সন্দীপ সরকার ও ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, কলকাতা : থ্রেট কালচার নিয়ে কার্যত নিজেদের যাবতীয় ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন একের পর এক জুনিয়র চিকিৎসক। আরজি কর মেডিক্য়ালে ধর্ষণ, খুনের পরই রাজ্য়ের একের পর এক সরকারি মেডিক্য়াল কলেজ থেকে সামনে আসতে শুরু করে থ্রেট কালচারের অভিযোগ। ভাইরাল হয়েছে হুমকি-শাসানির একাধিক অডিও ক্লিপ। এই আবহে এবার কাঠড়ায়আরজি কর মেডিক্যালের হাউসস্টাফ ও TMCP নেতা আশিস পাণ্ডে। তাঁর বিরুদ্ধে থ্রেট কালচার নিয়ে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাঁদের দাবি, আরজি কর মেডিক্যালে তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের দিন অর্থাৎ ৯ অগাস্ট এই আশিস পাণ্ডেকে দেখা গেছিল সেমিনার রুমেও। সন্দীপ ঘোষের মদতে আরজি কর মেডিক্য়ালে হুমকিরাজ চালাতেন এই আশিস পাণ্ডে, এমনই অভিযোগ জুনিয়র চিকিৎসকদের।


নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে, বুধবার নবান্নে ফের মুখ্য়সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। নিরাপত্তায় বারবার জোর দেওয়ার নেপথ্য়ে, যে কারণগুলো রয়েছে তার মধ্য়ে অন্য়তম হল থ্রেট কালচার। বুধবার জুনিয়র ডাক্তাররা যে ইমেল পাঠান, সেখানে উল্লখ করা হয়েছে থ্রেট কালচারের কথা।বৃহস্পতিবারও সেই থ্রেট কালচার নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন এক জুনিয়র চিকিৎসক। আর তাঁর অভিযোগের তির আরজি কর মেডিক্যালের হাউসস্টাফ ও TMCP নেতা আশিস পাণ্ডের দিকে।


অভিযোগকারী জুনিয়র চিকিৎসক বলেন, "২০২১ সালে তৎকালীন ফাইনাল ইয়ার ছাত্র আশিস পাণ্ডে অন-ডিউটি ডাক্তার মৈনাক রায়কে দলবদ্ধভাবে এবং নির্মমভাবে মারধর করে। যতদিন ধরে সন্দীপ ঘোষ আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পদে ছিলেন, ততদিন ধরে এই যে সন্দীপ ঘোষ ঘনিষ্ঠ ছাত্র যেমন- আশিস পাণ্ডে টিএমসিপি ইউনিটের নাম করে ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন ছাত্র-ছাত্রীকে বিভিন্ন পরীক্ষায় ফেল করিয়েছেন। এই ফেল করানোগুলো এতটাই সুপরিকল্পিতভাবে করা হত  যে তাঁদের প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষায় ফেল করানো হত যাতে তাঁরা রিভিউ না দিতে পারেন। এই প্ল্যানের একাংশ রুম নম্বর ১৪, আইএমএস হস্টেল...এইসব জায়গায় বসে করা হত। আমরা বহু চেষ্টা করেছি যাতে আমাদের ব্যাচমেটরা ফেল না করেন, কিন্তু আমরা সেটা আটকাতে পারিনি।"

বুধবার জুনিয়র ডাক্তাররা যে ইমেল পাঠান, সেখানেও উল্লখ ছিল থ্রেট কালচারের। সেই অভিযোগই উঠেছে আর জি কর মেডিক্যালের হাউসস্টাফ ও TMCP নেতা আশিস পাণ্ডের বিরুদ্ধে। ৯ অগাস্ট অর্থাৎ তরুণী চিকিৎসকের মৃতদেহ উদ্ধারের দিন যাঁর গতিবিধি CBI-এর র‍াডারে রয়েছে। আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশের দাবি, আর জি কর মেডিক্যালে তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের দিন অর্থাৎ ৯ অগাস্ট এই আশিস পাণ্ডেকে দেখা গেছিল সেমিনার রুমেও।আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশের অভিযোগ, এই আশিস পাণ্ডে মেডিক্য়াল কলেজে কলেজে চলা থ্রেট কালচারের একজন মাথা! সম্প্রতি জুনিয়র চিকিৎসকদের তরফে রাজ্য সরকারের কাছে 'চিকিৎসক সম্প্রদায়ের শত্রু' বলে যে তালিকা দেওয়া হয়েছিল, তাতে আর জি কর মেডিক্য়াল কলেজে ১১ নম্বরে নাম রয়েছে এই আশিস পাণ্ডের। যে তালিকায় আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে থ্রেট সিন্ডিকেটের কিংপিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়। জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, সন্দীপ ঘোষের মদতে আর জি কর মেডিক্য়ালে হুমকিরাজ চালাতেন এই আশিস পাণ্ডে।

আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের তরফে দেওয়া এই ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে, এক যুবক হাতে করাত নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি, গত বছরের ১২ অক্টোবর রাতে থ্রেট সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় আর জি করের মানিকতলার একটি হস্টেলে হামলা চালায় আশিস পাণ্ডের দলবল। করাত হাতে যাঁকে দেখা যায়, তিনি আশিস পাণ্ডের শাগরেদ কুণাল শাহ। পরে এই ঘটনায় মানিকতলা থানায় পরে হামলার অভিযোগ দায়ের হয়।