কলকাতা: আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় আরও দু'জন গ্রেফতার। মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে আগেই গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। শনিবার রাতে আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকেও গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা CBI. তাঁদের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ লোপাট, দেরিতে এফআইআর দায়ের করার অভিযোগ। আর সেই নিয়ে রবিবার সকালে উত্তেজনা ছড়াল সিজিও কমপ্লেক্সে। (RG Kar Case)


সন্দীপকে ফের হেফাজতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানাবে CBI. আদালতে তোলা হবে অভিজিৎকেও। তার আগে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য আজ বিআর সিংহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই মতো সিজিও কমপ্লেক্স থেকে তাঁকে বের করতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সিজিও কমপ্লেক্সে অভিজিৎকে দেখে বিক্ষোভ করেন সাধারণ মানুষ। কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠে স্লোগান। অভিজিৎকে জুতোও দেখানো হয়। (Sandip Ghosh) প্রেসিডেন্সি জেল থেকে বের করে নিয়ে গিয়ে আদালতে তোলা হবে সন্দীপকে।


CBI সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্দীপ ও অভিজিতের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ২৩৮ (তথ্য-প্রমাণ লোপাট), ১৯৯ (সরকারি কর্মী হয়ে আইন অমান্য), ৬১ (২) (ষড়যন্ত্র) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর আগে, আদালতে তাঁদের ভূমিকার সমালোচনা করেছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি জানান, এক মহিলা চিকিৎসককে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে বলে টালা থানার পুলিশকে ফোন করে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছিল। ডেপুটি সুপার পরিবারের সদস্যদের ফোন করে প্রথমে জানান, তাঁদের মেয়ে অসুস্থ। পরে বলা হয়, সুইসাইড করেছেন। ঘটনা যেখানে ঘটেছে, সেটা হাসপাতাল। আধিকারিকরা সবাই চিকিৎসক। তাই সলিসিটর জেনারেল প্রশ্ন তোলেন, কোনটা অজ্ঞান, কোনটা সুইসাইড আর কোনটা খুন সেটা দেখেই বোঝা সম্ভব চিকিৎসকদের। তাহলে কেন সংজ্ঞাহীন বা সুইসাইড বলা হল? এভাবে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্য কী ছিল?


ওই দিনই সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে আদালতও।  প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় প্রশ্ন তোলেন, ঘটনার পর পরই কেন কলেজ কর্তৃপক্ষ FIR করেননি? অধ্যক্ষেরই তো অবিলম্বে FIR করা উচিত ছিল। কিন্তু তিনি তা করেননি কেন? ওই সময় অধ্যক্ষের সঙ্গে কে যোগাযোগে ছিলেন? ইস্তফা দেওয়ার পরই কী করে অধ্যক্ষকে অন্য মেডিক্যাল কলেজে নিয়োগ করা হল?


গত ২২ অগাস্ট প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন তুলেছিলেন, সকাল সাড়ে ৯টায় দেহ উদ্ধার হয়। আর রাত সাড়ে ১১টায় এফআইআর দায়ের হয়। প্রায় ১৪ ঘণ্টা পরে এফআইআর দায়ের হল কেন? সলিসিটর জেনারেল সেই সময় অভিযোগ করেন যে, তদন্তে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে CBI-কে। অপরাধের জায়গা আগের মতো নেই। ঘটনার পাঁচ দিন পর মামলার তদন্তভার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে ওঠে যখন, তত ক্ষণে সব বদলে গিয়েে বলে অভিযোগ করা হয়। তথ্যপ্রমাণ সংরক্ষণে দেরি হয়েছে বলে মেনে নেয় আদালতও।  


তাই সন্দীপ এবং অভিজিতের গ্রেফতারিতে মুখ খুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর বক্তব্য, 'গ্রেফতার টালা থানার ওসি, প্রমাণিত হল প্রমাণ লোপাট করেছিল পুলিশ। চিকিৎসক ধর্ষণ-খুনের তদন্তকে বিপথে চালনা করতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পুলিশের। কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের পরিকল্পনাতেই প্রমাণ লোপাট। ইস্তফা দেওয়া উচিত মুখ্যমন্ত্রীর, সাসপেন্ড করা উচিত পুলিশ কমিশনারকে'। শুধু তাই নয়, সন্দীপের গ্রেফতারির খবরে হতাশা থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠক করেননি বলেও দাবি করেন তিনি।