কলকাতা: আরজি করের যে সেমিনার হল থেকে মহিলা চিকিৎসকের দেহ মিলেছিল, সেই সেমিনার রুমেরই একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ওই সেমিনার রুম ভিড়ে ঠাসা। যেখানে থেকে দেহ উদ্ধার হয়েছে, যেখানে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ উঠেছে। সেই জায়গাতেই কেন এত ভিড়, তাহলে কি তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হয়েছে?
যদিও ভাইরাল হওয়া ভিডিও নিয়ে পুলিশ দাবি করেছে কোনও তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হয়নি। বহিরাগতও কেউ ছিল না। পুলিশের পক্ষ থেকে তোলা হয়েছে কর্ডন করে দেওয়ার প্রসঙ্গ। ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন, আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার রুমের আয়তন ৫১ ফিট ও ৩২ ফিট। এর একটি অংশে দেহ ছিল। সেখানে দেহ মিলেছিল সেই জায়গাটা হাসপাতালের সাদা কাপড় দিয়ে কর্ডন করা হয়েছিল। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ৫১ ফুটের সেমিনার রুমের ৪০ ফিট পর্যন্ত কর্ডন করা ছিল। ৪০ ফিটের বাইরে ১১ ফিট এলাকায় অনেক মানুষ ছিলেন। পুলিশ বলেছে, 'চিকিৎসক-সহ সবাই ছিলেন ওই ৪০ ফিট কর্ডন করা এলাকার বাইরে।' লালবাজারের দাবি, ৪০ ফিট এলাকায় কোনও বহিরাগতরা ছিল না। পুলিশ জানিয়েছে, কর্ডন করা এলাকায় নির্দিষ্ট কয়েকজন ছিলেন। মা-বাবা-সহ নির্দিষ্ট কয়েকজন ছাড়া কর্ডন করা অংশে কেউ ছিলেন না। ডিসি সেন্ট্রাল জানিয়েছেন, বহিরাগত কেউ ছিল না। পুলিশ, হাসপাতালের কর্মী, ডাক্তারবাবুরা ছিলেন। যেটা কর্ডন করা জায়গা- ৪০ ফুটের জায়গা, সেখানে কোনও বহিরাগতর ঢোকা সম্ভব নয়। ওই এলাকায় রেস্ট্রিকটেড লোকজন ঢুকতে পেরেছিলেন।
কিন্তু সেমিনার রুমে কী করছিলেন আইনজীবী? সেই জবাব এড়িয়েছে লালবাজার। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, কেন আইনজীবী ছিলেন, তা বলতে পারবেন হাসপাতালের আইনজীবী। ঘটনাস্থল থেকে তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ কার্যত খারিজ পুলিশের।
এখনও রয়েছে প্রশ্ন:
কিন্তু পুলিশের সাংবাদিক বৈঠকের পরেও প্রশ্নগুলোর সুনির্দিষ্ট উত্তর পাওয়া যায়নি। এক্ষেত্রে কতটা কর্ডন করা হয়েছে তা মূল বিষয় নয়। ওইটুকু অংশে দেহ পাওয়া গিয়েছে বলে সেটা প্লেস অফ অকারেন্স। বাকিটা নয়, এমনটা হতে পারে না। এই ঘরের অনেকগুলো Entry-Exit থাকলেও একটা মাত্র Entry-Exit খোলা ছিল। অর্থাৎ এই প্রশ্ন ওঠে ওই Entry-Exit দিয়েই তো আততায়ী প্রবেশ করেছে এবং বেরিয়ে গিয়েছে। সেই Entry-Exit দিয়ে যদি এত লোক ভিতরে ঢোকে এবং তারপরে বেরোয়। তাহলে ওই Entry-Exit থেকে যে তথ্যপ্রমাণ মেলার কথা ছিল তা তো মিলবে না। কারণ এই যে ১১ ফুট খোলা ছিল। যাঁরা ঢুকেছেন এবং বেরিয়ে গিয়েছেন তাঁরা তো ওই Entry-Exit ব্যবহার করেছেন। তাহলে ওই Entry-Exit থেকে যে যে তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার কথা ছিল তা কি আর পাওয়া যাবে? এই প্রশ্ন উঠছে। গোটা ঘরটাকেই যেখানে অপরাধের জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত ছিল, সেখানে কর্ডনের বাকি অংশে যে যার মতো ঢুকল-বেরোল। সেখানে অপরাধী বা অপরাধীদের ছেড়ে যাওয়া কোনও চিহ্ন ছিল কি ছিল না, সেটা পুলিশ এখন কীভাবে বলবে?
এই প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টেও উঠেছে। সেখানে সিবিআইয়ের আইনজীবী জানিয়েছেন, সিবিআই তদন্তভার যখন নেয় ততদিনে ক্রাইম সিন অনেকটাই বদলে গিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের বেঞ্চের প্রশ্নের মুখেও রাজ্যকে পড়তে হয়েছে। বিচারপতিরা প্রশ্ন তুলেছেন ঘটনা ঘটার পরে সকাল ১০টা ১০ মিনিটে পুলিশের কাছে খবর গেল। আর রাতে ১১টার সময় ক্রাইম সিন সিকিওর করা হচ্ছে? সেক্ষেত্রে তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হতে পারে। এই আশঙ্কাটাই এই ভিডিও সামনে আসার পর জোরদার হয়েছে।
আরও পড়ুন: চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পরেই ভিড়ে ঠাসা সেমিনার রুমের ভিডিও ভাইরাল! ফিরহাদ বললেন...