সুনীত হালদার, হাওড়া: ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল (Remal)। তার মোকাবিলার জন্য সমস্ত প্রস্তুতি শুরু করেছে পূর্বরেল (Eastern Railway) কর্তৃপক্ষ। রেমালের প্রভাব নিয়ে আগাম সতর্ক রাজ্য প্রশাসন। উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে খোলা হয়েছে কন্ট্রোলরুম। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ত্রাণ, ফ্লাড শেল্টার গুলিকে। পূর্বরেলের তরফেও এবার সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই হাওড়া ও শিয়ালদহ বিভাগের রেলের ম্য়ানেজার ও আধিকারিকরা বৈঠকে বসেছেন। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখিন যাতে হওয়া যায় তার জন্য সবরকম ব্য়বস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
রেমাল মোকবিলায় শিয়ালদহ ডিভিশনে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?
- ইতিমধ্য়েই এমার্জেন্সি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যের পর থেকে টানা কাজের জন্য কর্মীদের অফিসে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
- জল সীমারেখা অতিক্রম করলে ট্রেন চলাচলে সমস্যা হতে পারে। তাই পর্যাপ্ত কর্মী দিয়ে নিকাশি ব্য়বস্থা সচল রাখার দিকে নজর রাখা হচ্ছে। জরুরি পরিস্থিতিতে সব জায়গায় পাম্প বসানো হবে।
- পরিষেবায় যাতে কোনও ব্যাঘাত না ঘটে তাই প্রত্যেক স্টেশনে ঘনঘন অ্যানাউন্সমেন্টের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যাতে যাত্রীদের সবসময় পরস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহল করা যায়।
- ঝড়ের মাত্রা যদি বেশি হয়, তবে প্ল্যাটফর্মের শেড ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টের শীটের বন্দোবস্ত করে রাখা হচ্ছে।
- শিয়ালদহ ও কলকাতার মূল স্টেশনগুলো যেখানে সংখ্যায় বেশি মেইল ও এক্সপ্রেস ট্রেন চলে সেখানে ডিডি সিটস ও আপদকালীন আলো যেন থাকে, তা দেখা হচ্ছে।
- সংখ্যায় বেশি কর্মী দিয়ে টাওয়ার ওয়াগনগুলিকে প্রস্তুত রাখতে হবে যাতে কোনও সম্ভাব্য ওভারহেড তারের সমস্যার ক্ষেত্রে সেগুলি সরানো যায়। ডাল ভেঙে পড়তে পারে, এমন সব গাছকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঝড়ের আগেই তা ছেঁটে ফেলা হবে বলে জানিয়েছে পূর্ব রেল।
- উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও মেদিনীপুরের বিভিন্ন স্টেশনগুলির শেড পরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে, যাতে ঝড়ের প্রকোপে শেড উড়ে না যায়।
- নামখানা, ডায়মণ্ড হারবার, হাসনাবাদের মত জায়গায় ঝড়ের প্রভাব বেশি পড়তে পারে। সেখানে পর্যাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারিং দল ও টেলিকম কর্মীদের সঙ্কট মোকাবিলায় সজাগ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
- সব ট্রেনের চালকদের সবসময় সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
- রবিবার সকালের মধ্যে শিয়ালদহ, দমদম, বারাসাত, নৈহাটি, রানাঘাট প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চালকদের সাথে ডিজেল লোকো স্থাপন করার নির্দেশ।
- বিভিন্ন স্টেশনে থাকা হোর্ডিং, বিজ্ঞাপনের বোর্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা হচ্ছে, যাতে ঝড়ের সময় উড়ে বা ভেঙে পড়ে বিপদ না বাড়ে।
রেমাল মোকবিলায় হাওড়া ডিভিশনে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?
- কন্ট্রোলরুমে হাই অ্যালার্ট জারি থাকবে। পর্যাপ্ত আধিকারিক উপস্থিত থাকবেন সবসময়। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হবে। পর্যাপ্ত জনবল মোতায়েন নিশ্চিত করা হবে।
- কোথাও যেন জল জমে না থাকে, তার জন্য পর্যাপ্ত কর্মীদের কাজে লাগানোর বন্দোবস্ত করতে হবে। জমা জল পরিষ্কার করার জন্য জলের পাম্পগুলি সব জায়গায় প্রস্তুত রাখতে হবে।
- ট্রেন চলার পরিস্থিতি সম্পর্কে যাত্রীদের সচেতন করতে পাবলিক অ্যানাউন্সমেন্ট সিস্টেম ঘন ঘন ব্যবহার করা হবে।
- বড় বড় স্টেশনগুলোতে ডিজেইল জেনারেটর ও ইমার্জেন্সি পাওয়ার ব্যাপ আপের বন্দোবস্ত রাখতে বলা হয়েছে।
রবিবার হুগলি, নদিয়া এবং ঝাড়গ্রামে ঝড় ও ভারী বৃষ্টির জন্য কমলা সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। সোমবারও কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের ৫ জেলায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছেআলিপুর আবহাওয়া দফতরের। বৃষ্টির সঙ্গে ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে।মঙ্গলবার থেকে এরাজ্যে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কাটতে শুরু করবে। কমবে বৃষ্টির পরিমাণও।