ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা: মাঝরাতে RG কর মেডিক্যাল কলেজে প্রায় ৪০ মিনিট ধরে চলল কয়েকশো লাঠিধারীর তাণ্ডব। জাতীয় পতাকা, আর মুখে উই ওয়ান্ট জাস্টিস স্লোগান দিয়ে রড, কাচের বোতল, ইট হাতে দাপিয়ে বেড়াল দুষ্কৃতীরা। RG কর হাসপাতাল থেকে শুরু করে  শ্যামবাজার পর্যন্ত এলাকা ঘণ্টাতিনেক ধরে হয়ে ওঠে দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল। রাতে আর জি কর হাসপাতালে যখন হামলা চালানো হয়। তখন সেখানে কর্মরত ছিলেন নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসকরা। হামলায় জেরে প্রবল আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে তাঁদের মধ্যে। সকাল থেকে তীব্র বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন হাসপাতালের নার্সরা। পুলিশকর্মীদের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা। সকাল থেকে কাজে যোগ দেননি নার্সরা। নিরাপত্তার ব্যবস্থা না হলে কাজে যোগ দেওয়া হবে না বলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন নার্সরা। 'no security no service' স্লোগান তুলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন নার্সিং স্টাফরা। রাতের ঘটনা নিয়ে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ করছেন নার্সরা। পুলিশ কোনও সাহায্যই করেনি, বরং উল্টো নার্সদের পুলিশকে নিরাপত্তা দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ। নার্সদের দাবি, সব ভাঙাচোরার পরে পুলিশ বেরিয়ে টিয়ার গ্যাস ছুড়েছে পুলিশ।


হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ:
আন্দোলনরত নার্সদের অভিযোগ, বুধবার গভীর রাতে এত গন্ডগোল হওয়া সত্ত্বেও হাসপাতালের কোনও কর্তৃপক্ষ কারও খোঁজ নেয়নি। এক নার্সের অভিযোগ, 'সবার ফোন নম্বর রয়েছে, কোথায় ডিউটি সব জানে। একদিন না এলে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে। কিন্তু কালকের ঘটনার সময়ে বা তার পরে কর্তব্য়রত কোনও নার্সের খোঁজ নেওয়া হয়নি।'


গতকালের ঘটনার পরে আজ সকাল থেকেই কড়া নিরাপত্তায় মোড়ানো হয়েছে আর জি কর হাসপাতাল চত্বর। তা নিয়েও ক্ষোভ দেখিয়েছেন নার্সরা। তাঁদের ক্ষোভ, 'কাল পুলিশ ছিল না, দরকার নেই। আর লাগবে না আজ।' পুলিশের বিরুদ্ধেই অভিযোগ এনেছেন নার্সদের একাংশ। এক নার্সের অভিযোগ, 'পুলিশের সাহায্যে কাল গন্ডগোল হয়েছে। পুলিশ সরে গিয়েছে, ভিতরে আশ্রয় নিয়েছে আর গুন্ডারা ঢুকেছে।'


বুধবার রাতের ঘটনায় বিবরণ দিতে গিয়ে সকালেও আতঙ্কে কাঁটা নার্সিং স্টাফরা। কেউ বলছেন নার্সিং ড্রেস পরে ছুটে পালাতে হয়েছে তাঁদের। বেশ কয়েকজনের অভিযোগ, কালকের ঘটনায় নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রাণহানিও ঘটতে পারত। কেউ কোনও খোঁজ নেয়নি, কেউ কোনও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেনি বলে অভিযোগ তাঁদের। কর্তৃপক্ষ নাকি নিজেদের নিরাপত্তা নিজেদের হাতে- এমনটাই বলেছে বলে অভিযোগ নার্সদের।


আশ্রয় দিতে হয়েছে পুলিশকে?
নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে পুলিশ। কিন্তু বুধবারের রাতের ঘটনায় উল্টোটা হয়েছে বলে অভিযোগ। বিক্ষোভরত নার্সরা জানাচ্ছেন, পুলিশ তো বাঁচাতে আসেনি। বরং পুলিশকেই নিরাপত্তা দিতে হয়েছে তাঁদের। পুলিশ নীচ থেকে পালিয়ে এসে উপরের তলায় আশ্রয় নিয়েছে বলে অভিযোগ। এক নার্স বলেন, 'পুলিশকেই নিরাপত্তা দিতে হয়েছে নার্সদের। ওরা সিভিল ড্রেস চাইছিল।' শৌচাগারেও নাকি লুকিয়েছে পুলিশ। এক নার্স বলছেন, 'কাল বাথরুমে ঢুকে বলছে লুকোনোর জায়গা দিন।' এমনকি গাইনি ডিপার্টমেন্টে বা প্রসূতি বিভাগের GS-এ এসে লুকিয়েছে পুলিশ। ওখানে শৌচাগারে গিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে পুলিশ, অভিযোগ এমনটাই। 


এদিন সকাল থেকে কাজে যোগ দেননি কেউ। তাঁদের দাবি, নার্সিং সুপার এলে তাঁকে বলা হবে নিরাপত্তার কথা। আগে লিখিতভাবে নিরাপত্তার প্রতিস্রুতি দিতে হবে, তারপরেই কাজে যোগ দেওয়া হবে। যদিও কাল রাতের এই ঝামেলার পর থেকে পরিষেবা চলেছে প্রসূতি বিভাগে, সিজারও হয়েছে।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে। 


আরও পড়ুন: রাসবিহারী বসুর এই শিষ্যের এক বোমায় কেঁপে গিয়েছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্য, স্মৃতিচারণায় বসন্ত বিশ্বাসের মন্ত্রী-ভাইপো