প্রকাশ সিনহা, অনির্বাণ বিশ্বাস, কলকাতা : তোলাবাজি যাকে তাকে দিয়ে করানো যায় না। সন্দীপ ঘোষের জন্য একেবারে উপযুক্ত ব্যক্তি ছিলেন আশিস পাণ্ডে। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতাতেই নাকি আর জি কর মেডিক্যালে  তোলাবাজি করত আশিস পাণ্ডে। গ্রেফতারির পর দিন, আর জি কর মেডিক্যালের টিএমসিপি ইউনিটের সভাপতি আশিস পাণ্ডেকে আদালতে পেশ করে, এমনটাই দাবি করল সিবিআই। আপাতত ৩ দিন আশিস পাণ্ডেকে সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিলেন বিচারক। 


নামেই ডাক্তার! কিন্তু আদতে কি ডাক্তারি ছাড়া তোলাবাজি, কাটমানি নেওয়া, ভয় দেখানো, হুমকি দেওয়ার মতো যাবতীয় অনৈতিক ও বেআইনি কাজই করতেন সিবিআই-এর হাতে ধৃত তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা আশিস পাণ্ডে? আর জি কর মেডিক্য়াল কলেজের মতো প্রথিতযশা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে এসে কি দুর্নীতিতে সন্দীপ ঘোষের যোগ্য় শিষ্য় হয়ে উঠেছিলেন তিনি?


ধৃত আশিস পাণ্ডেকে শুক্রবার আদালতে পেশ করে সিবিআই ইঙ্গিতপূর্ণভাবে দাবি করে,  তোলাবাজি যাকে তাকে দিয়ে করানো যায় না। সন্দীপ ঘোষের জন্য একেবারে উপযুক্ত ব্যক্তি ছিলেন আশিস পাণ্ডে। আশিস পাণ্ডের জন্য 'পঞ্চবাণ' তৈরি করে রেখেছিল সিবিআই।  হাউসস্টাফ হিসেবে আশিসের নিয়োগে অনিয়ম, সন্দীপ ঘোষের পৃষ্ঠপোষকতায় 'থ্রেট কালচার' চালানো, জুনিয়রদের পাশাপাশি সিনিয়র ডাক্তারদের হুমকি, 'হাউজস্টাফ' করে দেওয়ার নামে কাটমানি তোলা, তোলাবাজি ও ঘুষ নেওয়ার মতো একের পর এক চাঞ্চল্যকর দাবি করে সিবিআই। 


সিবিআই আইনজীবী বলেন, তদন্ত করতে গিয়ে সিবিআই জানতে পেরেছে, ২০২৩ ও ২০২৪ এ পরপর ২ বছর আর জি কর মেডিক্যালে 'হাউজ স্টাফ' হিসাবে আশিস পাণ্ডেকে নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর 'হাউজ স্টাফ' হওয়ার কোনও যোগ্যতাই ছিল না।  সিবিআই আইনজীবী আরও জানান, তদন্ত করতে গিয়ে একাধিক মেডিক্যাল পড়ুয়া ও জুনিয়র ডাক্তারদের বয়ান নেওয়া হয়েছে।  তাঁদেরকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আশিস পাণ্ডের বিরুদ্ধে।  আর এই গোটা বিষয়টির মাথায় বসেছিলেন সন্দীপ ঘোষ।  সন্দীপ ঘোষের পৃষ্ঠপোষকতায় চলত হুমকি দেওয়া।  আরও চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করে এরপর সিবিআই আইনজীবী বলেন, শুধুমাত্র মেডিক্যাল পড়ুয়া ও জুনিয়র ডাক্তারদেরই নয়, সিনিয়র ডাক্তারদেরও গ্রামে,প্রত্যন্ত এলাকায় বদলি করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হত। 


সিবিআইয়ের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ শুনে আশিস পাণ্ডের আইনজীবী বলেন, জুনিয়র ছেলে সিনিয়র ডাক্তারদের হুমকি দেবে কী করে? উত্তরে সিবিআই আইনজীবী বলেন, হুমকি দেওয়ার কোনও বয়সসীমা হয় না। আশিস পাণ্ডের বিরুদ্ধে শুধু হুমকি নয়, তোলাবাজি ও ঘুষ নেওয়ার দাবিও করেন সিবিআই আইনজীবী। তিনি বলেন, আর জি কর হাসপাতালে 'ঘুষ-চক্র' 'সিন্ডিকেট-চক্র' নিয়ন্ত্রণ করতেন আশিস পাণ্ডে। বয়ানে একাধিক মেডিক্যাল পড়ুয়া জানিয়েছেন তাঁদের কাছ থেকে ঘুষ চাওয়া হয়েছিল। সন্দীপ ঘোষ সরাসরি কারও কাছ থেকে ঘুষ চাইতেন না। এই কাজের জন্য সামনে রেখেছিলেন আশিস পাণ্ডেকে । হাউজস্টাফ করে দেওয়ার নাম করে কাটমানি তোলা হত টাকা। 


তখন আশিস পাণ্ডের আইনজীবী বলেন, সিবিআই যে অভিযোগ করছে আশিস পাণ্ডে হুমকি দিত, ঘুষ চাইত, তোলাবাজি করত তার প্রমাণ কোথায়? কারা এসে বলল?  তখনই সিবিআই তদন্তকারী অফিসার মণীশ উপাধ্যায় উঠে আসেন। কেস ডায়েরি এগিয়ে দেন বিচারকের দিকে। তিনি বলেন,এতে সমস্ত অভিযোগকারীর বয়ান আছে। কেস ডায়েরিতে দেখে নিন প্রত্যেকটা পাতা হাইলাইট করা আছে। 


বিচারক বলেন, এটা তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়। আশা করি আরও তথ্যপ্রমাণ সিবিআই যোগাড় করতে পারবে। তারপর তৃণমূল ছাত্র পরিষদের চিকিৎসক নেতা আশিস পাণ্ডেকে ৩ দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত।  


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।  


আরও পড়ুন: Medical College Corruption: দুই মেডিক্যাল কলেজে পরীক্ষায় দুর্নীতির অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গড়ল রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়