সৌভিক মজুমদার, অনির্বাণ বিশ্বাস, শিবাশিস মৌলিক, কলকাতা : মন্ত্রীকন্যা অঙ্কিতা অধিকারীর স্কুল শিক্ষিকার চাকরি পাওয়ার কথা ছিল অনামিকা রায়ের। কিন্তু আদালতের নির্দেশের পর কয়েক মাস কেটে গেলেও নিয়োগপত্রই হাতে পাননি তিনি। এরপরই শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের কাছে রিপোর্ট তলব করেন বিচারপতি।
এ প্রসঙ্গে আদালতের মন্তব্য, যদি পুলিশ বিরূপ রিপোর্ট দেয়, তা হলে আরও একটা তদন্তের নির্দেশ দেব। ইনি চাকরিপ্রার্থী, জঙ্গি তো নন। আসল জঙ্গি আসলে তো পালিয়ে যাবে। অনন্তনাগে পাঠিয়ে দেব - পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন ওঠায়, চাকরিপ্রার্থীর নিয়োগপত্র না পাওয়া নিয়ে এমনই কড়া মন্তব্য করলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে দিলেন হুঁশিয়ারিও।
নম্বর কম পেয়েও দিব্যি চাকরি করছিলেন কোচবিহারের স্কুলে। শেষমেশ, হাইকোর্টের নির্দেশে সেই চাকরি খোয়াতে হয়েছে মন্ত্রী কন্যা পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীকে। তাঁকে ফেরাতে হয়েছে চাকরি জীবনে পাওয়া বেতনও।
কিন্তু অঙ্কিতা অধিকারীর জায়গা আজও ফাঁকা। আদালতের নির্দেশে, তাঁর জায়গায় যাঁর যোগ দেওয়ার কথা ছিল, সেই অনামিকা রায় এখনও অবধি যোগ দিতে পারেননি স্কুলে। আদালতের নির্দেশের ৪ মাস পরও এখনও চাকরি পাননি অনামিকা। কিন্তু, এতদিন পরও কেন চাকরি পেলেন না তিনি?
সোমবার হাইকোর্টে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে জানানো হয়, পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট অসম্পূর্ণ থাকায় অনামিকা রায়কে নিয়োগপত্র দেওয়া যায়নি। বিস্তারিত জানতে চেয়ে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের কাছ থেকে রিপোর্ট চাইলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশ, মঙ্গলবার দুপুর ১২টার মধ্যে শিলিগুড়ি কমিশনারেটকে জমা দিতে হবে রিপোর্ট। কেন পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট অসম্পূর্ণ রয়েছে রিপোর্টে তা জানাতে হবে। কোন থানা রিপোর্ট দিচ্ছে না? এদিন, তাও জানতে চান বিচারপতি।
২০১৮ সালে, ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরই পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা চাকরি পান কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের ইন্দিরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করেন ববিতা সরকার নামে এক চাকরিপ্রার্থী। হাইকোর্টের নির্দেশে চাকরি যায় মন্ত্রীকন্যার। সেই স্কুলেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেন মামলাকারী ববিতা। কিন্তু কমিশনের নম্বর-বিভ্রাটের জেরে কিছুদিনের মধ্যেই প্রশ্ন ওঠে ববিতার নিয়োগ নিয়েও। চাকরির দাবি তুলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন, মেধা তালিকায় নাম থাকা, পরবর্তী দাবিদার, অনামিকা রায়। এর কয়েকদিন পর, মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে ববিতার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেয় আদালত। কাউন্সেলিং-এর পর, অনামিকা রায়কে সুপারিশ পত্র দেওয়ার জন্য় নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।
কিন্তু আদালতের নির্দেশের পর পেরিয়ে গিয়েছে ৪ মাস। এখনও নিয়োগপত্র পাননি অনামিকা।