কলকাতা: আর জি কর হাসপাতালে আর্থিক বেনিয়মের অভিযোগে গ্রেফতার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা আশিস পাণ্ডে। আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আশিস। তাঁকে গ্রেফতার করল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (CBI). দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হল আশিসকে। আর জি কর হাসপাতালের হাউস স্টাফ আশিস। শুক্রবার তাঁকে আদালতে তোলা হবে বলে জানা গিয়েছে, তার পর হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। (RG Kar Case)


CBI সূত্রে জানা যাচ্ছে, আর জি করে আর্থিক বেনিয়মের তদন্ত করতে গিয়ে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় আশিসকে। আজও তাঁকে তলব করা হয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, আর জি করের দুর্নীতিতে সন্দীপ ঘনিষ্ঠ আশিস যুক্ত রয়েছেন। সন্দীপের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিভিন্ন সময় দুর্নীতিতে যুক্ত থেকেছেন তিনি। এর আগে, তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের মামলাতেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় আশিসকে। আজ জিজ্ঞাসাবাদের সময় একাধিক তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরা হলে, সদুত্তর দিতে পারেননি আশিস। এমনকি তিনি তথ্য় গোপনের চেষ্টাও করেন বলে অভিযোগ। তদন্তকারীদের আশিস বিভ্রান্ত করতে চাইছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। (Kolkata News)


আর জি কর হাসপাতালে আর্থিক বেনিয়মের অভিযোগে এর আগে সন্দীপ-সহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। এবার গ্রেফতার হলেন আশিস। CBI সূত্রে খবর, ধৃত চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদে, বিভিন্ন তল্লাশিতে, সাক্ষীদের বয়ানে বার বার আশিসের নাম উঠে আসে। এর পরই হাওড়ার বাসিন্দা আশিসকে তলব করা হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। আর জি করের দুর্নীতি, টেন্ডার পাস করানো, টাকার লেনদেনে আশিসের নাম উঠে এসেছে বার বার। থ্রেট সিন্ডিকেটের মাথায় তিনি ছিলেন বলেও অভিযোগ মিলেছে। 


আর জি করের ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় প্রথম আশিসের নাম খবরের শিরোনামে উঠে আসে। খবর মেলে, ৯ অগাস্ট তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনাটি যখন জানা যায়, সেদিন সল্টলেকে একটি হোটেল বুক করেছিলেন আশিস। সেদিন দুপুরে ওই হোটেলে ঢোকেন তিনি, ১০ অগাস্ট বেরিয়ে যান। আবার ৯ অগাস্ট সকালে সেমিনার রুমের সামনেও দেখা যায় তাঁকে। সন্দীপের পাশেই উপস্থিত ছিলেন তিনি। সেই ছবি ভাইরাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। আশিসকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে CBI. 


CBI-এর দুর্নীতি প্রতিরোধ শাখা তদন্তে নেমে তিন সাপ্লায়ারকে গ্রেফতার করে। সেই তদন্তে নেমে আশিসের নাম পায়। দুর্নীতিচক্রের মাথা হিসেবে নাম উঠে আসে তাঁর। আর জি কর হাসপাতালে এই দুর্নীতিচক্র বহুদিন ধরেই চলছিল বলে জানা যায়।  এমন ভাবে টেন্ডার পাস হতো, যাতে দুর্নীতিচক্রেরই হাতে টেন্ডার উঠত। অর্থাৎ ২০টি সংস্থা যদি টেন্ডার পেতে আবেদন জানায়, তাদের মধ্যে যে-ই টেন্ডার পাক না কেন, তা একটি সংস্থার হাতেই উঠত। এতে আশিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন বলে জানা গিয়েছে।


আর জি করের দুর্নীতি মামলার তদন্তভার যখন CBI-এর হাতে তুলে দেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ। সেই সময় তিনি জানান, ধর্ষণ এবং খুনের মামলার তদন্তও যখন CBI করছে, দুর্নীতির সঙ্গে মূল মামলার কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি না, তা একটি সংস্থা তদন্ত করলে ভাল হবে। ফলে, ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার সঙ্গে দুর্নীতির যোগ আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। সন্দীপ দুর্নীতির পাশাপাশি ধর্ষণ ও খুনের মামলাতেও গ্রেফতার হয়েছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ আশিসের ভূমিকাও এখন আতসকাচের নীচে।