সন্দীপ সরকার, ঝিলম করঞ্জাই ও ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, কলকাতা: তরুণী চিকিৎসকের শরীর জুড়ে অসংখ্য় ক্ষত দেখা গিয়েছে। একা সঞ্জয় রায়ের পক্ষে এই নারকীয় অত্য়াচার কি সম্ভব? গোড়া থেকেই উঠছিল এই প্রশ্ন। আরজি কর হাসপাতালে, নিহত চিকিৎসকের শরীরে অত্য়াচারের ভয়াবহতা দেখে,  ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদেরও মত, এ কাজ সঞ্জয়ের একার পক্ষে কার্যতই অসম্ভব। এমনকি, তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ রবিবার যে ভাইরাল অডিও এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছেন, সেখানেও শোনা যাচ্ছে, দুই থেকে তিন জন এই কাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারেন বলে। (RG Kar Medical Student Death)


শরীর জুড়ে আঘাতের চিহ্ন। দু'গাল, গলা, ঠোঁটে আঘাত। ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে তরুণী চিকিৎসককে খুন করা হয়েছে বলে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উঠে আসছে। বোঝা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবার রাতে কী ভয়াবহ অত্যাচার হয়েছিল তাঁর উপর। আর জি করের হাড় হিম করা ঘটনায় পুলিশ এখনও পর্যন্ত একজনকে গ্রেফতার করেছে, সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয়কে। কিন্তু অত্যাচারের ভয়াবহতা দেখে প্রশ্ন উঠছে, ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয়ের পক্ষে কি একা এই ঘটনা ঘটানো সম্ভব? সেখানে কি আরও কেউ ছিল? নেপথ্য়ে কি আরও কারও হাত রয়েছে? (Kolkata Medical Student Death)


আন্দোলনকারী চিকিৎসক শুভাশিস হাজরার বক্তব্য, "এত কিছু একজনের পক্ষে ঘটানো সম্ভব নয়। একজন ধর্ষণ এবং খুন করলে যা দেখা যেত, তার চেয়েও ভয়ঙ্কর ব্যাপার ঘটেছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকেই এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি এই মামলায় জড়িত নন। একাধিক জন জড়িত, যারা একসঙ্গে মেয়েটিকে ধর্ষণ এবং খুন করেছে।"


আরও পড়ুন: RG Kar Medical Student Death: শম্ভুনাথ পণ্ডিতের বাড়ির ভাড়াটে, RG কর কাণ্ডে ধৃত সঞ্জয়ের সঙ্গে জড়িয়ে গেল শহরের হেরিটেজের নামও


ডার্মাটোলজি বিভাগের জুনিয়র রেসিডেন্ট ঐশী রায় বলেন, "ময়নাতদন্তের রিপোর্টে যে যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে এটা একজনের কাজ নয় বলে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। একজন না বহুজন, আর কে কে এর পিছনে আছে, সেটা বাইরে আসুক। একজনের পক্ষে এতটা সম্ভব নয়।"


এই আবহে রবিবার মাইক্রোব্লগিং সাইট X (সাবেক ট্যুইটার)-এ একটি ভাইরাল অডিও পোস্ট করেন তৃণমূলের কুণাল, যার সত্যতা যাচাই করেনি এবিপি আনন্দ। ওই অডিও রেকর্ডিংয়ে দুই ব্য়ক্তির কথোপকথন ধরা পড়েছে, যা হল-


কণ্ঠ ১-কে কণ্ঠ ২ বলেন, "পোস্টমর্টেম রিপোর্টে যেরকম আঘাত আছে দিদির, হ্যাঁ তাতে দাদা একজনের কাজ তো নয়, কমপক্ষে দুই বা তিন জন।" ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ অজয়কুমার গুপ্ত বলেন, "নাক-মুখ চেপে ধরলে স্মদারিং, গাল টিপলেও হয়... অর্থাৎ ওজন লাগে। তরুণী অচেতন না হয়ে গিয়ে থাকেন, তাহলে একজনের পক্ষে সম্ভব নয়। এতগুলি আঘাতের জন্য সাধারণ ভাবে এটা একজনের কাজ হতে পারে না। নিশ্চয়ই আরও লোক ছিল।"

শুক্রবার রাতেই INQUEST অর্থাৎ সুরৎহাল রিপোর্ট উল্লেখ করা হয়েছিল, নিহত চিকিৎসকের শরীরে বহু আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র সঞ্জয়ই গ্রেফতার হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল বলেন, "আর কেউ যদি থেকে থাকেন, আমরা নিশ্চিত যে, আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই গ্রেফতার করতে পারব।" প্রশ্ন অনেক। পুলিশ কিনারা করতে পারবে কি না, এখন তা-ই দেখার।