অনির্বাণ বিশ্বাস, কলকাতা : গতকাল রাতে আরজি কর হাসপাতালের এমার্জেন্সি ওয়ার্ড থেকে ধ্বংসলীলা চালাতে চালাতে ভিতরে ঢোকা হয়েছে। বেশ খরচ সাপেক্ষে তৈরি করা সিসি ওয়ার্ডেও তাণ্ডবলীলা চালায় দুষ্কৃতীরা। অন্য সময় এখানে রোগী ভর্তি থাকে, কিন্তু জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের জেরে এখন কোনও রোগী না থাকলেও, এই ওয়ার্ডে কাঁচ, ওষুধের স্টোর থেকে শুরু করে আলমারি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তছনছের তালিকায় রয়েছে দামি দামি মেডিক্যাল সরঞ্জামও। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, গতকাল সোয়া ১২টা থেকে শুরু হওয়া এই তাণ্ডবলীলা গোটা এমার্জেন্সি ওয়ার্ডজুড়ে চালানো হয়েছে। 


এমার্জেন্সি ওয়ার্ডে ঢুকতে গেলে পর পর দুটি গেট রয়েছে। তারপরে ২টি অ্য়াডমিনিস্ট্রেটিভ ব্লক। কোথাও অ্যাডমিশন সংক্রান্ত তথ্য, কোথাও মে আই হেল্প ডেস্কের তথ্য। তারপরে আরও একটি গেট। দু'টি কোলাপসিবল গেট ভাঙা হয়। তারপর একের পর এক যে ওয়ার্ড রয়েছে সেখানে ভাঙচুর চালাতে চালাতে এগোতে থাকে দৃষ্কৃতীরা। শেষপ্রান্তে থাকা CCU ওয়ার্ডে ভাঙচুর চালানো হয়। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, দৃষ্কৃতীরা কি তথ্য প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছিল ? 


RG কর হাসপাতালে (RG Kar Hospital) মহিলা চিকিৎসকের নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ মিছিল, জমায়েতের উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতে, ঠিক ১১.৫৫ মিনিটে। স্লোগান তোলা হয়েছিল, মেয়েরা রাত দখল করো। শুধু বাংলায় নয়, গোটা দেশে, এমনকী দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছিল শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের রেশ। শঙ্খধ্বনি, মোমবাতি মিছিল, প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, হোর্ডিং - সব মিলিয়ে রাতের দখল সত্যিই নিয়েছিল আমজনতা।


তবে শান্তিপূর্ণ সেই আন্দোলনের মধ্যেই অশান্ত হয়ে উঠল আর জি কর মেডিক্যাল হাসপাতাল। ৩০-৩৫ জন দুষ্কৃতী মিলে তাণ্ডব চালাল হাসপাতালে। ভাঙা হল চেয়ার, আন্দোলনকারীদের মঞ্চ, জরুরি বিভাগের সরঞ্জাম। প্রায় মিনিট ২০ ধরে চলল তাণ্ডব। পুলিশ ও ব়্যাফ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে পালিয়ে বাঁচল। পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হল। পরে হামলাকারীদের ঠেকাতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ল পুলিশ। করা হল লাঠিচার্জ। দুষ্কৃতীদের সঙ্গে বাঁধল খণ্ডযুদ্ধ। পুলিশকে লক্ষ্য করে চলল ইটবৃষ্টি।


আর এই পরিস্থিতিতে কড়া প্রতিক্রিয়া দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। অভিষেক গভীর রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, 'আর জি কর হাসপাতালে গুণ্ডামি ও ভাঙচুর সব সীমা অতিক্রম করে গিয়েছে। জনপ্রতিনিধি হিসাবে আমি কলকাতা পুলিশ কমিশানারের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁকে বলেছি, এই হিংসার নেপথ্যে থাকা প্রত্যেককে চিহ্নিত করতে হবে। যারা দায়ী, প্রত্যেককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় আনতে হবে। তারা রাজনৈতিকভাবে যে দলেরই সমর্থক হোক না কেন। প্রতিবাদী চিকিৎসকদের দাবি যুক্তিসঙ্গত। সরকারের থেকে অন্তত এটা তাঁরা আশা করতেই পারেন। তাঁদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সর্বাধিকার পাওয়া উচিত।' 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।