমাধান হতে পারে না। রাজ্য সরকার চেষ্টা করছেন, মুখ্যমন্ত্রী চেষ্টা করছেন, আইনি জট থাকছে, টেকনিক্যাল সমস্যা থাকছে।'


SLST-র মতো দ্রুত নিয়োগের দাবিতে বৃহস্পতিবার, কালীঘাট অভিযানের ডাক দেন মাদ্রাসার চাকরিপ্রার্থীরা। এদিন, হাজরা মোড়ে বেশ কিছুক্ষণ বিক্ষোভ দেখান তাঁরা।


আরও পড়ুন: বাজির আড়ালে বোম? সাংসদের মন্তব্যে অস্বস্তি বাড়ল তৃণমূলের?