কলকাতা: ছোট থেকেই মেধাবী ছিলেন মেয়ে। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণও করেছিলেন। কিন্তু মাঝপথেই সেই স্বপ্নের অপমৃত্যু হল। একমাত্র সন্তানের নৃশংস ও মর্মান্তিক পরিণতিতে কার্যত শেষ গোটা পরিবার। একটাই প্রার্থনা, আর কোনও কোল যেন এভাবে খালি না হয়। দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি করে কান্নায় ভাঙলেন আরজি কর মেডিক্যালের নিহত মহিলা চিকিৎসকের পরিবার। (RG Kar Medical Student Death)
একমাত্র সন্তানের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নকে সত্যি করতে দিনভর খেটেছেন হাড়ভাঙা খাটুনি। যে সাইকেলে চেপে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে জামাকাপড় বিক্রি করেছেন, সেই সাইকেলে করেই স্কুল থেকে টিউশন পৌঁছে দিতেন মেয়েকে। শুক্রবার চোখের জলে ভাসতে ভাসতে সেই মেয়েরই মৃতদেহ বাড়ি বয়ে আনতে হয়েছে মা-বাবাকে, যে দৃশ্য় কল্পনা করে শিউরে উঠবেন যে কেউ। (Medical Student Death)
আরজি কর মেডিক্য়াল কলেজে 'অন কল ডিউটি'তে থাকা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় গোটা রাজ্য। আর একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে কার্যত শেষ গোটা পরিবার। পরিবার সূত্রে খবর, ছোটবেলা থেকেই অত্য়ন্ত মেধাবী ছাত্রী ছিলেন আরজি কর মেডিক্য়াল কলেজের নিহত চিকিৎসক। মাধ্যমিকে পান ৮৯. ৫% এবং উচ্চমাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ নম্বর পান। জয়েন্টে মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং দুই শাখাতেই পড়ার সুযোগ পান।
ছোটবেলা থেকেই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন মেয়েটি। সেই স্বপ্নকে সত্য়ি করতে কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজ থেকে MBBS পাশ করেন। চেস্ট মেডিসিনে MD করার জন্য ভর্তি হন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে। শুক্রবার সেই কর্মক্ষেত্র থেকে ফোনে আসে মেয়ের মর্মান্তিক পরিণতির বার্তা।
ওই তরুণী চিকিৎসকের মা জানিয়েছেন, "সুপার ফোন করে আমাদের বললেন, টএকটু চলে আসতে পারবেন? আপনার মেয়ে অসুস্থট। আমরা যখন গাড়িতে, তখন বলেন, 'আপনারা তাড়াতাড়ি আসুন। আপনার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে'। আমি বললাম, এটা কী বলছেন! আমার মেয়ে কেন আত্মহত্যা করবে?" ওই তরুণীর বাবা বলেন, "কলেজ কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ছিল ওকে নিরাপত্তা দেওয়া। কিন্তু সেটা দেওয়া হয়নি।"
হাসপাতাল এবং পুলিশের তরফে প্রথমেই সহযোগিতা পেয়েছিলেন কি না জানতে চাইলে, ওই মহিলা চিকিৎসকের বাবা জানান, কোনও সহযোগিতা পাননি। বরং দু'-তিন ঘণ্টা ধরে বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা চলছিল। তাঁরা যাওয়ার তিন ঘণ্টা পরও দেখতে দেওয়া হয়নি মেয়েকে।
একমাত্র মেয়ে চিরতরে চলে গিয়েছেন। আর কারও পরিণতি যেন তাঁদের মেয়ের মতো না হয়, এই প্রার্থনাই করছেন ওই দম্পতি। তরুণীর মা বলেন, "অন্য কোনও মেয়ের যেন এমন পরিণতি না হয়। মেয়ের মুখে আগুন যেন দিতে না হয় কাউকে। এই গ্রেফতারি বিশ্বাসযোগ্য নয়। পিছনে আরও কেউ রয়েছে। বাইরে থেকে এসে কারও এত সাহস হবে না।" আর জি করের ঘটনায় রাজ্যের সব হাসপাতালই প্রতিবাদে শামিল হয়েছে। ওই তরুণীর পরিবার চাইছেন, আর কারও যেন এমন অবস্থা না হয়।