বিটন চক্রবর্তী, শান্তিপুর (পূর্ব মেদিনীপুর) : ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইছে কিছু রাজনৈতিক দল। ঠিক এই ভাষাতেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরে স্কুল পড়ুয়াদের মিছিল, স্লোগানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ। কণ্ঠরোধের চেষ্টা বলে প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিরোধীরা। চাপ দিয়ে পড়ুয়াদের মিছিলে শামিল করা হচ্ছে বলে সুর চড়িয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।


বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের পর এবার পূর্ব মেদিনীপুর। আরজি কর মেডিক্যালে চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের প্রতিবাদে যখন উত্তাল গোটা দেশ...যখন ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছে ৮ থেকে ৮০, সর্বস্তরের মানুষ, এমনকী কোথাও কোথাও মিছিলে স্কুল পড়ুয়াদেরও শামিল হতে দেখা গেছে বলে অভিযোগ। এই আবহেই এবার শিক্ষক ও পড়ুয়াদের মিছিল-স্লোগানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে নোটিস দিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ।


কিছু রাজনৈতিক দল ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করছে। সেখানে সামিল করা হচ্ছে স্কুল পড়ুয়াদের। নোটিসে ঠিক এই ভাষাতেই সতর্ক করা হয়েছে জেলার স্কুল পরিদর্শক ও প্রাথমিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। এমনকী, জেলার শান্তিপুর দক্ষিণ প্রাথমিক সকুলের বিরুদ্ধে তাদের পড়ুয়াদের প্রতিবাদ মিছিলে সামিল করা হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে নোটিসে। পড়ুয়াদের যাঁরা ব্যবহার করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে।


পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, 'রাজ্য সরকারের শিক্ষা দফতরের নির্দেশিকা ২০১১ এবং কোর্টেরও ভার্ডিক্ট আছে যে কোনও পলিটিক্যাল বা কোনও সেমি পলিটিক্যাল ইত্যাদিতে কোনও মাইনর স্টুডেনটকে বা সটুডেনটদের ব্যবহার করা যায় না। সেটাই আমরা এখানে ওই নির্দেশ আকারে আবার সেটা মনে করিয়ে দিয়েছি সমস্ত স্কুলগুলিকে ওই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে।'


তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, 'স্কুল নিয়ে বিভ্রান্তির কোনও অবকাশ নেই। স্কুলে নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাস , পড়াশোনা এবং স্কুল নির্ধারিত যেসব কর্মসূচি সেগুলি হবে। ছুটির পর, স্কুল শুরুর আগে কে কোথায় কী করছেন নিজেদের দায়িত্বে করবেন। স্কুলের সময়ে কোনও কোনও এলাকায় কোথাও বিজেপি, কোথাও সিপিএম, কোথাও অন্য কোনও দল চাপ সৃষ্টি করছিল, চলুন মিছিল করি। বাচ্চাদের নেওয়া হচ্ছিল। যারা গোটা বিষয়টা জানে না।'


হলদিয়ার বিজেপি বিধায়ক তাপসী মণ্ডল বলেন, 'স্কুল পড়ুয়ারাও তাঁরা নিজেদের তাগিদে রাস্তায় নেমেছে, নিজেদের রক্ষার দাবিতে তাঁরা রাস্তায় নেমেছে। এই সরকার প্রথম থেকেই মানুষকে প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে সমস্ত ব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।'


সিপিএম পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পরিতোষ পট্টনায়ক বলেন, 'আর জি করের ঘটনা নিয়ে যেভাবে গোটা দেশ-দুনিয়া এবং রাজ্য তোলপাড় হচ্ছে। ৮ থেকে ৮০ বছরের সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমেছে, সরকার তত ভয় পাচ্ছে। আর ভয় পাচ্ছে বলে বিভিন্ন দিক থেকে দমনপীড়ন করার চেষ্টা করছে।'

সব মিলিয়ে একের পর এক জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের নিষেধাজ্ঞার নোটিস ঘিরে তুঙ্গে বিতর্ক।