কলকাতা: যে কোনও জায়গায় গিয়ে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা যাবে, ইডিকে নির্দেশ দিয়েছে বিশেষ আদালত। আর এই নির্দেশ পেয়ে মূলত পুজোর পরেই পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে ছিল খবর। দেখতে দেখতে দুর্গাপুজো শেষ হয়ে দীপাবলির অপেক্ষা। আর এহেন পরিস্থিতিতে এখনও একই তিমিরে বর্তমান পরিস্থিতি। বাধ্য হয়ে শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে কালীঘাটের কাকু সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের জন্য ফের SSKM হাসপাতালকে চিঠি দিল ED।
মূলত বাইপাস সার্জারির ২ মাস পার। এখনও এসএসকেএমে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। সূত্রের খবর, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকদের দিয়ে সুজয়কৃষ্ণর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে দ্রুত জানানো হোক, কবে তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা যাবে। এর আগে সুজয়কৃষ্ণর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞকে নিয়ে SSKM হাসপাতালে যান ED-র অফিসাররা। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরেও মেলেনি নমুনা। এদিকে সম্প্রতি রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে সদ্য গ্রেফতার হওয়ার পর আদালতেই অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তারপর তাঁকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু সুস্থ হতেই তাঁকে দ্রুত ইডি হেফাজতে নিয়ে নেওয়া হয়। শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ।
মূলত হাসপাতালে ভর্তি থাকায় কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে পারছে না ইডি। 'বেসরকারি হাসপাতাল ছেড়ে দিলেও কেন এতদিন এসএসকেএমে সুজয়কৃষ্ণ? কী চিকিৎসা চলছে? কী ওষুধ দেওয়া হচ্ছে সুজয়কৃষ্ণকে?' সুপারের কাছে জানতে চেয়ে বয়ান রেকর্ড করেছিল ইডি। আর এবার ফের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি।
প্রসঙ্গত, এর আগে এবিপির প্রশ্নের উত্তরে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র বলেন, 'সব সত্যি একদিন সামনে আসবে।' আপনার সাহেবের বিষয়ে জানতে চেয়েছে ইডি? প্রশ্নের উত্তরে কালীঘাটের কাকু বলেন, হ্যাঁ। কী প্রশ্ন করল? বলতেই জানান, 'সেটা বলা যাবে না। ' সাহেবের নাম বলানোর জন্য কি চাপ দেওয়া হচ্ছে? এবারেও উত্তর 'না' জানালেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। কিন্তু কালীঘাটের কাকুর সাহেব কে? তিনি আগেই তা খোলসা করেছিলেন।
সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকু এর আগে বলেছিলেন, আমি লিপস অ্য়ান্ড বাউন্ডসে কাজ করি। আমার সাহেবকে কোনওদিন ছুঁতে পারবে না। তাই আমায় টানাটানি করছে। আমার সাহেব অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়।আদালতে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে প্রভাবশালী বলে উল্লেখ করে ইডির আইনজীবী বলেন, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র প্রভাবশালী, জেলে গিয়ে অন্যকিছু করতে পারেন। জেল হেফাজতে কে আসছে, কে যাচ্ছে জানা সম্ভব হবে না। জেলের সিসিটিভি ফুটেজ রেকর্ড করে সংগ্রহ করা হোক।
প্রসঙ্গত, একটা সময় ছিল, যখন গরুপাচার মামলায়, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তলবের দিনে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বীরভূমের হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা অনুব্রত মন্ডল। বুকে হাত দিয়ে হাসপাতালের সামনে যেতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। আরও একটু পিছিয়ে দেখতে গেলে, এমন ছবি নারদা মামলার সময়ও প্রকাশ্যে এসেছিল।
আরও পড়ুন, সকালে ED দফতরে হাজিরা কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যানের
ফিরহাদ হাকিম ছাড়া শোভন চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায় (প্রয়াত) এবং মদন মিত্র প্রায় প্রত্যেকেই কম বেশি অসুস্থ হয়ে এসএসকেম-এ চিকিৎসাধীন ছিলেন। তবে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় যখন সক্রিয় তদন্ত শুরু করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা, তখন কিছু নতুন নিয়ম সংযোজন হয়। তাই প্রথমদিকে এসএসকেম-এ গেলেও গ্রেফতারের আগের শেষমুহূর্তে কড়া নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। যাতে কোনওভাবেই তলব এড়িয়ে অভিযুক্ত ভর্তি না হন। তারপর পরই গ্রেফতার করা হয়েছিল পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়কে।