কলকাতা: লক্ষ্য একটাই-তিলোত্তমার জন্য বিচার ছিনিয়ে আনা। সতীর্থর মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউই তাঁরা। আর জি কর কর কাণ্ডের ৪২ দিন কর্মবিরতি শেষে কাজে ফিরলেও আন্দোলনের ঝাঁঝ তাঁরা কমাবেন না। পুজোর আবহেও লড়াই জারি রাখবেন না, এবিপি আনন্দের 'যুক্তি-তক্কো' অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখে এমনটাই জানিয়ে দিলেন ডাক্তার দেবাশিস হালদার। প্রসঙ্গক্রমে উঠে এল কীভাবে একটি মৃত্যু হয়ে উঠল নাগরিক আন্দোলনের স্বর ও সুর। 


আর জি করের ধর্নামঞ্চ থেকে লালবাজার-স্বাস্থ্যভবন, বিচারের দাবি দিন-রাত এক করে রাস্তায় থেকেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের পাশে থেকে রাত জেগেছে তিলোত্তমাও। সবার কন্ঠে একটাই স্বর,  তিলোত্তমার বিচার চেয়ে 'জাস্টিস ফর আর জি কর'। আর সেই নাগরিক আন্দোলনের প্রসঙ্গেই জুনিয়র চিকিৎসক দেবাশিস বলেন, 'আমাদের সতীর্থের নৃশংস মৃত্যুর বিচার চেয়ে আমরা পথে নেমেছি ঠিকই। কিন্তু এই আন্দোলন কিন্তু শুধু আমাদের নেই। রাজ্যের সব নাগরিকের হয়ে গিয়েছে এই বিচার চাওয়ার লড়াই। লালবাজারে হোক কিংবা স্বাস্থ্য ভবনের সামনে, পাশে পেয়েছি সমাজকে। কোনও বোন স্কুল থেকে ফেরার পথে হাতে নিজের টিফিন দিয়ে গেছে, কোনও চা-কাকু বিনামূল্যে চা-জল খাইয়ে গিয়েছে, কোনও বৃদ্ধা এসে পাখার হাওয়া করে গিয়েছেন। সিনিয়র চিকিৎসক থেকে নার্স-স্বাস্থ্য কর্মী-ন্যায় বিচারের দাবিতেই এক হয়েছি আমরা। তাই কিছুটা হলেও কিছু দাবি ছিনিয়ে নিতে পেরেছি'। 


অভয়ার বিচারের পাশাপাশি আর যেন কোনও 'অভয়া' না হয়, সেই দাবিতেই সোচ্চার গোটা সমাজ। যদিও সরকার-প্রশাসন বেশ কিছু দাবি মেনে নেওয়ায় কর্মবিরতি তুলেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তবে যতক্ষণ না 'বিচার' হচ্ছে, আন্দোলন জারি থাকবে সে কথাও সাফ জানিয়ে দেন। জুনিয়র চিকিৎসকের কথায়, 'আন্দোলনকে এতটা জোরালো করতে পেরেছিলাম বলেই দাবি ছিনিয়ে আনা গিয়েছিল। আমাদের সকলের আন্দোলনের জেরেই কয়েকটা গ্রেফতার, কিছু বদলি সম্ভব হয়েছে। সতীর্থ আশফাকের বলেছিলেন ভয় যেমন ছোঁয়াচে, সাহসও ঠিক তেমনই ছোঁয়াচে। নাগরিক আন্দোলনই সেই সাহসই দেখিয়েছে। শাসকের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করতে শিখছে নাগরিক সমাজ। যারা ভাবছে আমরা আন্দোলনে নেই, কর্মবিরতিতে নেই, তা নয়। বিচার ছিনিয়ে আনতে আগামী দিনে যদি আরও বড় আন্দোলন করতে হয়, সেটাই করব এবং দৃঢ়তার সঙ্গে করব। আর এটা তো শুধু আমাদের একার আন্দোলন নয়। নাগরিক সমাজের।'


পুলিশ-প্রশাসন, স্বাস্থ্যক্ষেত্র, চিকিৎসাক্ষেত্রের কেউ কেউ ওতপ্রোতভাবে জড়িত এমন নানাবিধ কাজে, এবিপি আনন্দের 'যুক্তি-তক্কো' অনুষ্ঠানে এই অভিযোগও এনেছেন দেবাশিস হালদার। এও বলেছেন, 'আমাদের কেন্দ্র-রাজ্য কারও ওপরে আমাদের ভরসা নেই। সেই অসাধু কাজগুলিকে আমরা নগ্ন করতে পেরেছি। আন্দোলনের জোরের জায়গা সেটাই। এই আন্দোলন দেখিয়েছে নিজের কথা নিজেই বলা যায় এর জন্য কোনও দলীয় পতাকার দরকার নেই। ন্যায়বিচারের জন্য প্রতিবাদের রাজনীতিই আমাদের রাজনীতি। ভয়ের রাজনীতিকেই ভাঙতে চাইছে। দানব-গড়ের শিকার আমাদের অভয়া।  যতদিন না ন্যায়বিচার পাচ্ছি আরও আন্দোলন আরও তীব্রতর হবে। আর একটাও অভয়া যাতে না নয়, এটা সুনিশ্চিত না করে আন্দোলন থামাবো না'।  


মহালয়ার দিনে যেদিন পিতৃপক্ষের অবসান, যেদিন মাতৃপক্ষের সূচনা সেদিনই 'মহামিছিলের' ডাক দিল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট প্রথমে কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মহামিছিল হবে তারপর ধর্মতলায় হবে মহাসমাবেশ। জুনিয়র চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছেন, নমনীয়তা আমাদের দুর্বলতা নয়! একটা মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা রাজ্যকে। গোটা দেশকে। আর পাঁচটা বছর এই সময় আকাশে-বাতাসে থাকে শুধুই আগমনীর বার্তা। আর এবার প্রতিবাদে মুখর পরিবেশ।




আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে