কলকাতা : আর জি কর-কাণ্ডের পর ১০ দিন কেটে গেছে। বিচারের দাবিতে দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ছে আন্দোলন। হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তভার নিয়েছে সিবিআই। ঘটনার তদন্তভার নেওয়ার পরেই সিবিআই তৎপরতা তুঙ্গে। সোমবার নির্যাতিতার বাড়ি, লালবাজার, CGO কমপ্লেক্স ও আর জি কর হাসপাতালে যান তদন্তকারী আধিকারিকরা। নির্যাতিতার পরিবার ও লালবাজারের পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। ঘটনার তদন্তকারী দলে রয়েছেন সিবিআইয়ের দুই শীর্ষ মহিলা অফিসারকে। যাঁরা হাথরসের ঘটনায় তদন্ত করেছিলেন।

  


CBI-এর তদন্তকারী দলে রয়েছেন ১৯৯৪ ব্য়াচের IPS অফিসার সম্পদ মীনা। উত্তরপ্রদেশের হাথরস ধর্ষণকাণ্ডের তদন্তকারী দলে ছিলেন CBI-এর এই অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর। তদন্তকারী দলে রয়েছেন CBI-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সীমা পাহুজাও। তিনিও উত্তরপ্রদেশের হাথরস ধর্ষণকাণ্ডের তদন্ত করেছিলেন।

সোমবার এই মামলার তদন্তে আর জি কর মেডিক্য়াল কলেজ, নির্যাতিতার বাড়ি ও লালবাজারে গেল সিবিআইয়ের পৃথক পৃথক টিম। ৯ অগাস্ট আর জি কর হাসপাতালের সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হয় তরুণী চিকিৎসদের মৃতদেহ। CBI সূত্রে দাবি, ৮ অগাস্ট রাত থেকে ৯ অগাস্ট ভোরের মধ্য়ে আর জি কর হাসপাতালে তিনবার এসেছিল ধৃত সঞ্জয় রায়। সিবিআই সূত্রে দাবি, সঞ্জয় প্রথম হাসপাতালে ঢুকেছিল সন্ধে ৬টায়। তবে, একা নয়, তার সঙ্গে ছিল সৌরভ নামে আরেক সিভিক ভলান্টিয়ার। জরুরি বিভাগ থেকে কিছুটা দূরে ১০ মিটার দূরে সার্জিকাল ওয়ার্ডে যায়। মিনিট ১৫ সেখানে ছিল। সার্জিকাল ওয়ার্ডে সৌরভের এক দাদা ভর্তি ছিল বলে সঞ্জয় পুলিশ ও সিবিআইয়ের কাছে দাবি করেছে। সেই সৌরভের দাদাকে দেখতে যায়। ১৫ মিনিট থেকে চলে আসে।


CBI সূত্রে দাবি, সঞ্জয় দ্বিতীয়বার হাসপাতালে ঢোকে রাত ১১টায়। তখন সে একাই ছিল। CCTV-র সূত্র ধরে জানা যাচ্ছে, তৃতীয়বার তাকে চেস্ট মেডিসিন বিভাগে ঢুকতে দেখা যায়, ভোর ৪টে ৩ মিনিটে। এরপর ওই CBI সূত্রে দাবি, জেরায় তথ্য় গোপন করছে সঞ্জয়। বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তরেই মুখ বন্ধ রাখছে সঞ্জয়। তার জবাব - আমি জানি না। সূত্রের খবর, এই প্রেক্ষিতে ধৃত সঞ্জয়ের পলিগ্রাফ টেস্ট করানোর কথা ভাবছে CBI। কেন্দ্রীয় এজেন্সি সূত্রে জানা গেছে, রবিবারের পর, সোমবার। ফের একবার সঞ্জয়ের সাইকো অ্য়ানালিসিস টেস্ট করা হচ্ছে। এই পরীক্ষার জন্য় দিল্লি থেকে আনা হয়েছে বিশেষজ্ঞ সাইকোলজিস্ট।

CBI-এর তরফে দাবি, সঞ্জয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উত্তর দিচ্ছে না। সেদিন রাতে কতবার আর জি কর হাসপাতালে গেছে ? কতবার সেমিনার রুমে ঢুকেছে ? ঘটনার পর কোথায় পালিয়েছিল ? কার কার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিল ? এসব প্রশ্নেরও কোনও সদুত্তর দিচ্ছে না সে।

পুলিশ সূত্রে খবর, আর জি কর আউটপোস্টে কর্মরত সিভিক ভলান্টিয়ারের সংখ্য়া ২৭। কিন্তু, সঞ্জয় এই হাসপাতালে কর্মরত ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও কীভাবে আর জি কর মেডিক্য়াল কলেজে সঞ্জয়ের অবাধ বিচরণ ?

সূত্রের খবর, হাসপাতালের নার্সিং স্টাফ, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বেশ কয়েকজন সঞ্জয়ের পূর্ব পরিচিত ছিল। তাই যখন খুশি হাসপাতালের যে কোনও জায়গায় সে যেতে পারত। এদিকে, CBI সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে পুলিশ, সেদিন হাসপাতালে নাইট ডিউটিতে থাকা চিকিৎসক সহ হাসপাতালের একাধিক কর্মী।

সূত্রের খবর, প্রত্য়েকের বয়ান নেওয়া হয়েছে। সেদিন কে কী দেখেছেন ? তরুণী চিকিৎসককে শেষ কখন দেখেছেন ? সেমিনার রুমের উল্টোদিকে, যে জায়গাটা ভাঙা হয়েছে, সেখানে কী ছিল ? শুধুই কি দেওয়াল ? নাকি অন্য় কিছু ? ভাঙার কাজ কবে থেকে শুরু হয় ? এই সবই CBI-এর তরফে জানতে চাওয়া হয় বলে সূত্রের খবর। এখানেই শেষ নয়, জানতে চাওয়া হয় সঞ্জয় নিয়েও। ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকে ঘটনার দিন শেষ কখন, কোথায় দেখা গেছে ? তার বিরুদ্ধে আগে কখনও কোনও অভিযোগ রয়েছে কিনা, হাসপাতালে কার কার সঙ্গে সঞ্জয়ের ঘনিষ্ঠতা ছিল ? জানতে চায় CBI। এদিকে, তদন্তভার হাতে পাওয়ার পর, সোমবার লালবাজারে যান CBI আধিকারিকরা। পাশাপাশি, এদিন, তরুণী চিকিৎসকের বাড়িতেও যান CBI-এর তদন্তকারী আধিকারিকরা। কথা বলেন পরিবারের সঙ্গে।