কলকাতা: কলকাতার পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজে কেন্দ্রীয় রেফারেল ব্যবস্থা চালুর পর এবার ডিজিটাল বেড ভ্যাকেন্সি মনিটরিং সিস্টেম। এনআরএসের পর এবার আরজি কর হাসপাতালে চালু হল এই পদ্ধতি। তারপরেও উঠছে রোগী হয়রানি ও বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ। সমালোচনায় সরব জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ।
অকারণে রেফার রুখতে বার বার কড়া বার্তা দিয়েছে সরকার। কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রোগ যে সারেনি, তার প্রমাণও মিলেছে বার বার। পরীক্ষামূলকভাবে কলকাতার পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজে চালু হয়েছে কেন্দ্রীয় রেফারেল ব্যবস্থা। এনআরএসের পর এবার আরজি কর হাসপাতালে চালু হল ডিজিটাল বেড ভ্যাকেন্সি মনিটরিং সিস্টেম।
১০ দফা দাবিকে সামনে সামনে রেখে মিটিং-মিছিল-কর্মবিরতি-অনশনের রাস্তায় হেঁটেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সেই দাবিগুলির মধ্যে অন্যতম হল, অবিলম্বে রাজ্য়ের সমস্ত হাসপাতাল ও মেডিক্য়াল কলেজে কেন্দ্রীয় রেফারেল ব্য়বস্থা এবং ডিজিটাল বেড ভ্যাকেন্সি মনিটরিং সিস্টেম চালু করতে হবে। যে ব্যবস্থার ফলে দুই হাসপাতালের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে রেফার করা হবে রোগীকে। রেফারের পর অন্য হাসপাতালে গিয়ে বেডের অভাবে রোগী ও তাঁর আত্মীয়দের দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। সহজে জানা যাবে কোন হাসপাতালে কতগুলি বেড খালি রয়েছে। এই প্রেক্ষিতে গত ১৫ অক্টোবর থেকে প্রথম পর্যায়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে শুরু হয় কেন্দ্রীয় রেফারেল ব্য়বস্থা। ১লা নভেম্বর থেকে চালু হয় এসএসকেএম সহ ৫টি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। এবার শহরের ২টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চালু হল ডিজিটাল বেড ভ্যাকেন্সি মনিটরিং সিস্টেম। কিন্তু তারপরেও যে দুর্ভোগ কাটেনি, তার প্রমাণ মিলেছে শনিবারই।
আসানসোলের কুলটির বাসিন্দা উত্তর কুমার সিং(৪০)। কাঠের কাজ করতেন ঝাড়খণ্ডে। রোগীর পরিবারের দাবি, সপ্তাহ দুয়েক আগে সেখানে ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে শিরদাঁড়ায় আঘাত লাগে। অস্ত্রোপচারের জন্য় প্রথমে তাঁকে আসানসোল জেলা হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কাজ না হওয়ায়, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ, সেখানে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গিয়েও পরিকাঠামো না থাকার কথা বলে রেফার করা হয় কলকাতায়। এরপর শনিবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ SSKM-এ আনা হয় রোগীকে। অভিযোগ, হাসপাতালের তরফে বেড খালি নেই জানিয়ে দু'সপ্তাহ পর আসার কথা বলা হয়। এই অবস্থায় প্রায় ৩০ ঘণ্টার মাথায় জুনিয়র ডাক্তারদের হস্তক্ষেপে রোগীকে ভর্তি করা হয় ট্রলিতে। এখানেই শেষ নয়, রাতভর তিন-তিনটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ঘুরেও বেড না মেলা এবং শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা না পেয়ে রোগীমৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে মঙ্গলবার। গড়িয়ার বাসিন্দা সুশীল হালদারের নাক-মুখ দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হওয়ায়, সোমবার তাঁকে SSKM হাসপাতালে আনা হয়। পরিবারের দাবি, বেড নেই বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
রাতভর NRS ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঘুরেও রোগীকে ভর্তি করা যায়নি। পরিবারের দাবি, মঙ্গলবার সকালে রোগীকে নিয়ে কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে যান তাঁরা। সেখান থেকে চিঠি লিখে দেওয়ায় রোগীকে ফের SSKM-এ আনা হয়। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। SSKM সূত্রে খবর, জেনারেল সার্জারির আউটডোরে পাঠানো হয় রোগীকে। তখনই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। NRS ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে দাবি, এবিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। সব মিলিয়ে, সরকারি হাসপাতালে কেন্দ্রীয় রেফারেল সিস্টেম চালু হলেও, তা কতখানি কার্যকর হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও পড়ুন: HC On Narkeldanga: কালীপুজোর রাতে নারকেলডাঙায় অশান্তি, রাজ্যের রিপোর্ট তলব হাইকোর্টের