কলকাতা: আর জি কর কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত কাজে যোগ দেননি জুনিয়র ডাক্তাররা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে গতকাল রাতে বৈঠক হলেও, কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত এখনও পর্যন্ত নেননি তাঁরা। আর সেই প্রসঙ্গে হাসপাতালের নিরাপত্তার প্রসঙ্গ আবারও সুপ্রিম কোর্টের আতসকাচের নীচে চলে এল। আর জি কর হাসপাতালের পরিকাঠামো এবং নিরাপত্তা উন্নততর করে তোলার কাজ ধীরগতিতে এগোচ্ছে বলে দাবি করেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। এর জবাবে রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিবল জানান, আগামী ১৪ দিনের মধ্যে সব কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। (RG Kar Hospital Securities)


গতকাল মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পরও জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে ফেরেননি বলে এদিন মন্তব্য করেন সিবল। এতে সিনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবী জানান, বেসরকারি সংস্থার ১ হাজার ৫১৪ জন নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন রয়েছে হাসপাতালগুলিতে, যা আপত্তিজনক। সঞ্জয় রায় যে সিভিক ভলান্টিয়ার ছিল, তা স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ জানান, এদের জায়গায় নিয়মিত পুলিশকর্মীদের নিয়োগ করতে হবে। (RG Kar Case)


এর প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, "এখনও আবার চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের সাত দিনে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়োগ করা হচ্ছে। তারা গোটা হাসপাতালে ঘুরে বেড়াবে। এতে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে কী করে? একজন সিভিক ভলান্টিয়ার দ্বারা এই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। অথচ বলা হচ্ছে, বাইরের সংস্থা থেকে নিয়োগ হবে। এভাবে নিয়োগের ক্ষেত্রে মানসিক পরীক্ষা হয় কি? চিকিৎসক, বিশেষত মহিলা চিকিৎসকরা কীভাবে নিজেদের নিরাপদ মনে করবেন? কর্মশক্তির বড় অংশই তরুণী, তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।" 


হাসপাতালের পরিকাঠামো এবং নিরাপত্তা নিয়ে আদালতের তরফে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, বাজেট বরাদ্দ ছাড়া তাতে কতদূর কাজ হয়েছে, জানতে চান প্রধান বিচারপতি। জবাবে সিবল জানান, অতিরিক্ত শৌচাগার, সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। আগামী সাত থেকে ১৪ দিনের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ হবে। পুরুষ এবং মহিলা ডাক্তারদের জন্য বিশ্রামাগার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে, তাও সম্পন্ন হবে সাত থেকে ১৪ দিনের মধ্যে।


নিরাপত্তার প্রশ্নে রাজ্য সরকারের উপর আস্থা রাখার কথা বলেন সিবল। জানান, হাসপাতালে মহিলা নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্য়া বাড়ানো হচ্ছে। তাঁদের প্রশিক্ষণ চলছে। বাকি কাজও দ্রুত সম্পন্ন হবে। তাতে প্রধান বিচারপতি বলেন, "কবে প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ হবে? সমস্যা হল, আপনারা নিরাপত্তার বিষয়টি চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের হাতে ছাড়ছেন। কেন এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে রাজ্য।" সবকিছু যাচাই করেই এগনো হচ্ছে বলে জানান সিবল। কিন্তু প্রধান বিচারপতি বলেন, "২৮টি সরকারি হাসপাতাল রয়েছে রাজ্যে। ১৭টি সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে সংযুক্ত। সরকারি হাসপাতালের কথা বলছি আমরা, যেখানে ১৮ থেকে ২৩ বছর বয়সি অল্পবয়সি তরুণীরা কাজ করেন। তাদের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে। চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ করলে নিরাপত্তাহীনতা থাকবে।" আদালত জানিয়েছে, আগামী এক বছরের মধ্যে বাইরের সংস্থা থেকে ১ হাজার ৫১৪ জন নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সিনিয়র এবং জুনিয়র ডাক্তাররা। 


প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, "ডাক্তারদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। অন্তত সরকারি হাসপাতালে পুলিশ থাকা দরকার। ইন্টার্ন, পড়ুয়ারা বাড়ি ছেড়ে কলকাতায় কাজ করতে আসেন। ওদের জন্য কী করছেন? জেলাশাসক, পুলিশ সুপারকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সিসিটিভি বসাতে হবে, বিশ্রামাগারেও বসাতে হবে সিসিটিভি, নির্দিষ্ট নির্দেশিকা থাকতে হবে এই সংক্রান্ত।" প্রধান বিচারপতি বলেন, "আপনারা বলেছিলেন, আর জি করে ৪১৬টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসবে। কিন্তু মাত্র ৩৭টি বসানো হয়েছে।" সিবল জানান, কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।


হাসপাতালে বায়োমেট্রিক প্রযুক্তি বসানোর পক্ষে সওয়াল করেন প্রধান বিচারপতি। তাঁর বক্তব্য, "আর জি করে রাতে যেখানে মেয়েরা থাকে, সেখানে বায়োমেট্রিক প্রযুক্তি থাকবে না কেন? সেমিনার হলে বিশ্রাম নিয়ে যান যে মহিলারা তাঁরা ওই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারেন। স্বাস্থ্যসচিব রয়েছেন যেখানে, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে জানান। ১৮ থেকে ২৩ বছরের অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরা রয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, এমন ঘটনা যে কারও সঙ্গে ঘটতে পারে।" বায়োমেট্রিক প্রযুক্তি বসানো যেতে পারে বলে জবাবে জানান সিবল।


প্রধান বিচারপতি জানান, আদালতে স্বাস্থ্যসচিব যে হলফনামা জমা দিয়েছেন, তাতে সরকারি হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ডিউটি রুম, শৌচাগার, সিসিটিভি ক্যামেরার উন্নতির কথা বলা হয়েছে। রাজ্যের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে ২৮টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে, কলকাতায় রয়েছে ৯টি। কলকাতার ১৭টি সরকারি হাসপাতাল মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে যুক্ত। সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও ৮৭টি হাসপাতাল রয়েছে। শৌচাগার, বিশ্রামাগার, অতিরিক্ত সিসিটিভি ক্যামেরার জন্য বাজেটে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে যদিও। কিন্তু সাত থেকে ১৪ দিনের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে। ৭১৭টি অতিরিক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় সিনিয়র এবং জুনিয়র ডাক্তারদের রাখা যেতে পারে। জেলাশাসক, প্রত্যেক হাসপাতালের অধ্যক্ষ এবং সিনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিদের পরামর্শ নিতে হবে, যাতে তাঁদের সুপারিশ অনুযায়ী সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে এই কাজ শেষ করতে হবে।