কলকাতা : কলকাতার সঙ্গেই গোটা রাজ্য আজও পথে। তিলোত্তমার বিচারের দাবিতে আরও জোরদার হচ্ছে আন্দোলন। একদিকে রাজনীতির সংস্পর্শমুক্ত আরজি করের জুনিয়র চিকিৎসকদের টানা আন্দোলন, অন্যদিকে রাজপথে নাগরিক সমাজের গর্জন। কার্যত আজও শহর তিলোত্তমা দেখল নজিরবিহীন আন্দোলন। আর এই আবহেই আরজি করের জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশে এসে আন্দোলন আরও জোরদার করল নির্যাতিতার পরিবার। এদিন হাসপাতালের আন্দোলনমঞ্চে তাঁরা একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানেই তাঁরা বিচারের দাবিতে সরব হলেন। শুধু তা-ই নয়, ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাঁদের বুকে একরাশ যে অভিযোগ যে জমা ছিল, তাও আজ উগর দিলেন। সঙ্গে নাড়িয়ে দিল নির্যাতিতার দাদার আকুতি। সাংবাদিক বৈঠকে কথা বলতে শুরু করেই তিনি বললেন, 'আমি এই অভাগী অভয়ার দাদা, রাখিটা এবার বাঁধতে পারিনি।'


তিনি আর যা বললেন, "আমরা বুঝতে পারিনি যে দেহটাকে হাসপাতাল থেকে বের করার এত কী তাড়া ছিল প্রশাসনের। বডিটা বের করার সময় অনেকবার বারণ করেছিলাম প্রশাসনকে যে, আমাদের সময় দিন। কিন্তু জানি না বডিটা বের করার জন্য এত কী তাড়া ছিল। বা, বডিটা দাহ করা জন্যই এত কী তাড়া ছিল। আমরা তো চেয়েছিলাম বডিটা থাক। সেই সুযোগ আমাদে প্রশাসন দেয়নি। আমাদের সবার কাছে শুধু একটাই দাবি, এই নারকীয় কাণ্ডে যাঁরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যাঁরা এই ব্যাপারটাকে সম্পূর্ণভাবে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তাঁদেরও সমানভাবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যাতা আরও হাজার হাজার কোটি কোটি বোনের আর এই অসুবিধায় না পড়তে হয়। আপনার সকলে যেভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারজন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমরা নিশ্চিত করছি, আমরাও সবসময় আপনাদের পাশে আছি। যতক্ষণ না আমাদের সেই অভাগী বোনটি তার উপযুক্ত বিচার পাচ্ছে।" 


কলকাতা পুলিশকে কাঠগড়ায় তুলে নির্যাতিতার কাকিমা বলেন, "৯ তারিখ আমাদের বাড়ির মেয়ে...অভয়া, তিলোত্তমা যা-ই বলে চেনেন আপনারা...আমাদের হতভাগ্য মেয়েটাকে... আমরা যখন সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে খবর পাই বাড়ির লোক। আমাদের কাছে আসে। আমরা কাকা-কাকিমা হিসাবে বলছি। যে মুহূর্তে খবর পাই তার এক ঘণ্টার মধ্যে আমরা গাড়ি বুক করে আমরা যখন হাসপাতালে আসি...২টো ১০ থেকে-২টো ১৫ মিনিট হবে। তার আগে কী ঘটেছে সেটা আমি বলতে পারব না। কিন্তু তার পরে যে ঘটনাগুলোর সাক্ষী আমি হয়েছি বা আমরা হয়েছি...আমরা চারজন..আমরা চারজন এসেছিলাম। আমি, আমার মেজো ভাসুর, আমার ছেলে, আর পিছনে আমার জা আছে। চারজন আমরা একসঙ্গে এসেছিলাম। আমরা এসে যখন ঢুকলাম...তারপর থেকে দেখেছিলাম সেমিনার রুমে ঢোকার ওখানে পুলিশে ছয়লাপ...আর যাঁরা ছাত্র ছিলেন তাঁরা ছিলেন। অতি কষ্টে ঢুকে আমরা ভিতরে ঢুকে সেমিনার হলের উল্টোদিকে আমরা যখন গিয়ে ঢুকলাম, তখন দেখেছি আমার দাদা-দিদিকে একটা ঘরে বসিয়ে পাখার নীচে কেউ জল এনে দিচ্ছে, কেউ এই ঘর থেকে ওই ঘরে নিয়ে যাচ্ছে ...একবার এই ঘর একবার ওই ঘর...জল খান , পাখার নীচে বসুন এই চলছে। ২টোয় যদি আমরা পৌঁছে থাকি, ৪টে অবধি এই জিনিসগুলো হয়েছে। সাড়ে ৩টে অবধি। এই জিনিসগুলোই হয়েছে। তারমাঝে পুলিশ এসে বারবার ঘিরে ধরে বারবার একটাই কথা...আপনারা চলুন প্রিন্সিপ্যালের ঘরে যাবেন। আমরা তখন পুরো পরিবার দাদা-দিদিকে ঘিরে রেখে বলেছি, না ওঁরা কোথাও যাবে না। দরকার হলে প্রিন্সিপ্যাল এখানে আসবেন। কিন্তু পুলিশ আমাদের এত জোর করেছে...এত ফোর্স করেছে...মানে ওরা হাইজ্যাক করে এই দুটো মানুষকে প্রিন্সিপ্যালের ঘরে নিয়ে যেতে পারলে ...মানে ওরা জানে আমরা বেঁচে গেলাম। কোনওভাবে ৫ মিনিটের জন্য বলে ওরা নিয়ে গেলেন এই ২টো মানুষকে। তারপর থেকে আর এই দুটো মানুষকে দেখতে পাইনি।" 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।