কলকাতা : গ্রেফতার 'কালীঘাটের কাকু' সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র (SujanKrishna Bhadra)। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় (Recruitment Scam Case) গ্রেফতার করা হল তাঁকে। প্রায় ১২ ঘণ্টা জেরার পর ইডির (Enforcement Directorate) হাতে গ্রেফতার সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। তথ্য গোপন, তদন্তে অসহযোগিতা করায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি ইডি সূত্রে।
তিনটি সংস্থার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র, আজ বারে বারে এমনই অভিযোগ আনেন ইডির অফিসাররা। সেই তথ্যপ্রমাণ তাঁদের হাতে ছিল বলে সূত্রের খবর। যদিও অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করতে থাকেন 'কালীঘাটের কাকু'। ইডির অফিসাররা জানান, তাঁরা ভালভাবেই জানেন এই কোম্পানির মাধ্যমেই কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। তাহলে কোথা থেকে এই টাকা এল ? ইডির আধিকারিকরা মনে করছেন, নিয়োগ দুর্নীতির একটা মোটা অঙ্কের টাকা এই তিনটি কোম্পানির মাধ্য়মে সাদা করা হয়েছে। এছাড়াও যে ২০টি সম্পত্তির তথ্য পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে বেশ কয়েকটি সম্পত্তি 'কালীঘাটের কাকু'র নামে রয়েছে বলে দাবি করছেন ইডির আধিকারিকরা। এমনকী অন্যদের নামে তিনি বেনামি সম্পত্তি তৈরি করেছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে বেনামি সম্পত্তি তৈরি করা, কোটি কোটি টাকা নয়ছয় করা, আর্থিক তছরুপের অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
CBI, ED তাঁর বাড়ি, ফ্ল্য়াট, অফিসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়েছিল। এবার, কালীঘাটের কাকু সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে গ্রেফতার করল ইডি। গত ২০ মে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের বাড়িতে ১৫ ঘণ্টা তল্লাশি চালায় ED। তল্লাশি চালানো হয় তাঁর একাধিক অফিসেও। ইডি সূত্রে দাবি করা হয়, নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের কী সম্পর্ক জানতে চায় তারা।
এরপর আজ, মঙ্গলবার সকাল ১০.৫৯ মিনিট নাগাদ ইডি দফতরে এসে পৌঁছন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে সুজয়কৃষ্ণকে প্রশ্ন করা শুরু করেন ইডির ৩ জন আধিকারিক। এর আগে ইডি সূত্রে দাবি করা হয়েছিল, নামে-বেনামে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের ৩টি কোম্পানি ও একাধিক সম্পত্তির হদিশ মিলেছে।
সূত্রের খবর, ইডি আধিকারিকরা জানতে চান, এই কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে কি নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকা সাদা করা হয়েছিল ? বেশ কিছুদিন ধরে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের ৩টি কোম্পানির একাধিক কর্মী, আধিকারিককে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা। ইডি সূত্রে দাবি, তাঁদের বয়ানের সূত্র ধরেও মঙ্গলবার সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এর আগে, ৪ মে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর বাড়ির পাশাপাশি তাঁর ফ্ল্যাটেও তল্লাশি চালায় CBI। তদন্তে বারবার উঠে এসেছে এই সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর নাম। নানা সময়ে নানা কথা শোনা গেছে তাঁর মুখে। এর আগে, চার্জশিটে ইডির তরফে দাবি করা হয়েছিল, বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের DIP ডেভলপার্সের ১ হাজার ২০০ স্কোয়ার ফুটের একটি কমার্সিয়য়াল স্পেস কেনার জন্য ২০২০ সালে অগ্রিম হিসেবে ৪০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। সুজয়কৃষ্ণের বাড়িতে তল্লাশির পর, ইডি সূত্রে দাবি করা হয়, আয়ের সঙ্গে তাঁর ব্যয়ের সামঞ্জস্য মেলেনি।
প্রসঙ্গত, এই 'কালীঘাটের কাকু' শব্দবন্ধ প্রথমবার শোনা যায়, নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে অভিযুক্ত গোপাল দলপতির মুখে। তিনি বলেছিলেন, কালীঘাটে কাকুর কাছে টাকা পাঠাতে হবে। বারবার বলতেন কুন্তল ঘোষ ! এরপর শুভেন্দু অধিকারী ট্য়ুইটারে লিখেছিলেন, ' কালীঘাটের কাকু, পিসি, ভাইপো, কাকিমা, বউমা, শ্যালিকা - সবাই একই ধাঁধার অংশ। পৃথকভাবে কেউ দোষী নন, অথচ সবাই একসূত্রে গাঁথা। কয়লা যতই ধোয়া হোক, তা কালোই থাকবে। ঠিক তোমাদের ভবিষ্যতের মতো। '
কিন্তু, কে কালীঘাটের কাকু ? নাম বলেননি কেউ। পরবর্তীকালে তা খোলসা করেন নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত তাপস মণ্ডল।
নিয়োগ দুর্নীতিতে একের পর এক গ্রেফতারি, পরপর জিজ্ঞাসাবাদ। কিন্তু, প্রশ্ন হল মাথার খোঁজ মিলবে কবে ?