প্রকাশ সিনহা, কলকাতা: এবার, ইডির (ED)-র নথিতে অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের (Abhishek Banerjee) নাম। নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে (Recruitment Scam) তাপস মণ্ডলের বয়ানকে উদ্ধৃত করে ইডি দাবি করেছে যে, অভিষেকের বার্তা পৌঁছে দিতেই, মানিক ভট্টাচার্যের কাছে যেতেন কালীঘাটের কাকু। পাল্টা, জবাব দিয়েছে তৃণমূলও।


সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগের কথা ED-র নথিতে দাবি করা হয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় জুন মাসের ১৭ তারিখ, কলকাতার অফিস থেকে দিল্লিতে ED-র আদালতে এই নথি পাঠানো হয়। এখানেই সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামের উল্লেখ করা হয়েছে। তাপসকুমার মণ্ডলের বয়ানের ভিত্তিতে ED-র নথিতে দাবি করা হয়েছে যে, 


অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যিনি সেই সময় যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি ছিলেন, তাঁর আর্থিক বিষয়গুলো দেখভাল করতেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র তাঁর খুব ঘনিষ্ঠও ছিলেন। সেই সময় সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র তৎকালীন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের অফিসে যেতেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা পৌঁছে দিতে। ED-র নথিতে আরও দাবি করা হয়েছে যে, জেরায় তাপসকুমার মণ্ডল জানিয়েছেন, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন কুন্তল ঘোষ। তাপস দাবি করেন, প্রাথমিকে শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য প্রার্থীদের থেকে বেআইনি ভাবে তোলা টাকা তিনি কুন্তল ঘোষকে দিয়েছিলেন, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কাকু ওরফে সান্টু কাকুকে দেওয়ার জন্য।


তৃণমূলের রাজ্য সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, 'ইডিকে প্রমাণ দিতে হবে। কোর্টে গিয়ে ইডি আষাঢ়ে গল্প শোনাচ্ছে, রাজনৈতিক বক্তব্যও রাখছে। ট্রায়াল কবে শুরু হবে।'


সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, 'কালীঘাটের কাকু বলেছিল তিনি কর্মচারী। এখন দেখা যাচ্ছে তাঁর এত সম্পত্তি। তাহলে মনিবের কত? এখন মনিবের নাম উঠে আসছে দেখে উনি বিদেশে চলে গিয়েছেন।' তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে সেটিংয়ের অভিযোগ করেছেন তিনি।


এদিন নগর দায়রা আদালতে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে রিপোর্ট দেয় প্রেসিডেন্সি জেল কর্তৃপক্ষ। এদিন আদালতে সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রের আইনজীবি বলেন, 'আমরা বিদেশে যাওয়ার কথা বলছি না। আমরা ভারতের মধ্যে যে কোনও জায়গায় চিকিৎসা করানোর জন্য বলছি। কিছু দিনের জন্য যে কোনও শর্তে জামিন বা অন্তর্বর্তী জামিন দেওয়া হোক।' পাল্টা, ED-র আইনজীবী বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী SSKM-কে ভরসা করেন। যে কোনও অসুস্থতায় তিনি SSKM হাসপাতালে যান। হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনে SSKM সব থেকে ভাল। সুজয়কৃষ্ণ যদি অপারেশন করাতে চান, তাহলে তো SSKM হাসপাতাল সেরা। ১৬ দিন তিনি প্যারোলে ছিলেন, তখন তো হার্টে কিছু হয়নি! একই রকম হয়েছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সময়। তখন তাঁকে ভুবনেশ্বর AIIMS-এ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, রাজনৈতিক চাপে হাসপাতাল অন্য রকম রিপোর্ট তৈরি করে। এনিয়ে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণও আছে। সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর শারীরিক অবস্থার বিষয়ে, দিল্লি AIIMS থেকে দ্বিতীয় মতামতের জন্য বোর্ড গঠন করা হোক।'


দু-পক্ষের সওয়াল-জবাব শুনে, জামিনের আবেদন খারিজ করে, আদালত জানিয়ে দেয় SSKM হাসপাতালেই হবে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর চিকিৎসা। নির্দেশ নামায় বিচারক বলেন, SSKM সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। অনেক VIP চিকিৎসা করান। আশাকরি সেখানেই সুস্থ হবেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র।

আরও পড়ুন: বোর্ড গঠনের জন্য বিরোধী দলের সদস্যকে অপহরণ! অভিযুক্ত তৃণমূল