কলকাতা: করোনার সময় হাসপাতালের টাকা নয়ছয় থেকে মেডিক্য়াল বিপজ্জনক বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য বিক্রি। আরজি কর মেডিক্যালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে, প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলির তালিকায় রয়েছে এরকম ভুরিভুরি সব চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। শুক্রবার ঘণ্টাখানেক সঙ্গে সুমন অনুষ্ঠানেও অভিযোগের ঝুড়ি উপুর করলেন তিনি।  


আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি বলছেন, 'আরজি করে ১৬ বছর কাজ করেছি। আরজি করে ভাল একটা টিম ছিল। পূর্ব ভারতে ১ নম্বর কলেজ। এখানকার পড়ুয়ারা খুব বিদ্বান। পরিবেশটা ভাল ছিল।' তাহলে হঠাৎ আরজি করে কী হল? সেটাও স্পষ্ট করে জানান তিনি। বলছেন, 'ড. বটব্যাল অবসর নেওয়ার পরে সন্দীপ ঘোষ দায়িত্ব নেন। তারপর উনি ধীরে ধীরে রং দেখাতে শুরু করেন। ২ মাসের মধ্যে পড়ুয়াদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।' পড়ুয়াদের উপর সন্দীপ ঘোষ লাগাতার অত্যাচার করেছিলেন সন্দীপ ঘোষ, অভিযোগ আখতার আলির। তিনি বললেন, 'বেশ কিছু ছাত্রের বিরুদ্ধে বেশ কিছু খারাপ কেস দিয়ে দিয়েছিলাম। যেহেতু তাঁরা ওঁর দাবি মানেনি বলে। আমি আর পারছিলাম না। আমার বিবেক আছে। এই অন্যায় মেনে নিতে পারছিলাম না।'
 
সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক অভিযোগ ছিল। প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি বলছেন, 'ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে কিছু খবর আমরা শুনেছিলাম। ওর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছিল, ভিজিল্যান্স ফাইল ছিল, উনি এতটাই প্রভাবশালী তাতে ওঁর প্রাইজ পোস্টিং হয়ে যায়।' আগে যেমন একাধিক অভিযোগ করেছেন তিনি। এদিনও একাধিক অভিযোগ করেন, 'কিছু অফিসার ছিল সন্দীপ ঘোষের খাস লোক। সরকারের বেতন পেয়ে সন্দীপ ঘোষের হয়ে কাজ করেন। ক্রিম ডাক্তারদের ট্রান্সফার করা হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে থাকায় একাধিক ডাক্তারের রাতারাতি ট্রান্সফার হয়েছে। স্বাস্থ্যভবনে ফিট করা ছিল লোক। সন্ধেবেলা আসতেন, রাতে বাড়ি যেতেন। গাড়ির লগবুক দেখলে পাবেন।' কিন্তু কীভাবে এত প্রভাবশালী তিনি? আখতার আলির বক্তব্য, 'কোনও মানুষের উপর যদি কারও সাপোর্ট না হয়, ব্যাকিং না হয়...মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে তাঁর ডিমোশন করে প্রফেসর করে পাঠাতে হয়। সেখানে কিছুদিন কাজের পরে তাঁকে হঠাৎ প্রিন্সিপাল করে দেওয়া হয়। যেটা নিয়ম মেনে হয়নি। ওঁর জন্য আইন বদলে যাচ্ছে।'


দীর্ঘদিন ধরে এই অভিযোগ সামনে এনেছেন তিনি। তাঁর দৌড়াদৌড়িতেই শুরু হয়েছিল তদন্ত, তৈরি হওয়া তদন্ত কমিটিতে তিনিও ছিলেন। কিন্তু রিপোর্ট দিতেই বদলি হয়ে যান তিনি। কীভাবে সমস্যার মধ্যে পড়েছিলেন, তার উদাহরণ দিতে গিয়ে আখতার আলি বলেন, 'আমি কোনও জায়গা থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাইনি। রুগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানকে যখন বললাম তখন আমায় বললেন সন্দীপ ঘোষ খুব সৎ লোক। তোমার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেব।'


বেআইনিভাবে বিপজ্জনক বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য বিক্রি, জিম এবং নিজের চেম্বারের সৌন্দর্যায়নের জন্য কোভিড ফান্ডের অপব্যবহার, টাকার বিনিময়ে বেআইনিভাবে চিকিৎসক-অফিসারদের বদলি, অযোগ্যদের কাজের বরাত, সর্বোপরি কোটি কোটি সরকারি অর্থের অপচয়! আরজি কর মেডিক্যালের তৎকালীন অধ্য়ক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে এরকমই ভুরি ভুরি অভিযোগ তুলে অ্য়ান্টি করাপশন ব্রাঞ্চ থেকে ভিজিল্য়ান্স কমিশনার, টালা থানা-  নানা জায়গায় অভিযোগ করেছিলেন প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি।


২০২৩-এর ১৪ জুলাই- ভিজিল্যান্স কমিশনারকে লেখা অভিযোগপত্রে একটি-দুটি নয়, আরজি কর মেডিক্যালের প্রাক্তন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ১৫ রকমের অভিযোগের কথা উল্লেখ করেছিলেন আখতার আলি। যেখানে সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে, সরকারি অর্থের অপচয়, টেন্ডার না ডেকে সরকারি জায়গা খাবারের দোকান, ক্যাফে, ক্যান্টিন, সুলভ শৌচালয়ের জন্য বরাদ্দ করা, ভেন্ডার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে স্বজন পোষণ, অযোগ্য়দের কোটি কোটি টাকার বরাত, ইচ্ছাকৃতভাবে আর্থিক নিয়ম এড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি। তিনি জানিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে গিয়েও একটা অভিযোগ জানিয়েছিলেন তিনি। আগেই তিনি একবার অভিযোগ করেছিলেন, 'উনি ছাত্রদের কাছ থেকে পয়সা নিয়ে ফেল করাতেন। উনি ছাত্রদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন। ওনার কতগুলো পেটোয়া ছাত্র ছিল যাঁরা অন্য ছাত্রদের ওপর নির্যাতন করত। তাঁদের মারধর করা, পয়সা কালেকশন করা-এটার বিরুদ্ধে ছাত্ররা এক মাসের ওপরে আন্দোলন করেছে। ছাত্ররা কুকুরের মতোন ওনাকে তাড়া করেছিল। তখনও কিন্তু সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি ওনার বিরুদ্ধে।উনি আবার চেয়ারে বসে গেলেন।'


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।


আরও পড়ুন:  অস্ত্র সাপের বিষ ভরা ইঞ্জেকশন? বিমার টাকা হাতাতে ভয়াবহ পদ্ধতিতে স্ত্রীকে 'খুন' স্বামীর