অর্ণব মুখোপাধ্যায়, আবির দত্ত ও সুকান্ত মজুমদার, ধনেখালি : করোনাকালেই (Covid-Time) ২ কোটি টাকা দিয়ে পেট্রোল পাম্প (Petrol Pump) কিনেছিলেন নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে (Recruitment Scam) ধৃত অয়ন শীল (Ayan Sil)। যে পাম্পটির বর্তমান মালিকানা রয়েছে অয়ন শীলের ছেলে অভিষেক এবং তাঁর বান্ধবী ইমন গঙ্গোপাধ্যায়ের হাতে। হুগলির ধনেখালিতে (Dhanekhali) সেই পেট্রোল পাম্প এখন কী অবস্থায় রয়েছে ? কী বলছেন সেখানকার কর্মীরা ?


নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তির বহর দেখে অনেকেরই চোখ কপালে ! কিন্তু, কম যান না, শান্তনু ঘনিষ্ঠ অয়ন শীলও ! তাঁর কীর্তিকলাপের প্যান্ডোরার বাক্স খুলতেই, একের পর এক চমকে দেওয়ার মতো তথ্য সামনে আসছে। কার্যত সেই বাক্সেই বন্দি ছিল, এই পেট্রোল পাম্পের কাহিনি !

সময়টা ২০২০ সালের অগাস্ট। করোনা আবহেই হুগলির ধনেখালিতে ২ বছর ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা একটি পেট্রোল পাম্প ২ কোটি টাকা দিয়ে কিনে নেন অয়ন শীল ! উত্তর কলকাতার জোড়াবাগান এলাকার ব্যবসায়ী শুক্লা পরিবারের ৩ ভাই নন্দগোপাল, অজয় এবং আশিসের নামে ছিল এই পাম্প। শুক্লা সার্ভিস স্টেশন নামে তা কলকাতা পুরসভায় নথিবদ্ধ। ২ কোটি টাকা দিয়ে কেনা এই পাম্প ছেলে অভিষেক এবং তাঁর বান্ধবী ইমন গঙ্গোপাধ্যায়ের নামে কিনে নেন অয়ন শীল।


পেট্রোল পাম্পের আগের মালিক নন্দগোপাল শুক্লা বলেন, দেনা হয়ে গেছিল ব্যাঙ্কে। তাই করোনাকালে বিক্রি করে দিই। এক দালাল শুভজিৎ-এর মাধ্যমে অভিষেক সিলের সঙ্গে দেখা হয়। ৩টে চেক পাই। চেকগুলো কাকলী শীলের নামে ছিল। ১ কোটি চেকে পাই। আর ১ কোটি ব্যাঙ্কের লোন মিটিয়ে দেন কাকলী। ৭-৮ মাসের মধ্যে টাকা দেওয়া হয়েছে।

পাম্পের ভিতরে, কলকাতা পুরসভার লাইসেন্স বিভাগের নথিতেই দেখা যাচ্ছে, এই পাম্পের দুই পার্টনার হিসেবে আছেন অভিষেক শীল ও তাঁর বান্ধবী ইমন গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম। ব্যবসায়ী ও পেট্রোল পাম্পের আগের মালিক অজয় শুক্লা বলেন, যারা পেট্রোল পাম্প কিনেছেন তাঁরা ব্যবসা করেন, রাইস মিল আছে বলে নিজেদের পরিচয় দেন।

হুগলি জেলা প্রশাসনের পাম্প হস্তান্তরের নথিতেও দেখা যাচ্ছে, সবার ওপরে অভিষেক শীল এবং দ্বিতীয় নাম রয়েছে অভিষেক শীলের বান্ধবী হুগলির উত্তরপাড়ার বাসিন্দা ইমন গঙ্গোপাধ্যায়ের। যদিও অভিষেক শীল বলেন, আমি এই ব্যাপারে এই মুহূর্তে কমেন্ট করছি না। ইডি তদন্ত করে বের করুক। আমি জানতাম না। দ্য ফসিলসের ব্যাপারে - আমি কিছু বলব না।

হুগলির ধনেখালিতে কেনা এই পেট্রোল পাম্পে ঠিকানা কিন্তু, কলকাতায় ! বালিগঞ্জে ফাইভ বাই ওয়ান বন্ডেল রোডের ভাড়া বাড়ি। তা দেখা যাচ্ছে, কলকাতা পুরসভার লাইসেন্স বিভাগের নথিতেও। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এই ঠিকানায় শুধু পেট্রোল পাম্পই নয়, দ্য ফসিলস নামে অনামী এক সংস্থার অফিসও খোলা হয়েছিল ! ডকুমেন্টে সংস্থার মালিকানা হিসেবে নাম রয়েছে দুজনের । অভিষেক শীল ও ইমন গঙ্গোপাধ্য়ায়। কিন্তু সবটাই খাতায় কলমে !

বাড়ির মালিক সুগতরঞ্জন দাশগুপ্ত আগেই জানিয়েছিলেন, এখানে ফসিলসের নামে লেটার আসত। পেট্রোল পাম্পের নামেও আসত। আমি ওদের বারবার বলেছি, চিঠি নিয়ে যান। কিন্তু আসত না। এফডি ব্লকের অফিসে গিয়েও এসেছি। ওদের গতিবিধি সন্দেহজনক লাগত। তাই চুক্তি রিনিউ করিনি। যোগাযোগও রাখিনি পরে। পরে যা চিঠি এসেছে, ফেলে দিয়েছি। কেন্দ্রীয় এজেন্সি ইডি সূত্রের দাবি, অয়নের পেট্রোল পাম্পের ২৮ পাতার লেজার বুক থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তদন্তকারীদের হাতে পৌঁছবে।